ঢাকা ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:১৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় তারিখ, এ জন্যই তারা ওইদিন ঢাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর নাকি তারা ঢাকা অচল করে দেবে। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে এ দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের হত্যা করা হয়। অর্থাৎ, এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়। এ কারণেই এই তারিখটা বিএনপির এত প্রিয়।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। দেড় মাসও যায়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা তা ভুলে গেছে। ওরা ভোট চুরি করেই ক্ষমতায় আসতে চায়। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনী-সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের মৌলবি সৈয়দকে তুলে নিয়ে দিনের পর দিন টর্চার করে হত্যা করেছে। এ রকম আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও। তার আমলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কত লাশ তারা গুম করেছে। আমি সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

তিনি বলেন, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০১-এর নির্বাচনের পর এই চট্টগ্রামের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সারা বাংলাদেশেই এই তাণ্ডব বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়েছিল। তারা শুধু সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দিতে পারে, এর বেশি কিছু দিতে পারে না।

বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। ২০১৩ থেকে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। লঞ্চ-ট্রেন-রাস্তায় আগুন। গাছ কেটে ফেলছে। চারিদিকে শুধু অগ্নিসন্ত্রাস। যাদের মধ্যে মনুষত্ব আছে তারা কী এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে? তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা। বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন। ভোট পাবে না বলে বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) জানে ইলেকশন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা ইলেকশন চায় না তারা সরকার উৎখাত করে, এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এটাই তারা আশা করে, এটাই তাদের বাস্তবতা। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি মানুষ খুন করে। এই চট্টগ্রামে বিএনপি বারবার বোমা ও গ্রেনেড মেরেছে। বিএনপি মানুষের শান্তি চায় না। খালেদা জিয়ারা পারে মানুষ হত্যা করতে। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জনগণ শান্তিতে থাকে। বিএনপির দুইটা গুণ আছে- ভোট চুরি আর মানুষ খুন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ছাড়া বিএনপি কিছুই দিতে পারে না।

বিএনপি জনগণের অর্থ পাচার করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়ন করি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। কিন্তু বিএনপি শুধু এগুলোর বিরোধিতা করে। তারেক রহমান নামে কুলাঙ্গার বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বোমাবাজি করছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ওরা ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওইভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে।

সকলের হাতে মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ সরকার পৌঁছে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের হাতে মোবাইল ফোন আছে না? এগুলো আমরা দিয়েছি। বিএনপির আমলে দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকে।

রিজার্ভ এবং ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বলে, ব্যাংকে নাকি টাকা নাই। অথচ এই কয়েক দিনে যারা ব্যাংকে টাকা তুলতে গেছে তারা সবাই টাকা তুলতে পেরেছে। এখানে আমার একটা কথা আছে, আপনি ব্যাংকে টাকা রাখবেন না। তুলে এনে বাসায় রাখবেন, বালিশের নিচে গুঁজে রাখবেন, তোষকের নিচে আর না হয় আলমারিতে রাখবেন সেই টাকা কিন্তু চোরে নিয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, গুজব রটালে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। টাকা তুলে ঘরে আনে, যখন টাকা চুরি হয়ে গেছে আবার টাকা ব্যাংকে জমা রাখছে। মানুষের সর্বনাশ করা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। চোরের সঙ্গে তাদের সখ্য।

বিশ্বের কোনো দেশ ফ্রিতে করোনার টিকা দেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে করোনার টিকা ফ্রিতে দিয়েছি। আমেরিকা ইংল্যান্ড কেউ ফ্রিতে দেয়নি। একমাত্র বাংলাদেশ বিনা পয়সায় ফ্রি টেস্ট ও টিকা দিচ্ছে। কাদের জন্য, জনগণের জন্য। কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।

বর্তমানে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে খরচ করছি। খাদ্য কিনছি, ওষুধ কিনছি। এগুলোতো জনগণের জন্য।

তিনি বলেন, আমরা কষ্ট করে রিজার্ভ বাড়ালাম। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি তখন রিজার্ভ মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। রিজার্ভের টাকা মানুষকে দিয়েছি, ওষুধ কিনেছি, ভ্যাকসিন কিনেছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করিয়েছি। জনগণের কথাই আমরা ভাবি, তাদের কল্যাণেই কাজ করি।

মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমার, একটা কথা আছে আপনি ব্যাংকে টাকা রাখবেন, না আপনি খাটের নিচে, বালিশের নিচে না আলমারিতে রাখবেন; চোরেও তো নিয়ে যেতে পারে। গুজবে মানুষ বিভ্রান্ত হয় টাকা তুলে ঘরে আনে, চোরেও নিতে পারে, আবার টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখে। এই যে মানুষকে বিভ্রান্ত করা।

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে চোরের সখ্যতা আছে কিনা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই যে মানুষের সর্বনাশ করা এটাই কী বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কাজ। নাকি তাদের সঙ্গে চোরের সখ্যতা আছে, চোরকে চুরি করার সুযোগ করে দেওয়া।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। বাবা জেল থেকে বের হলেই চট্টগ্রামে নিয়ে আসতেন। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় আসতে পারিনি, তাই আজ হাজির হয়েছি। এই লালদিঘীর সামনে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমাকে হত্যা করতে গুলি করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত ছিলেন। সেই হত্যাকারী পুলিশ অফিসারকে প্রমোশন দেওয়া হয়। বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০০১ নির্বাচনের পর এই চট্টগ্রামে হিন্দু বৌদ্ধ কেউ রেহাই পায়নি তাদের (বিএনপি) অত্যাচার থেকে।

সরকারপ্রধান বলেন, তারা (বিএনপি) মানুষের শান্তি চায় না, তারা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করেছে। জিয়াউর রহমান যখন মারা যান তখন ৪০ দিন পর্যন্ত শুনেছিলাম জিয়াউর রহমান নাকি কিছু দিয়ে যাননি, ভাঙা একটা সুটকেস ছাড়া। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবনের নামে এত টাকা কই পেলেন? ভাঙা সুটকেসে কি জাদু ছিল?

ভাষণের শুরুতে তিনি জনসভায় যোগ দেওয়া স্থানীয় নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর মাইকে এসে তিনি বলেন, ‘অনারা ক্যান আছন, বেইয়াগগুন গম আছননি। পেটু পুরেদে, তাই চাইতো আসসি (চট্টগ্রামের মানুষ আপনারা কেমন আছেন। সবাই ভালো আছেন-তো, পেট পুরে তাই আপনাদের দেখতে এলাম)।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, এই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। কিন্তু বিএনপি এ আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা সেই সমুদ্র জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগছে। বিএনপির দুটি গুণ আছে। একটি হলো ভোট চুরি, অপরটি মানুষ খুন। ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় না যেতে পেরে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষ তখন আহত হয়েছে। ৫ শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে। অনেক গাড়িতে আগুন দিয়েছে তারা। মানুষ পুড়িয়ে মারার হিসাব একদিন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু দিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। সেসব দেশের মানুষ গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না। এক রুমের মধ্যে সমস্ত পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়ত এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সবরকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখব। কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিয়েছি, একটি মানুষও ঘরহীন থাকবে না। ওরা (বিএনপি) মানুষকে কিছু দিয়েছে? কয়েকদিন আগে সারা দেশে ১০০টি সেতু, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, বাজার করে দিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আপনাদের কাছে এই বিজয়ের মাসে আমি উপহার নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন, ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছি। বিজয়ের মাসে চট্টলাবাসীর জন্য আমার উপহার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু দিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইউরোপের ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। তারা গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না না। এক রুমে পুরো পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়তো এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সব রকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখবো, কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ করোনার সময় সহযোগিতা করেছে। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন। আপনারাই আমার পরিবার, আপনারাই আমার সব।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ প্রকল্প; সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও রাউজানে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাসিরাবাদে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন; নগর ও উপজেলার ১৪টি বিদ্যালয়ের ভবন, মিরসরাই ও লোহাগাড়ায় ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণ ও অফিস ভবন ইত্যাদি। এসব নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। জনসভা সঞ্চালনা করছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভার মঞ্চ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ৮৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৬০ মিটার লম্বা এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয়: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৭:১৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় তারিখ, এ জন্যই তারা ওইদিন ঢাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর নাকি তারা ঢাকা অচল করে দেবে। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে এ দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের হত্যা করা হয়। অর্থাৎ, এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়। এ কারণেই এই তারিখটা বিএনপির এত প্রিয়।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। দেড় মাসও যায়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা তা ভুলে গেছে। ওরা ভোট চুরি করেই ক্ষমতায় আসতে চায়। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনী-সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের মৌলবি সৈয়দকে তুলে নিয়ে দিনের পর দিন টর্চার করে হত্যা করেছে। এ রকম আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও। তার আমলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কত লাশ তারা গুম করেছে। আমি সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

