রাষ্ট্রপতির ‘অপসারণ’ যেভাবে সম্ভব, কী বলছেন আইনজ্ঞরা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্যের পর মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আলোচনায় রয়েছে, রাষ্ট্রপতি নিজে পদত্যাগ করবেন, নাকি অন্তর্বর্তী সরকার তাকে অপসারণ করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতিকে বহাল রাখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সরকার তাড়াহুড়ো করতে চায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রমাণ না থাকার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সরকার ও শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র হতে পারে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতির বক্তব্য মিথ্যাচার এবং এটি তার শপথের লঙ্ঘন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তারা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। রাতের দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য সংবিধানে অভিশংসন এবং পদত্যাগের বিধান রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত করেছেন, তাই সংসদ তাকে অভিশংসন করতে পারবে না। অন্যদিকে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও পদত্যাগ করেছেন, ফলে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারছেন না।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তবে সরকার ‘জন-আকাঙ্ক্ষার আলোকে’ তাকে সরানোর ব্যবস্থা করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নেই, তাই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি জটিল। একমাত্র ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করে বিষয়টিকে বৈধ করা সম্ভব।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অস্বাভাবিক সরকারের পরিস্থিতিতে বৈধতা-অবৈধতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতিকে সরানোর বিষয়ে রেফারেন্স নিতে পারে।
আলোচনা ও আন্দোলনের এই অস্থির পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।