ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি এক নম্বরে রয়েছে।

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে তিনি যখন মঞ্চ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামবেন, তখন বিকট শব্দে কেঁপে উঠে জনসভাস্থল, স্তম্ভিত হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে গতি পায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত। হামলার তিন বছর পর ২০০৮ সালে সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০০৯ সালে অধিকতর তদন্তের অনুমতি দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ সময় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দকে। ২০০৯ সালে অবসান হয় জজ মিয়া নাটকের। পাঁচ বছর বিনা অপরাধে কারাভোগ করে ঘরে ফেরেন নিরপরাধ জজ মিয়া।

২০১১ সালে আবদুল কাহহার আকন্দ আগের ২২ জনের সঙ্গে আরও ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দু’টি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এতে উঠে আসে বিএনপির বহু রথি-মহারথির নাম। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ তৎকালীন সরকারের উচ্চপদস্থ অনেকের নাম।

অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে লন্ডন, ভারত, পাকিস্তানে পালিয়ে যান ৪৯ আসামির ১৮ জন। তারেক রহমান লন্ডনে আর হারিছ চৌধুরী পরিবারহ এদেশ-ওদেশ করে জীবন কাটাচ্ছেন। এই মামলার অন্যতম আসামি ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক জিওএস-১ লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায় ও পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এভাবে একের পর এক বছর গত হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে বিশ্বজুড়ে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা পাল্পাপাল্টি অভিযোগ করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এই মামলা দু’টি পাঁচ বার উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। এতে ব্যয় হয় ২৯২ কার্যদিবস। চার্জশিটের ৫১১ জন সাক্ষির মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।

যুক্তিতর্ক চলে ১১৯ কার্যদিবস। অবশেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

আদালত বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ মোট ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার রায়ে প্রত্যেক আসামিকে বিভিন্ন অংকের অর্থদণ্ডও ঘোষণা করা হয়েছে।

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মিরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় ও প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। পরে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে তৈরির পর সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছায়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায়

আপডেট সময় : ১০:৫২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি এক নম্বরে রয়েছে।

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে তিনি যখন মঞ্চ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামবেন, তখন বিকট শব্দে কেঁপে উঠে জনসভাস্থল, স্তম্ভিত হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে গতি পায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত। হামলার তিন বছর পর ২০০৮ সালে সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০০৯ সালে অধিকতর তদন্তের অনুমতি দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ সময় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দকে। ২০০৯ সালে অবসান হয় জজ মিয়া নাটকের। পাঁচ বছর বিনা অপরাধে কারাভোগ করে ঘরে ফেরেন নিরপরাধ জজ মিয়া।

২০১১ সালে আবদুল কাহহার আকন্দ আগের ২২ জনের সঙ্গে আরও ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দু’টি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এতে উঠে আসে বিএনপির বহু রথি-মহারথির নাম। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ তৎকালীন সরকারের উচ্চপদস্থ অনেকের নাম।

অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে লন্ডন, ভারত, পাকিস্তানে পালিয়ে যান ৪৯ আসামির ১৮ জন। তারেক রহমান লন্ডনে আর হারিছ চৌধুরী পরিবারহ এদেশ-ওদেশ করে জীবন কাটাচ্ছেন। এই মামলার অন্যতম আসামি ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক জিওএস-১ লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায় ও পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

এভাবে একের পর এক বছর গত হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে বিশ্বজুড়ে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা পাল্পাপাল্টি অভিযোগ করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এই মামলা দু’টি পাঁচ বার উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। এতে ব্যয় হয় ২৯২ কার্যদিবস। চার্জশিটের ৫১১ জন সাক্ষির মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।

যুক্তিতর্ক চলে ১১৯ কার্যদিবস। অবশেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

আদালত বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ মোট ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার রায়ে প্রত্যেক আসামিকে বিভিন্ন অংকের অর্থদণ্ডও ঘোষণা করা হয়েছে।

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মিরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় ও প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। পরে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে তৈরির পর সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছায়।