তিনি বলেন, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০১-এর নির্বাচনের পর এই চট্টগ্রামের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সারা বাংলাদেশেই এই তাণ্ডব বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়েছিল। তারা শুধু সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দিতে পারে, এর বেশি কিছু দিতে পারে না।

বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। ২০১৩ থেকে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। লঞ্চ-ট্রেন-রাস্তায় আগুন। গাছ কেটে ফেলছে। চারিদিকে শুধু অগ্নিসন্ত্রাস। যাদের মধ্যে মনুষত্ব আছে তারা কী এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে? তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা। বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন। ভোট পাবে না বলে বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) জানে ইলেকশন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা ইলেকশন চায় না তারা সরকার উৎখাত করে, এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এটাই তারা আশা করে, এটাই তাদের বাস্তবতা। তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি মানুষ খুন করে। এই চট্টগ্রামে বিএনপি বারবার বোমা ও গ্রেনেড মেরেছে। বিএনপি মানুষের শান্তি চায় না। খালেদা জিয়ারা পারে মানুষ হত্যা করতে। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জনগণ শান্তিতে থাকে। বিএনপির দুইটা গুণ আছে- ভোট চুরি আর মানুষ খুন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ছাড়া বিএনপি কিছুই দিতে পারে না।

বিএনপি জনগণের অর্থ পাচার করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়ন করি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। কিন্তু বিএনপি শুধু এগুলোর বিরোধিতা করে। তারেক রহমান নামে কুলাঙ্গার বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বোমাবাজি করছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ওরা ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওইভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না।

শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে।

সকলের হাতে মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ সরকার পৌঁছে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের হাতে মোবাইল ফোন আছে না? এগুলো আমরা দিয়েছি। বিএনপির আমলে দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকে।

রিজার্ভ এবং ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বলে, ব্যাংকে নাকি টাকা নাই। অথচ এই কয়েক দিনে যারা ব্যাংকে টাকা তুলতে গেছে তারা সবাই টাকা তুলতে পেরেছে। এখানে আমার একটা কথা আছে, আপনি ব্যাংকে টাকা রাখবেন না। তুলে এনে বাসায় রাখবেন, বালিশের নিচে গুঁজে রাখবেন, তোষকের নিচে আর না হয় আলমারিতে রাখবেন সেই টাকা কিন্তু চোরে নিয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, গুজব রটালে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। টাকা তুলে ঘরে আনে, যখন টাকা চুরি হয়ে গেছে আবার টাকা ব্যাংকে জমা রাখছে। মানুষের সর্বনাশ করা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। চোরের সঙ্গে তাদের সখ্য।

বিশ্বের কোনো দেশ ফ্রিতে করোনার টিকা দেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে করোনার টিকা ফ্রিতে দিয়েছি। আমেরিকা ইংল্যান্ড কেউ ফ্রিতে দেয়নি। একমাত্র বাংলাদেশ বিনা পয়সায় ফ্রি টেস্ট ও টিকা দিচ্ছে। কাদের জন্য, জনগণের জন্য। কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।

বর্তমানে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে খরচ করছি। খাদ্য কিনছি, ওষুধ কিনছি। এগুলোতো জনগণের জন্য।

তিনি বলেন, আমরা কষ্ট করে রিজার্ভ বাড়ালাম। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি তখন রিজার্ভ মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। রিজার্ভের টাকা মানুষকে দিয়েছি, ওষুধ কিনেছি, ভ্যাকসিন কিনেছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করিয়েছি। জনগণের কথাই আমরা ভাবি, তাদের কল্যাণেই কাজ করি।

মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমার, একটা কথা আছে আপনি ব্যাংকে টাকা রাখবেন, না আপনি খাটের নিচে, বালিশের নিচে না আলমারিতে রাখবেন; চোরেও তো নিয়ে যেতে পারে। গুজবে মানুষ বিভ্রান্ত হয় টাকা তুলে ঘরে আনে, চোরেও নিতে পারে, আবার টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখে। এই যে মানুষকে বিভ্রান্ত করা।

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে চোরের সখ্যতা আছে কিনা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই যে মানুষের সর্বনাশ করা এটাই কী বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কাজ। নাকি তাদের সঙ্গে চোরের সখ্যতা আছে, চোরকে চুরি করার সুযোগ করে দেওয়া।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। বাবা জেল থেকে বের হলেই চট্টগ্রামে নিয়ে আসতেন। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় আসতে পারিনি, তাই আজ হাজির হয়েছি। এই লালদিঘীর সামনে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমাকে হত্যা করতে গুলি করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত ছিলেন। সেই হত্যাকারী পুলিশ অফিসারকে প্রমোশন দেওয়া হয়। বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০০১ নির্বাচনের পর এই চট্টগ্রামে হিন্দু বৌদ্ধ কেউ রেহাই পায়নি তাদের (বিএনপি) অত্যাচার থেকে।

সরকারপ্রধান বলেন, তারা (বিএনপি) মানুষের শান্তি চায় না, তারা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করেছে। জিয়াউর রহমান যখন মারা যান তখন ৪০ দিন পর্যন্ত শুনেছিলাম জিয়াউর রহমান নাকি কিছু দিয়ে যাননি, ভাঙা একটা সুটকেস ছাড়া। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবনের নামে এত টাকা কই পেলেন? ভাঙা সুটকেসে কি জাদু ছিল?

ভাষণের শুরুতে তিনি জনসভায় যোগ দেওয়া স্থানীয় নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর মাইকে এসে তিনি বলেন, ‘অনারা ক্যান আছন, বেইয়াগগুন গম আছননি। পেটু পুরেদে, তাই চাইতো আসসি (চট্টগ্রামের মানুষ আপনারা কেমন আছেন। সবাই ভালো আছেন-তো, পেট পুরে তাই আপনাদের দেখতে এলাম)।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, এই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। কিন্তু বিএনপি এ আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা সেই সমুদ্র জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগছে। বিএনপির দুটি গুণ আছে। একটি হলো ভোট চুরি, অপরটি মানুষ খুন। ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় না যেতে পেরে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। তিন হাজারের বেশি মানুষ তখন আহত হয়েছে। ৫ শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে। অনেক গাড়িতে আগুন দিয়েছে তারা। মানুষ পুড়িয়ে মারার হিসাব একদিন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু দিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। সেসব দেশের মানুষ গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না। এক রুমের মধ্যে সমস্ত পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়ত এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সবরকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখব। কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিয়েছি, একটি মানুষও ঘরহীন থাকবে না। ওরা (বিএনপি) মানুষকে কিছু দিয়েছে? কয়েকদিন আগে সারা দেশে ১০০টি সেতু, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, বাজার করে দিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আপনাদের কাছে এই বিজয়ের মাসে আমি উপহার নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন, ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছি। বিজয়ের মাসে চট্টলাবাসীর জন্য আমার উপহার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু দিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইউরোপের ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। তারা গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না না। এক রুমে পুরো পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়তো এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সব রকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখবো, কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ করোনার সময় সহযোগিতা করেছে। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন। আপনারাই আমার পরিবার, আপনারাই আমার সব।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ প্রকল্প; সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও রাউজানে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাসিরাবাদে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন; নগর ও উপজেলার ১৪টি বিদ্যালয়ের ভবন, মিরসরাই ও লোহাগাড়ায় ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণ ও অফিস ভবন ইত্যাদি। এসব নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। জনসভা সঞ্চালনা করছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভার মঞ্চ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ৮৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৬০ মিটার লম্বা এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসার ব্যবস্থা রয়েছে।