ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সচিবরা নিজেদের রাজা মনে করেন: হাইকোর্ট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৪২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করেন না বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

১৪ পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের দায়ের করা এক আদালত অবমাননার মামলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতিনিধি হিসেবে তলবে হাজির হন উপসচিব মো. আব্দুর রহমান। এসময় শুনানিতে উপসচিবকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেন, সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করেন না। তারা নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

এদিন উপসচিবের উপস্থিতিতে আদালতে শুনানি হয়। আরও শুনানি ও আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেছেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস, এটা সচিবদের মনে রাখা উচিত। সচিবালয়ে বসে নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গেলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়।

আদালত বলেন, সচিবরা আদালতের আদেশ মানেন না। আবার তাদের তলব করলে বিব্রতবোধ করেন।

এ সময় উপসচিবকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনি নিজেও সচিবের রুমে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ তারা নিজেদের রাজা মনে করেন। নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন।

এ সময় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না করায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ছয় বছরে একটি আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারলেন না। পক্ষে-বিপক্ষে যাই হোক আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আবেদনটি অনেক আগেই নিষ্পত্তি করা উচিত ছিল।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।

এ বিষয়ে ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, দেশের সব পৌরসভায়-অ্যাকাউন্ট ও অডিট বিভাগের পরিবর্তে হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগ গঠন করার জন্য অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে কর্মরত ১৪ জন বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরে দরখাস্ত করেছিলেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ২০১৭ সালে ওই ১৪ জন অফিসার হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট করেন।

রিটের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার সচিব, দাখিল করা দুটি দরখাস্ত কোনো ব্যর্থতা ছাড়া এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে। আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সিভিল পিটিশনটি খারিজ করেন। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আদালতের আদেশ না মানায় স্থানীয় সরকার সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া বলেন, রিটকারীরা বারবার যোগাযোগ করার পরও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তারা দাখিলকৃত আবেদন নিষ্পত্তি করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ১৪ জন অফিসার ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২০ নভেম্বর আদালত সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়কে রিট পিটিশনার কর্তৃক দাখিলকৃত দুটি দরখাস্ত এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ প্রদান করেন।

রিট পিটিশনাররা হলেন কাউছার মাতুব্বর, গোলাম মোহাম্মদ, আলেক মিয়া, রেজাউল হক শাহা, খোকন চন্দ রায়, আবু শাহাদাত মো. সায়েম, মো. শফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, রোজিনা পারভিন, ইকবাল হোসেন, শুকুর মিয়া এবং আবু সুফিয়ান।

নিউজটি শেয়ার করুন

সচিবরা নিজেদের রাজা মনে করেন: হাইকোর্ট

আপডেট সময় : ১০:৫০:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করেন না বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

১৪ পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের দায়ের করা এক আদালত অবমাননার মামলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতিনিধি হিসেবে তলবে হাজির হন উপসচিব মো. আব্দুর রহমান। এসময় শুনানিতে উপসচিবকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেন, সচিব ও সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করেন না। তারা নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

এদিন উপসচিবের উপস্থিতিতে আদালতে শুনানি হয়। আরও শুনানি ও আদেশের জন্য ১০ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেছেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস, এটা সচিবদের মনে রাখা উচিত। সচিবালয়ে বসে নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গেলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়।

আদালত বলেন, সচিবরা আদালতের আদেশ মানেন না। আবার তাদের তলব করলে বিব্রতবোধ করেন।

এ সময় উপসচিবকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনি নিজেও সচিবের রুমে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারণ তারা নিজেদের রাজা মনে করেন। নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন।

এ সময় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না করায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ছয় বছরে একটি আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারলেন না। পক্ষে-বিপক্ষে যাই হোক আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আবেদনটি অনেক আগেই নিষ্পত্তি করা উচিত ছিল।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।

এ বিষয়ে ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, দেশের সব পৌরসভায়-অ্যাকাউন্ট ও অডিট বিভাগের পরিবর্তে হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগ গঠন করার জন্য অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে কর্মরত ১৪ জন বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরে দরখাস্ত করেছিলেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ২০১৭ সালে ওই ১৪ জন অফিসার হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট করেন।

রিটের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার সচিব, দাখিল করা দুটি দরখাস্ত কোনো ব্যর্থতা ছাড়া এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে। আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সিভিল পিটিশনটি খারিজ করেন। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আদালতের আদেশ না মানায় স্থানীয় সরকার সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া বলেন, রিটকারীরা বারবার যোগাযোগ করার পরও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তারা দাখিলকৃত আবেদন নিষ্পত্তি করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ১৪ জন অফিসার ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২০ নভেম্বর আদালত সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়কে রিট পিটিশনার কর্তৃক দাখিলকৃত দুটি দরখাস্ত এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ প্রদান করেন।

রিট পিটিশনাররা হলেন কাউছার মাতুব্বর, গোলাম মোহাম্মদ, আলেক মিয়া, রেজাউল হক শাহা, খোকন চন্দ রায়, আবু শাহাদাত মো. সায়েম, মো. শফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, রোজিনা পারভিন, ইকবাল হোসেন, শুকুর মিয়া এবং আবু সুফিয়ান।