ঢাকা ০১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
আজকের সেহরি ও ইফতার ::
ঢাকায় সেহেরি ৪:৩৩ মি. ইফতার ৬:১৭ মি.:: চট্টগ্রামে সেহেরি ৪:২৮ মি. ইফতার ৬:১১ মি. :: রাজশাহীতে সেহেরি ৪:৩৯ মি. ইফতার ৬:২৪ মি. :: খুলনায় সেহেরি ৪:৩৭ মি. ইফতার ৬:২০ মি. :: বরিশালে সেহেরি ৪:৩৪ মি. ইফতার ৬:১৭ মি. :: সিলেটে সেহেরি ৪:২৬ মি. ইফতার ৬:১১ মি. :: রংপুরে সেহেরি ৪:৩৭ মি. ইফতার ৬:২২ মি. :: ময়মনসিংহে সেহেরি ৪:৩২ মি. ইফতার ৬:১৭ মি. ::::

শেষ মূহুর্তে জমজমাট বাণিজ্য মেলা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিলন মাহামুদ : 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাত্র চারদিন বাকি। শেষ সময়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ছুটির দিনে মেলায় ভিড় বেড়েছে। ঢল নেমেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। বাণিজ্যমেলার মূল প্রবেশ ফটকের বাইরে মেলায় ঢোকার জন্য দীর্ঘ লাইন। টিকিট সংগ্রহ করে মানুষ মেলার ঢুকছে। ভেতরে পা ফেলার জায়গা নেই। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিদিন এ মেলায় ছুটে আসছেন। মেলার শুরুতে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম হলেও দিন যত যাচ্ছে লোকসমাগম ততই বাড়ছে। মেলায় এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষজন। কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকে এ মেলায় এসে বিনোদনও পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও ছাড় দিতে শুরু করায় দর্শনার্থীরা এখন দেখে শুনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা-কাটাও শুরু করেছেন। তবে মেলায় নারী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় বেশি ছিল।

শুধু ঢাকা কিংবা রূপগঞ্জের মানুষই নয়, ঢাকার নিকটবর্তী আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও অনেকে এসেছেন বাণিজ্যমেলায় ঘুরতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলার স্থান পরিবর্তনের কারণে নগরবাসীর পাশাপাশি নিকটবর্তী জেলা থেকে উপস্থিতি বাড়ছে।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাচলে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমে উঠতে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরে বাংলাদেশ চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের মেলা প্রাঙ্গণ ছিল প্রাণবন্ত। গত কয়েকদিন সরকারী ছুটির দিনে মেলা জমজমাট হলেও সপ্তাহের অন্যান্য সময় মেলায় দর্শনার্থী উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। মাসব্যাপী মেলার প্রথম দিকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তেমন না থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর পদচারণায় মেলায় বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। মেলার সকল প্যাভিলিয়ন ও সল্টে এখন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় বেচা-বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এসেছেন মেলায় পছন্দের জিনিস কিনতে। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় বেশি ছিল।

এদিকে ব্যাবসায়ীরাও মেলার শেষ সময়ে ক্রেতা আকর্ষণ বিভিন্ন স্টলে এবং সকল রকমারী পণ্যে বিভিন্ন অফার ও ছাড় দিতে শুরু করেছেন। ফলে বেড়েছে বেচাকেনা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় কর্মিরা মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আহ্বান করছেন তাদের স্টলের পণ্য পরখ করে দেখার জন্য। সকল ব্যবসায়ীরাই তাদের পণ্যে ছাড় দিতে শুরু করেছেন। ক্রেতাদের সংখ্যাও বেশ বেড়েছে। এদিকে মেলার আয়োজকরা প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য মেলায় এবারে সবচেয়ে বেশি আর্কষণ হচ্ছে ইমিটেশনের গয়না, কসমেটিকস, শাড়ি, থ্রিপিস ও জুতার স্টলগুলো। এই স্টলগুলোতে নারী ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। মেলায় এসেছে বাহারি রঙের বিভিন্ন দেশীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস এ ইমিটেশনের গয়না। ফার্নিচারের স্টলগুলোতে সর্বনিম্ন ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া নিজস্ব পরিবহনে কোনো প্রকার ডেলিভারি চার্জ ছাড়া পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতাদের বাড়িতে। এতে ক্রেতারাও ফার্নিচার পণ্যে ছাড় পেয়ে কোনো পরিবহন খরচ ছাড়া অনেক খুশি। এদিকে ফার্নিচারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানগুলোতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন মনের মতো করে।

