বিড়াল পোষার শখ থেকেই বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখাচ্ছেন দিনাজপুরের সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত
বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পোষা প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল অন্যতম। বিড়াল একটি গার্হস্থ প্রজাতি বা ছোট মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি ফেলিডা পরিবারের একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি এবং পরিবারের বন্য সদস্যদের থেকে পৃথক করার জন্য গার্হস্থ্য বিড়াল হিসেবে পরিচিত। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Felis catus। এই বিড়াল পুষে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী শাহ রেজাউল রহমান মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত।মেয়ের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন একটি উন্নত জাতের বিড়াল। বিড়ালটির নাম রাখা হয় লুনা। এর কিছুদিন পর নিয়ে আসা হয় হেরি নামের আরেকটি পুরুষ বিড়াল। সেখান থেকেই একে একে এখন ১৭ টি বিড়াল পুষছেন ওই ব্যবসায়ীর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত। শখের বসে পুষলেও জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে এটি হতে পারে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন উদ্ভাবিত উদ্যোগ।
বাবা হেনরি ও মা লুনাসহ সবাই মিলে ওরা একত্রিত হয়ে টিভি দেখে। নাম রাখা হয়েছে বেশ চমকপ্রদ। জুডো, স্ট্রবেরি, ক্যাডবেরি, লোটাস, জেসপার, অরোরা সহ বেশ চমকপ্রদ নাম।বিড়াল গুলো টিভি দেখে। আবার সব ছবি দেখে না ওরা শুধুমাত্র কার্টুন ছবি দেখে। ওটাই নাকি ওদের পছন্দের। খেলাধুলার নানা সরঞ্জামাদিও আছে ওদের। আছে দোল খাওয়ার দোলনা, খেলনা পুতুল সহ নানান উপভোগের অনুষঙ্গ। পড়ার ফাঁকে ফাঁকেই ওদের সঙ্গে চলে সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত এর খুনঠুসি। ওদের খাওয়াতে হয়। যত্ন নিতে হয়। পুরো পরিবার যত্ন নেয় । পোষা বিড়াল গুলো সঙ্গেই গড়ে উঠেছে ওই পরিবারের আত্মার সেতুবন্ধন
শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত বলেন, আমি মূলত শখের বসে বিড়াল পালন করে থাকি। গেল ২০২২ সালে বাবা ঢাকা থেকে একটি উন্নত জাতের বিড়াল এনে দেয় আমাকে। সেটি ছিল মেয়ে বিড়াল। নাম রাখি লুনা।পরবর্তীতে হেরি নামে আরেকটি পুরুষ বিড়াল এনে দেয় বাবা। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে আমার ঘরে এখন ১৭ টি বিড়াল। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি বিড়াল গুলোর দেখাশোনা করি। ওদের সাথে খেলি। আমি কলেজ থেকে না আসা পর্যন্ত ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করে। কলেজ থেকে এসে আমি ওদেরকে খেতে দেই পাশে বসে আমি নিজেও খাই। ওদের প্রতিটি ইঙ্গিত আমি বুঝি এবং বিড়াল গুলো আমার কথা বুঝতে পারে। বিড়াল গুলো আমাকে মানসিক শান্তি দিয়ে থাকে। এই শান্তি স্বর্গীয় শান্তি। অনেকে বিড়ালকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে যা আমাকে পীড়া দেয়। মানুষ এবং প্রাণীর মাঝে যে সখ্যতা তা যদি কেউ উপলব্ধি করতে পারে তাহলে একটি অদৃশ্য স্মৃতি বন্ধন তৈরি হয় প্রাণী ও মানুষের মাঝে। ওরাই এখন আমার এইসব দিনরাত্রি।
বাবা শাহ রেজাউল রহমান হিরু বলেন, মেয়ের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে আমি গেল ২০২২ সালের মার্চ মাসে মেয়েকে একটি বিড়াল এনে দেয় ঢাকা থেকে। পরবর্তীতে আরও একটি পুরুষ বিড়াল এনে দেই। মায়ের নাম লুনা ও বাবার নাম রাখা হয়েছে হেরি। আমি অফিস থেকে না আসা পর্যন্ত বিড়াল গুলো ছটফট করতে থাকে। আমি নামাজ পড়ার সময় বিড়ালগুলো আমার আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। বিকেল হলেই ওরা আমাকে ইঙ্গিত করে বাড়ির ছাদে নিয়ে যেতে। আমি তাদের বাড়ির ছাদে নিয়ে যাই। এভাবেই সখ্যতা গড়ে উঠেছে বিড়াল ও আমার পরিবারটির। বিমর্ষ ও বিষন্ন মনের দহন কাটাতে এই বিড়াল গুলোর ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য।
এদিকে বিড়াল পোষার এই খবর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই আসে দীক্ষা নিতে। কিভাবে বিড়াল পুষতে হয় তা শিখতে।
তাদের পড়শি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমার বাড়ির পাশে হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আমি আজকে এসেছি কিভাবে বিড়াল পুষতে হয়, এদের খাওয়া দাওয়া কি, কিভাবে প্রতিষেধক দিতে হয় তা শিখতে। আগামীতে আমিও বিড়ালের বাণিজ্যিক খামারের চিন্তা-ভাবনা করছি।
বিষয়টি ইসলাম ধর্মে নীতিশুদ্ধ কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালুবাড়ী চারতলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। তিনি নিজেই বিড়াল পুষতেন। বিড়াল পোষার বিষয়ে ইসলামে কোন বাধা নেই। বরং ইসলামে বলা হয়েছে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিড়াল পোষা ইসলাম সম্মত।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আশিকা আকবর তৃষা বলেন, অনেকেই বিড়াল ও কুকুর পুষে থাকেন। এটি নীতি সম্মতভাবে করতে পারলে বাণিজ্যিক দিক প্রসারিত হবে। তবে বিড়াল ও কুকুর জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু বহন করে সেক্ষেত্রে পরিচর্যার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে করতে গেলে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কেউ বিড়ালের খামার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া কেউ বিড়ালের খামার করলে সেখানে আইনের ব্যত্যয় হবে। তাই কেউ বিড়ালের খামার করতে চাইলে তাকে অবশ্যই জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে অনুমতি নিতে হবে।
মানুষ এবং প্রাণীর মাঝে প্রাণ স্পর্শী সেতুবন্ধন তৈরি করতে সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাত যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় বলছে সংশ্লিষ্টরা।
বাখ//আর