০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী অভিভাবক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলা সদরের উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা থাকায় তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়মে জড়িয়ে পরেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম দীর্ঘদিন থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরকারি স্লিপের বাজেটের সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রশ্ন তুললে প্রধান শিক্ষক কমিটির সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। প্রধান শিক্ষকের হিসাবের গড়মিল ও দাম্ভিকতার কারনে সভাপতি বিদ্যালয়ে কোন মিটিং এ উপস্থিত হননি। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক নিয়মবর্হিভূতভাবে সহ-সভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেখিয়ে এবং তার স্বাক্ষর জাল করে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্লিপের টাকা হাতিয়ে নেন। একই কৌশলে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের টাকাও আত্মসাৎ করেন। তিনি বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কোন অবকাঠামো বা শিক্ষার মানউন্নয়নে কোন কাজ করেনি।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত পুরাতন টিন, বেঞ্চ, গাছ, ইট, রড গোপনে বিক্রি করে ওই টাকাও আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অভিভাবক সমাবেশ ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না। তার এ ধরনের কাজের বিষয়ে কমিটির কোন সদস্যকে অবগত করেন না। ২০২৩ সালের রুটিন মেইনটেইন্সের ৪০ হাজার টাকাসহ প্রায় তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা থাকার সুবাদে সব জায়গায় দাপট দেখাতেন তিনি। এ কারনে বিদ্যালয়েও নিয়মিত আসতেন না। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের ঠিকাদারের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অবিভাবকরা সন্তানদের জন্য সনদপত্র ও প্রত্যয়ন নিতে আসলে প্রধান শিক্ষককে টাকা না দিলে হয়রানী করতেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর মাসিক বেতন বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেও টাকা নিতেন এবং বিদ্যালয় থেকে কোন জিনিসপত্র চুরি হলে ওই অফিস সহকারীর কাছে ক্ষতিপূরন নিয়ে তা নিজের বাড়িতে ব্যবহার করতেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের সাউন্ডবক্স, ল্যাপটপসহ যাবতীয় জিনিসপত্র প্রধান শিক্ষকের বাসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক সদস্য ও অভিযোগকারী অলিউল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। তিনি কোন কাজের জবাবদিহি করতেন না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছামত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাই বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে আমি অভিযোগ করেছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো তদন্ত করলেই অবশ্যই সত্যতা পাওয়া যাবে। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি পুলক কুমার জানান, আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে কে কি করেছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের স্লিপের টাকাসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডের আর্থিক বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। তারাই সব কিছু করেছে। এখানে আমার করার কিছু ছিল না। তবে তিনি স্বীকার করেন, চুরির ভয়ে বিদ্যালয়ের পাশে থাকা তার বাড়িতে ল্যাপটপ ও সাউন্ডবক্স বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন রেখেছিলেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নার্গিস ফাতিমা তোকদার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রোববার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
৪৪ জন দেখেছেন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

আপডেট : ০১:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রোববার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী অভিভাবক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলা সদরের উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা থাকায় তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়মে জড়িয়ে পরেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম দীর্ঘদিন থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরকারি স্লিপের বাজেটের সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রশ্ন তুললে প্রধান শিক্ষক কমিটির সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। প্রধান শিক্ষকের হিসাবের গড়মিল ও দাম্ভিকতার কারনে সভাপতি বিদ্যালয়ে কোন মিটিং এ উপস্থিত হননি। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক নিয়মবর্হিভূতভাবে সহ-সভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেখিয়ে এবং তার স্বাক্ষর জাল করে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্লিপের টাকা হাতিয়ে নেন। একই কৌশলে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের টাকাও আত্মসাৎ করেন। তিনি বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কোন অবকাঠামো বা শিক্ষার মানউন্নয়নে কোন কাজ করেনি।
এছাড়া প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত পুরাতন টিন, বেঞ্চ, গাছ, ইট, রড গোপনে বিক্রি করে ওই টাকাও আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অভিভাবক সমাবেশ ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না। তার এ ধরনের কাজের বিষয়ে কমিটির কোন সদস্যকে অবগত করেন না। ২০২৩ সালের রুটিন মেইনটেইন্সের ৪০ হাজার টাকাসহ প্রায় তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা থাকার সুবাদে সব জায়গায় দাপট দেখাতেন তিনি। এ কারনে বিদ্যালয়েও নিয়মিত আসতেন না। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকের ঠিকাদারের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অবিভাবকরা সন্তানদের জন্য সনদপত্র ও প্রত্যয়ন নিতে আসলে প্রধান শিক্ষককে টাকা না দিলে হয়রানী করতেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর মাসিক বেতন বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেও টাকা নিতেন এবং বিদ্যালয় থেকে কোন জিনিসপত্র চুরি হলে ওই অফিস সহকারীর কাছে ক্ষতিপূরন নিয়ে তা নিজের বাড়িতে ব্যবহার করতেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের সাউন্ডবক্স, ল্যাপটপসহ যাবতীয় জিনিসপত্র প্রধান শিক্ষকের বাসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক সদস্য ও অভিযোগকারী অলিউল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। তিনি কোন কাজের জবাবদিহি করতেন না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছামত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাই বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে আমি অভিযোগ করেছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো তদন্ত করলেই অবশ্যই সত্যতা পাওয়া যাবে। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি পুলক কুমার জানান, আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে কে কি করেছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উলিপুর বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের স্লিপের টাকাসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডের আর্থিক বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। তারাই সব কিছু করেছে। এখানে আমার করার কিছু ছিল না। তবে তিনি স্বীকার করেন, চুরির ভয়ে বিদ্যালয়ের পাশে থাকা তার বাড়িতে ল্যাপটপ ও সাউন্ডবক্স বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন রেখেছিলেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নার্গিস ফাতিমা তোকদার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাখ//আর