তবে মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে কোট ও ব্লেজারের স্টলে চলছে বিশেষ ছাড়। এতে কোট-ব্লেজারের স্টলগুলোতে ভিড়ও বেশি। প্রথম দিকে যে ব্লেজারের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা, সেই ব্লেজার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এ কারণে দর্শনার্থীরাও ছাড় পেয়ে নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। এতে করে জমে উঠেছে এবারের বাণিজ্য মেলা।

এর মধ্যে বিশেষ ছাড়ে বড়দের ব্লেজার এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শিশুদের কমপ্লিট স্যুট এক হাজার এবং মুজিব কোট এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

ভাগনার জন্য কমপ্লিট স্যুট কিনেছেন তানভীর আহমেদ জনি নামে এক যুবক। ছাড়ে কম দামে পোশাক কিনতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। জনি বলেন, প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় কেনাকাটা করতে আসি। এ বছর মেলায় আসায় হয়নি। শেষ সময়ে এসেছি। ছুটির দিনে ব্যাপক ভিড় দেখছি। এখানে (চয়েজ ফ্যাশনের স্টল) এসে দেখলাম ছাড় চলছে। দাম কম পেয়ে ভাগনার জন্য একটা কমপ্লিট স্যুট কিনে নিলাম।

তাহসিন আহমেদ তূর্য্য নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এখানকার (চয়েজ ফ্যাশনের স্টল) ব্লেজারগুলোর ডিজাইন বেশ পছন্দ হয়েছে। এজন্য একটা ব্লেজার কিনলাম।’ তাহসিনের বাসা রূপগঞ্জের বরপায় এলাকায়। মেলার শেষ দিক হওয়া কেনাকাটা করতেই মূলত তিনি এসেছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘মেলার শুরুর দিকে পণ্যের দাম বেশি ছিল। শেষের দিকে অনেক বেশি ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য এসময়ে কেনাকাটা করতেই এসেছি।

চয়েজ ফ্যাশন স্টলের ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ পর্যন্ত চারবার বাণিজ্যমেলায় স্টল নিয়েছি। তবে এ বছর ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গতবারের তুলনায় এবার ক্রেতা বেশি। বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ে ক্রেতাদের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে আমাদের শো-রুম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘উইনার’ এর বিভিন্ন ধরনের পোশাকে চলছে বিশেষ মূল্যছাড়। তাই, উইনারের স্টলে ঢল নেমেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর।

জানা যায়, মেলা উপলক্ষে উইনারের বিভিন্ন পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্যছাড় চলছে। এগুলোর মধ্যে ছাড় দিয়ে টি-শার্ট ৪৬২ টাকা, প্যান্ট ১ হাজার ৩৫০ টাকা, জ্যাকেট ১ হাজার ২০ টাকা, গ্লিটার লিকুইড ১২০ টাকা, বাচ্চাদের ডায়াপার (৩০ পিস) ১ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০০ মিলি গ্লিটার লিকুইডের সঙ্গে ২৫০ মিলি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।

মেলায় তৈয়বুর রহমান তৈয়ব নামে এক ক্রেতা বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় সপরিবারে বাণিজ্যমেলায় এসেছি। মেলার প্রবেশ পথে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ মানুষের চাপ রয়েছে। আমি প্রতি বছর মেলার শেষের দিকে আসি। কারণ শেষ মুহূর্তে বিক্রেতারা বিভিন্ন পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন। উইনারের টি-শার্টগুলোর ডিজাইন খুব পছন্দ হয়েছে। নিজের জন্য একটি কিনেছি।

কথা হলে উইনার স্টলের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেচাকেনা ভালো যাচ্ছে। মেলার শুরু দিকে তেমন ক্রেতা না থাকলেও শেষপর্যায়ে উইনার স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। এছাড়া কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলোতে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার দেওয়া রয়েছে।

