ঢাকা ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

৫ বছর পর হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো সিরাজগঞ্জ পিবিআই : গ্রেফতার ৪

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// গোলাম মোস্তফা রুবেল, সিনিয়র রিপোর্টার //
হত্যাকান্ডের দীর্ঘ  ৫ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হলো সিরাজগঞ্জের পিবিআই পুলিশ। গত প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করে অবশেষে ক্লু-লেস এ হত্যাকান্ডের ৪ আসামীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। রহস্যময় এ মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে নানা বৈচিত্র্যময় তথ্য। সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের পিবিআই পুলিশ সংবাদ সম্মেলন এ হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এদিকে দীর্ঘ দিন পরে হত্যার আসামী গ্রেফতারের খবরে খুশি নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
গ্রেফতাকৃতরা হলেন, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে স্বপন ব্যাপারী (৩৭), মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. মমিন (৫৫), মমিনের স্ত্রী আনু বেগম (৪০) ও ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ব্রাহ্মন গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাচ্চু মিয়ার মেয়ে বিউটি খাতুন। গত ২০১৮ সালের ১৩ মে রাত আড়াই টার দিকে নিজ ঘরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় স্বামী পরিত্যাক্তা বিউটি খাতুনকে। হত্যার পর দিন বিউটির বাবা বাদী হয়ে এনায়েতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ টানা দুই বছর তদন্ত কোন তথ্য প্রমান সংগ্রহ করতে পারেনি। পরে বাদীর আবেদনে প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।  তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। তবে এক্ষেত্রেও তেমন কোন তথ্য বা স্বীকারোক্তি মিলছিলো না। অবেশেষে পিবিআই ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। তারা জাল বিছায় বিউটির পরিবার ও প্রতিবেশিদের মধ্যে। সেখান থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মনগ্রাম এলাকায় মাদকের ক্রয় বিক্রয়ের কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে আনাগোনা ছিলো নানা মানুষের। আর এখান থেকেই স্বামী পরিত্যাক্তা বিউটির ভাব বিনিময় হয় স্থানীয় এক প্রভাবশালী স্বপন বেপারীর সাথে। আর এক পর্যায়ে অন্তসত্বা হয়ে পড়ায় বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিউটি। স্বপন বেপারী নিজের মান আর প্রভাব বাঁচাতে পরিকল্পনা করে বিউটিকে হত্যার। স্বপন কে গত ৪ দিন আগে আটক করা হলে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে ঘটনার রহস্য ফাঁস করে। পরে আর তার সাথে যুক্ত করে নেয় বিউটির নিজের খালা খালুসহ আরো চারজনকে।
জানা যায়, মাত্র ৫০ হাজার টাকর বিনিময়ে বিউটির খালু মোমিন ও খালা আনু খাতুন সেদিন রাতে হত্যার জন্য সকল প্রকার বন্দবস্ত করেন। হত্যার সাথে বিউটির খালু মেমিন, খালা আনু খাতুন, প্রেমিক ওমর ফারুক ও প্রেমিক স্বপন বেপারীর প্রতক্ষভাবে জড়িত ছিলো। গত  ২৩ ও ২৫ মে   রাতে পিবিআই সন্দেহমুলক ৩ জনকে আটক করে। পরে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সেদিন বিউটকে তারা হাত পা ধরে বুকের উপর উঠে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। আর এ সময় সকলের দৃষ্টি অন্য দিকে করতে কাচা মাটির ঘরের ডোয়া কেটে রাখে। যাতে এটাকে সবাই চোর ও বহিরাগত কেউ হত্যা করেছে বলে মনে করে সবাই।
এদিকে, সেদিনের হত্যা হবার ঘটনার কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজনরা। নিহতের বাবা ও মা এ ঘটনার সঠিক আর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। এদিকে দীর্ঘ দিন পর  অপরাধীদের সনাক্ত করায় খুশী এলাকবাসী । তবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী তাদের।
এই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ পিবিআই এর এসআই ফয়সাল আহমেদ জানালেন, দীর্ঘ সময় নানা বেশে রহস্য উদঘাটন করতে লেগে ছিলাম। অবশেষে সুফল এসেছে। আমরা প্রতিটি মামলাই খুব গুরত্ব সহকারে দেখি। প্রয়োজনে যে কোন ধরনের পন্থা অনুসরণ  করে আসামী পর্যন্ত যেতে সক্ষম হই।

