বরগুনাতে জাল-দলিলের জমিতে কলেজ নির্মাণ : লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য
- আপডেট সময় : ১০:১৬:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০২৩
- / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে

মো: কামাল হোসেন তালুকদার, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি :
বরগুনা জেলার আমতলীতে জাল-দলিলের জমিতে কলেজ নির্মাণ করে সভাপতি লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিগত ২০০৮ সালে স্থানীয় করিম ফকিরের পুত্র ও কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক মো: শহিদুল ইসলাম “ড: মো: শহিদুল ইসলাম কলেজ” নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যার কলেজ কোড নং ১৬০১, ঊঐঘ-নং ১৩৪৮৭৬। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে কলেজের নামে রেজিষ্ট্রিমূলে ১.৫ (দেড় একর) একর জমি প্রদান করতে হয়। কিন্তু মো: শহিদুল ইসলামের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত যৎ সামান্য জমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই ২০০৮ সালে ২টি দাগে প্রাপ্ত পৈত্রিক জমিতে কলেজ ঘর নির্মাণ করে পাশ্বেবর্তী নিবারন চন্দ্র ধূপীর জমি কলেজের নামে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়। নিবারন চন্দ্রের স্ত্রী মালতী রানী ৪টি অসহায় পুত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়। মো: শহিদুল ইসলাম এতে পিছ পা না হয়ে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন তিনি বিগত ২০১০ সালের ১লা আগস্টে নিবারন চন্দ্র ধূপীর ভূয়া পুত্র মঙ্গল চন্দ্র ধূপী ওরফে স্বপনকে জমির মালিক সাজিয়ে আমতলী এস,আর অফিসের ৩৯০৫ নং রেজিষ্ট্রিকৃত অর্পন নামা দলিলে ৮৩ শতাংশ জমি কলেজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। ২০১০ সালে দলিল রেজিষ্ট্রি করার পর জমি দখলে নেওয়ার পায়তারা করলে মালতী রানীর পুত্র গোপাল চন্দ্র ধূপী জাল দলিলের বিরুদ্ধে আমতলী সহকারী জজ আদালত বরগুনায় মামলা করে। যার নং ২৫/২০১১। মামলাটি চলমান রয়েছে। এরপর থেকে মো: শহিদুল ইসলাম ফৌজদারী মামলাসহ নানা ভাবে মালতী রানীর পরিবার ও দলীয় লোকজনকে হয়রানী করে আসছে।
মো: শহিদুল ইসলাম কলাপাড়া সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজে জাল স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে কয়েক মাস সার্সপেন্ড ছিলেন। তিনি একাধিক মামলায় জেল হাজতেও ছিলেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্ব-ঘোষিত সভাপতি তিনি। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর একাধীক প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মৌখিক নিয়োগ দিয়ে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। অধ্যক্ষ ও বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগের জন্য গত ৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখ দৈনিক সমকাল পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির পর নীতিমালা মোতাবেক সভাপতির আপন ছোট ভাই মো: হাসানুজ্জামান অধ্যক্ষ পদে এবং স্ত্রী মাছুমা আক্তার খাদিজা প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে ভাইকে বাদ দিয়ে ভূয়া সনদধারী নিজ স্ত্রী মাছুমা আক্তার খাদিজা বেগমকে প্রভাষক পদ থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দান করেন। এ সময় পূর্বের নিয়োগকৃত অনেক শিক্ষক কর্মচারীকে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নতুন নতুন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিতে থাকেন। যা ব্যান বেইজ তালিকা এবং ২০২০ সালের কলেজ শিক্ষকদের করোনা প্রনোদনার টাকা উত্তোলনের তালিকা দেখলেই প্রমানিত হবে। ৬ জুলাই ২২ তারিখ কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর নিয়োগ বাণিজ্যে আরেক ধাপ রদ-বদল হয় যাতে ড: মো: শহিদুল ইসলাম পকেট কমিটি বানিয়ে একক ভাবে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন।
অধ্যক্ষ, মো: হাসানুজ্জামান জানান, দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির পর নীতিমালানুযায়ী অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়ে শিক্ষা বোর্ডসহ সকল অফিস আদালতের কাজকর্ম আমার স্বাক্ষরে পরিচালনা করি। এবং ব্যান বেইজে অধ্যক্ষ পদে তালিকায় নাম রয়েছে। গত ৬ জুলাই ২২ তারিখ কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ভূয়া সনদধারী নিজ স্ত্রী মাছুমা আক্তার খাদিজা বেগমকে প্রভাষক পদ থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দান করেন।
প্রতিষ্ঠাতা/ স্বঘোষিত সভাপতিকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি বরিশাল বোর্ডে আছি, কাজে ব্যস্ত। আমি আমতলী এসে আপনার সাথে দেখা করব বলে কলেজের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোবাইল কেটে দেন।
বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো: জসিম উদ্দিন জানান, আমরা ৩জন এই কমিটিতে আছি আমরা দলিলপত্র, নিয়োগ পত্র দেখব তারপর প্রতিবেদন দেবো। নিয়োগকৃত অধ্যক্ষকে বাদ দেয়ার ব্যপারে জানান, মামলা করলে দেখব।
নাম প্রকাশে অনচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, কলেজে ১০/১২ জন ছাত্র/ছাত্রী মাত্র। অন্যান্য কলেজের ছাত্র/ছাত্রী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হচ্ছে।
বা/খ: এসআর।