এবারের মেলায় পণ্যের পসরা সাজিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল। দুটি প্যাভিলিয়নে ১২০টির মতো নতুন পণ্যসহ প্রায় ৬ হাজার ৪০০ পণ্য প্রদর্শন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মেলা উপলক্ষে রয়েছে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।

মেলা থেকে গৃহস্থালি পণ্য কিনছিলেন শাহিনা আক্তার তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি মেলা পাশর্^বর্তী এলাকায়। এবারের মেলায় গত কয়দিনে আরও তিনবার মেলায় এসেছেন তিনি। তখন পণ্যে তেমন ছাড় না পাওয়ায় কেনা-কাটা করা হয় নাই। কিন্তু আজ দেখছি প্রায় স্টলগুলোতেই কম-বেশি ছাড় দিচ্ছে। তাই কিছু গৃহস্থালি পণ্য কিনলাম।

গৃহস্থালি পণ্য বিক্রেতা সামিউল ইসলাম জানান, এবারের মেলায় প্রথমদিকে সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত আশানুরূপ তেমন বেচা-বিক্রি হয় নাই। এদিকে মেলার প্রায় শেষের দিকে। তবে কয়েকদিন থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বেড়েছে। ওই বিক্রেতা বলেন, ধীরে ধীরে লোক সমাগম বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে দিন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রি আরও বাড়বে বলেও জানান ওই বিক্রেতা।

মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা সামগ্রী। এসব পণ্যে চলছে নানা আকর্ষণীয় অফার। তেমনি বাহারি ডিজাইনের কাশ্মীরি কার্পেটে চলছে বিশেষ ছাড়। এতে স্টলটিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সন্ধ্যায় মেলায় কাশ্মীরি কার্পেটের স্টলে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, মেলা উপলক্ষে কাশ্মীরের প্রত্যেকটি কার্পেটে ২০ শতাংশ ছাড় চলছে। ছাড় দিয়ে এসব কার্পেট সাত হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কার্পেটগুলো ভারতের কাশ্মীর, জাম্মু, শ্রীনগর, কলকাতা, হিমাচল, রাজস্থান তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।

আকাশ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাণিজ্যমেলায় অনেক দোকানে কার্পেট দেখেছি। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাশ্মীর কার্পেটের কাজ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শীতকালে বাসার ফ্লোর ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই বাসার জন্য কয়েকটি কাশ্মীর সিল্ক কার্পেট পছন্দ করছি।

জান্নাতুন নাহার সুমনা নামে এক ক্রেতা বলেন, মেলায় এ বছর দুইবার এসেছি। আজ বন্ধুর সঙ্গে এসেছি। ভারতীয় দোকানটির কার্পেটগুলো খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের। দেখতে খুব সুন্দর। তাই এখান থেকে কয়েকটি কার্পেট কিনবো ভাবছি।

স্টলটির ইনচার্জ ইমরান খান বলেন, এবারই প্রথম বাণিজ্যমেলায় এসেছি। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের সিল্ক কার্পেটের দোকান রয়েছে। আশা করছি, এবার আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হবে।

ডেমরা থেকে আসা দর্শনার্থী তাছমিয়া তাছমীন মেলায় ইমিটেশনের গয়না কিনছিলেন। তিনি বলেন পরিবারে জন্য কিছু কসমেটিক কিনছি। বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন দেশের কসমেটিকস, ইমিটেশনের গয়না পাওয়া যায়। তা ব্যতিক্রম, দৃষ্টিনন্দন ও মানের দিক দিয়ে সেরা। তিনি বলেন, ইমিটেশনের গয়নাগুলো শাড়ি বা থ্রিপিসের সাথে মানসই করে পড়লে অনেক বেশি ব্যক্তিত্ববান মনে হয়। আবার বিভিন্ন অফার আর ছাড়ের বিষয়তো রয়েছেই।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। একদিকে কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। অন্যদিকে বিনোদনে মেতেছে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সীরা। তাদের জন্য মেলায় করা হয়েছে মিনিপার্ক। স্টলগুলোর তুলনায় মিনিপার্কেই আগ্রহ বেশি মানুষের।