নিউজটি শেয়ার করুন

৫ বছর পর হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো সিরাজগঞ্জ পিবিআই : গ্রেফতার ৪

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
// গোলাম মোস্তফা রুবেল, সিনিয়র রিপোর্টার //
হত্যাকান্ডের দীর্ঘ  ৫ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হলো সিরাজগঞ্জের পিবিআই পুলিশ। গত প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করে অবশেষে ক্লু-লেস এ হত্যাকান্ডের ৪ আসামীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। রহস্যময় এ মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে নানা বৈচিত্র্যময় তথ্য। সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের পিবিআই পুলিশ সংবাদ সম্মেলন এ হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এদিকে দীর্ঘ দিন পরে হত্যার আসামী গ্রেফতারের খবরে খুশি নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
গ্রেফতাকৃতরা হলেন, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে স্বপন ব্যাপারী (৩৭), মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. মমিন (৫৫), মমিনের স্ত্রী আনু বেগম (৪০) ও ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ব্রাহ্মন গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাচ্চু মিয়ার মেয়ে বিউটি খাতুন। গত ২০১৮ সালের ১৩ মে রাত আড়াই টার দিকে নিজ ঘরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় স্বামী পরিত্যাক্তা বিউটি খাতুনকে। হত্যার পর দিন বিউটির বাবা বাদী হয়ে এনায়েতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ টানা দুই বছর তদন্ত কোন তথ্য প্রমান সংগ্রহ করতে পারেনি। পরে বাদীর আবেদনে প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।  তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। তবে এক্ষেত্রেও তেমন কোন তথ্য বা স্বীকারোক্তি মিলছিলো না। অবেশেষে পিবিআই ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। তারা জাল বিছায় বিউটির পরিবার ও প্রতিবেশিদের মধ্যে। সেখান থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মনগ্রাম এলাকায় মাদকের ক্রয় বিক্রয়ের কেন্দ্র হওয়ায় সেখানে আনাগোনা ছিলো নানা মানুষের। আর এখান থেকেই স্বামী পরিত্যাক্তা বিউটির ভাব বিনিময় হয় স্থানীয় এক প্রভাবশালী স্বপন বেপারীর সাথে। আর এক পর্যায়ে অন্তসত্বা হয়ে পড়ায় বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিউটি। স্বপন বেপারী নিজের মান আর প্রভাব বাঁচাতে পরিকল্পনা করে বিউটিকে হত্যার। স্বপন কে গত ৪ দিন আগে আটক করা হলে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে ঘটনার রহস্য ফাঁস করে। পরে আর তার সাথে যুক্ত করে নেয় বিউটির নিজের খালা খালুসহ আরো চারজনকে।
জানা যায়, মাত্র ৫০ হাজার টাকর বিনিময়ে বিউটির খালু মোমিন ও খালা আনু খাতুন সেদিন রাতে হত্যার জন্য সকল প্রকার বন্দবস্ত করেন। হত্যার সাথে বিউটির খালু মেমিন, খালা আনু খাতুন, প্রেমিক ওমর ফারুক ও প্রেমিক স্বপন বেপারীর প্রতক্ষভাবে জড়িত ছিলো। গত  ২৩ ও ২৫ মে   রাতে পিবিআই সন্দেহমুলক ৩ জনকে আটক করে। পরে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সেদিন বিউটকে তারা হাত পা ধরে বুকের উপর উঠে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। আর এ সময় সকলের দৃষ্টি অন্য দিকে করতে কাচা মাটির ঘরের ডোয়া কেটে রাখে। যাতে এটাকে সবাই চোর ও বহিরাগত কেউ হত্যা করেছে বলে মনে করে সবাই।
এদিকে, সেদিনের হত্যা হবার ঘটনার কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজনরা। নিহতের বাবা ও মা এ ঘটনার সঠিক আর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। এদিকে দীর্ঘ দিন পর  অপরাধীদের সনাক্ত করায় খুশী এলাকবাসী । তবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী তাদের।
এই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ পিবিআই এর এসআই ফয়সাল আহমেদ জানালেন, দীর্ঘ সময় নানা বেশে রহস্য উদঘাটন করতে লেগে ছিলাম। অবশেষে সুফল এসেছে। আমরা প্রতিটি মামলাই খুব গুরত্ব সহকারে দেখি। প্রয়োজনে যে কোন ধরনের পন্থা অনুসরণ  করে আসামী পর্যন্ত যেতে সক্ষম হই।