বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে ঢাকায় এসেছি: ডোনাল্ড লু
- আপডেট সময় : ০৪:০৪:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশও তার হাত সম্প্রসারণ করেছে।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হোন দুই কর্মকর্তা। তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও যোগ দেন। এসময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
ডোনাল্ড লু বলেন, আমি এখানে এসেছি দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে; যখন বর্তমান বিশ্ব শান্তি ও ন্যয়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।
দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে একই বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমার সঙ্গে ওনার (লু’র) দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনা খুব কনস্ট্রাকটিভ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পুরোনো বন্ধু। আমরা সামনের ৫০ বছর কীভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ) সম্পর্ক অনেক উন্নতি হয়েছে। সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী এপ্রিলে আমাকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গত বছর মতো এবারও আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, আমরা একটি সময়সূচি ধরে চলমান মেকানিজমের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পর্ককে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবো।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, জিএসপি সুবিধা চালু হলে প্রথমে বাংলাদেশ এই সুবিধা পাবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আমাদের কেন্দ্র বিন্দু। এটা নিয়ে আমরা পরামর্শ দেই।
ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, মনোমুগ্ধকর অতিথিপরায়ণ মানুষের দেশে বন্ধুত্ব শক্তিশালী করতে এসেছি।
আমরা সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। অন্য সব দেশের আগে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে। এই তালিকার অনুমোদন পেলে প্রথম দেশ হবে বাংলাদেশ বলে আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, র্যাব প্রসঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহের হিউম্যানর রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নতি হয়েছে। এটা খুবই ভালো কাজ। এটা প্রমাণিত হয়, র্যাব সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও আইন প্রয়োগের দায়িত্ব মানবাধিকার রক্ষা করেই করতে পারবে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) নিয়ে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। সন্ত্রাস প্রতিরোধে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, আমরা খুবই গর্বিত, আমরা আজ শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশের মানুষ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। আমরা এ দেশে শ্রম অধিকার উন্নয়নে আমরা সহযোগিতা করবো। এ ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা খুবই গর্বিত।
এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে সরকারে এসেছে কখনো বুলেটের মাধ্যমে আসেনি। আমাদের বিশ্বাস আছে জনগণের প্রতি আর আমরা চাই বিশ্ব শান্তি। সব জায়গায় শান্তি যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেজন্য আমরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। যেহেতু তারা বন্ধু, আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে পারি।
তিনি বলেন, কীভাবে আমাদের এ সম্পর্ককে আরও অর্থবহ করা যায়, আরও ভালো করতে পারি; সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। মোটামুটি আমরা ঐক্যমতে আছি। আমরা ভবিষ্যতে ভালো দিনের অপেক্ষায় রয়েছি।
ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের একটা কমিটমেন্ট আছে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। আমরা যখন সমস্যা দেখি, তখন কথা বলি, পরামর্শ দেই। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। আমরা আমাদের গুরত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে চাই।
মোমেন বলেন, আমাদের যে যোগাযোগ এটা খুব কাজের। এর ফলে আমাদের মধ্যে যদি কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। আর আমরা ভালো পরামর্শ পেলে অবশ্যই গ্রহণ করব। তার নমুনাও দেখিয়েছি। আমাদের কোথাও যদি দুর্বলতা থাকে আমরা ওটা নিয়ে কাজ করব।
তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারে এসেছে। ব্যালটের মাধ্যমে সরকার এসেছে। কখনও বুলেটের মাধ্যমে আসেনি। আমরা অনেকগুলো বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছি।
সফরে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানবেন লু। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ডোনাল্ড লু ১২ জানুয়ারি থেকে ভারত সফর করেছেন। ডোনাল্ড লু শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ভারত থেকে ঢাকায় আসেন। গত বছরের মার্চে আন্ডার-সেক্রেটারি নুল্যান্ডের সফরসঙ্গী হিসেবে প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এর আগে এই অঞ্চলে একাধিক দেশে সফর করলেও ঢাকায় এটিই তার প্রথম একক সফর।