সন্ধ্যায় বাণিজ্যমেলায় দেখা যায়, মিনিপার্কে ইলেকট্রনিক বোটের পাশে মানুষের ভিড় বেশি। বোটে পাঁচ মিনিট চড়তে দিতে হবে ৬০ টাকা।

আসিফ ভূঁইয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বাণিজ্যমেলায় এসে ছেলেকে ইলেকট্রনিক নৌকায় চড়াই। নৌকায় চড়ে সে বেশ আনন্দিত।

বোটের সামনে দেখা গেলো নূরুন নাহার নামে এক নারীকে। তিনি মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়ে বোটে চড়েছে। শৈশবকালের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। গ্রামে ছোটবেলায় মেলাতে বাবার সঙ্গে চরকি ও নৌকায় চড়েছি। এখন ইচ্ছা জেগেছে এই নৌকায় চড়তে।

ইলেকট্রনিক বোটটির পরিদর্শক সামসুল আলম বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সুন্দর সময় উপভোগের সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

৩ বছরের মেয়ে জুয়েনার জন্য খেলনা কিনছিলেন মা শাহিদা বেগম। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় শিশু পার্ক ছাড়া বাচ্চাদের বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। তাই প্রতিবছরই বাণিজ্য মেলায় বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে আসি। এছাড়া এখানে শিশু পার্কের ব্যবস্থা রয়েছে। এই মেলা শিশুদের জন্য বিনোদন বটে।

১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বসতো মেলা। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্যমেলা। এটি এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী জায়গা। তখন মেলায় শিশুপার্ক ছিল না। এবার করা হয়েছে মিনিপার্ক।

এবারের বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল কোটি টাকা দামের একটি খাট। শুরু থেকেই খাটটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়লেও মেলা প্রায় শেষ হতে এলেও এখনও বিক্রি হয়নি এই ‘পরী পালং খাট’। বিক্রেতা কোটি টাকা দাম হাঁকলেও ক্রেতাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে।

খাটটির ডিজাইনার ও মালিক মো. নুরুন্নবী বলেন, রাজকীয় কারুকাজ ও পরীর ডিজাইনে খাটটি তৈরি করা হয়েছে। কোনোরকম মেশিনের ব্যবহার ছাড়াই সর্বোচ্চ নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। খাটটির দাম এক কোটি টাকা চাইছি। যিনি খাটটি কিনবেন তাকে উপহার হিসেবে একটি ইয়ামাহার এফজেড মডেলের মোটরসাইকেল ও এক ভরি সোনার গহনা উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ দাম পাইনি। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মেলায় স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, স্টলের সামনে একটি ব্যারিকেড দেওয়া আছে। ব্যারিকেডের কাছাকাছি থেকে খাটটি দেখছেন দর্শনার্থীরা। খাটের চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরীর আদলে চারটি মূর্তি। বিভিন্ন অংশে আরও ১২টি পরী রয়েছে।

তিনি বলেন, খাটের চার কোণে বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি রয়েছে। এর পাশে চারটি চাঁদ ও ছয়টি সূর্যের নকশা আছে। বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ রয়েছে। পাটাতনগুলো ভাঁজ করে তুলে রাখার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে এটি তৈরি। প্রায় ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে খাটটি দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে স্টলটির সামনে। কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ শুধু খাটের নানা প্রান্ত থেকে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাও করেছেন। তবে মালিকপক্ষ ও বিক্রেতার নিষেধ থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারও। কেউ যাতে খাটের কাছে যেতে না পারেন, স্পর্শ করতে না পারেন, সেজন্য সার্বক্ষণিক দু’জন কর্মী স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, নতুন পরিবেশে মেলার আয়োজন ও স্থাপনা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়া মানুষ এখন বিনোদন প্রেমিক। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় আশপাশের জেলা থেকেও লোকজন আসছেন। এতে অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিন লোক সমাগম বেড়েছে। আরেকটি বিষয় হলো- এবারের মেলায় ধুলাবালি সমস্যা অনেক কম। এতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। আড্ডা দিচ্ছেন। পছন্দের পণ্য কিনছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দিন যতই যাচ্ছে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী সমাগম বাড়ছে। মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছুটির দিন ছাড়াও অনেক রয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীরা যাতে করে হয়রানির শিকার না হন সে কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের টিম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে।

এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বাণিজ্যমেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেলার টিকিট কেনা যাবে।

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/3rbo

নিউজটি শেয়ার করুন

শেষ মূহুর্তে জমজমাট বাণিজ্য মেলা

আপডেট সময় : ০৮:২৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

মিলন মাহামুদ : 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাত্র চারদিন বাকি। শেষ সময়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ছুটির দিনে মেলায় ভিড় বেড়েছে। ঢল নেমেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। বাণিজ্যমেলার মূল প্রবেশ ফটকের বাইরে মেলায় ঢোকার জন্য দীর্ঘ লাইন। টিকিট সংগ্রহ করে মানুষ মেলার ঢুকছে। ভেতরে পা ফেলার জায়গা নেই। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিদিন এ মেলায় ছুটে আসছেন। মেলার শুরুতে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম হলেও দিন যত যাচ্ছে লোকসমাগম ততই বাড়ছে। মেলায় এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষজন। কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকে এ মেলায় এসে বিনোদনও পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও ছাড় দিতে শুরু করায় দর্শনার্থীরা এখন দেখে শুনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা-কাটাও শুরু করেছেন। তবে মেলায় নারী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় বেশি ছিল।

শুধু ঢাকা কিংবা রূপগঞ্জের মানুষই নয়, ঢাকার নিকটবর্তী আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও অনেকে এসেছেন বাণিজ্যমেলায় ঘুরতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলার স্থান পরিবর্তনের কারণে নগরবাসীর পাশাপাশি নিকটবর্তী জেলা থেকে উপস্থিতি বাড়ছে।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাচলে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমে উঠতে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরে বাংলাদেশ চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের মেলা প্রাঙ্গণ ছিল প্রাণবন্ত। গত কয়েকদিন সরকারী ছুটির দিনে মেলা জমজমাট হলেও সপ্তাহের অন্যান্য সময় মেলায় দর্শনার্থী উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। মাসব্যাপী মেলার প্রথম দিকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তেমন না থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর পদচারণায় মেলায় বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। মেলার সকল প্যাভিলিয়ন ও সল্টে এখন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় বেচা-বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এসেছেন মেলায় পছন্দের জিনিস কিনতে। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় বেশি ছিল।

এদিকে ব্যাবসায়ীরাও মেলার শেষ সময়ে ক্রেতা আকর্ষণ বিভিন্ন স্টলে এবং সকল রকমারী পণ্যে বিভিন্ন অফার ও ছাড় দিতে শুরু করেছেন। ফলে বেড়েছে বেচাকেনা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় কর্মিরা মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আহ্বান করছেন তাদের স্টলের পণ্য পরখ করে দেখার জন্য। সকল ব্যবসায়ীরাই তাদের পণ্যে ছাড় দিতে শুরু করেছেন। ক্রেতাদের সংখ্যাও বেশ বেড়েছে। এদিকে মেলার আয়োজকরা প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য মেলায় এবারে সবচেয়ে বেশি আর্কষণ হচ্ছে ইমিটেশনের গয়না, কসমেটিকস, শাড়ি, থ্রিপিস ও জুতার স্টলগুলো। এই স্টলগুলোতে নারী ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। মেলায় এসেছে বাহারি রঙের বিভিন্ন দেশীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস এ ইমিটেশনের গয়না। ফার্নিচারের স্টলগুলোতে সর্বনিম্ন ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া নিজস্ব পরিবহনে কোনো প্রকার ডেলিভারি চার্জ ছাড়া পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতাদের বাড়িতে। এতে ক্রেতারাও ফার্নিচার পণ্যে ছাড় পেয়ে কোনো পরিবহন খরচ ছাড়া অনেক খুশি। এদিকে ফার্নিচারের পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানগুলোতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন মনের মতো করে।

তবে মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে কোট ও ব্লেজারের স্টলে চলছে বিশেষ ছাড়। এতে কোট-ব্লেজারের স্টলগুলোতে ভিড়ও বেশি। প্রথম দিকে যে ব্লেজারের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা, সেই ব্লেজার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এ কারণে দর্শনার্থীরাও ছাড় পেয়ে নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। এতে করে জমে উঠেছে এবারের বাণিজ্য মেলা।

এর মধ্যে বিশেষ ছাড়ে বড়দের ব্লেজার এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শিশুদের কমপ্লিট স্যুট এক হাজার এবং মুজিব কোট এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

ভাগনার জন্য কমপ্লিট স্যুট কিনেছেন তানভীর আহমেদ জনি নামে এক যুবক। ছাড়ে কম দামে পোশাক কিনতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। জনি বলেন, প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় কেনাকাটা করতে আসি। এ বছর মেলায় আসায় হয়নি। শেষ সময়ে এসেছি। ছুটির দিনে ব্যাপক ভিড় দেখছি। এখানে (চয়েজ ফ্যাশনের স্টল) এসে দেখলাম ছাড় চলছে। দাম কম পেয়ে ভাগনার জন্য একটা কমপ্লিট স্যুট কিনে নিলাম।

তাহসিন আহমেদ তূর্য্য নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এখানকার (চয়েজ ফ্যাশনের স্টল) ব্লেজারগুলোর ডিজাইন বেশ পছন্দ হয়েছে। এজন্য একটা ব্লেজার কিনলাম।’ তাহসিনের বাসা রূপগঞ্জের বরপায় এলাকায়। মেলার শেষ দিক হওয়া কেনাকাটা করতেই মূলত তিনি এসেছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘মেলার শুরুর দিকে পণ্যের দাম বেশি ছিল। শেষের দিকে অনেক বেশি ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য এসময়ে কেনাকাটা করতেই এসেছি।

চয়েজ ফ্যাশন স্টলের ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ পর্যন্ত চারবার বাণিজ্যমেলায় স্টল নিয়েছি। তবে এ বছর ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গতবারের তুলনায় এবার ক্রেতা বেশি। বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ে ক্রেতাদের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে আমাদের শো-রুম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘উইনার’ এর বিভিন্ন ধরনের পোশাকে চলছে বিশেষ মূল্যছাড়। তাই, উইনারের স্টলে ঢল নেমেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর।

জানা যায়, মেলা উপলক্ষে উইনারের বিভিন্ন পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্যছাড় চলছে। এগুলোর মধ্যে ছাড় দিয়ে টি-শার্ট ৪৬২ টাকা, প্যান্ট ১ হাজার ৩৫০ টাকা, জ্যাকেট ১ হাজার ২০ টাকা, গ্লিটার লিকুইড ১২০ টাকা, বাচ্চাদের ডায়াপার (৩০ পিস) ১ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০০ মিলি গ্লিটার লিকুইডের সঙ্গে ২৫০ মিলি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।

মেলায় তৈয়বুর রহমান তৈয়ব নামে এক ক্রেতা বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় সপরিবারে বাণিজ্যমেলায় এসেছি। মেলার প্রবেশ পথে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ মানুষের চাপ রয়েছে। আমি প্রতি বছর মেলার শেষের দিকে আসি। কারণ শেষ মুহূর্তে বিক্রেতারা বিভিন্ন পণ্যে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন। উইনারের টি-শার্টগুলোর ডিজাইন খুব পছন্দ হয়েছে। নিজের জন্য একটি কিনেছি।

কথা হলে উইনার স্টলের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেচাকেনা ভালো যাচ্ছে। মেলার শুরু দিকে তেমন ক্রেতা না থাকলেও শেষপর্যায়ে উইনার স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। এছাড়া কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলোতে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার দেওয়া রয়েছে।

এবারের মেলায় পণ্যের পসরা সাজিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল। দুটি প্যাভিলিয়নে ১২০টির মতো নতুন পণ্যসহ প্রায় ৬ হাজার ৪০০ পণ্য প্রদর্শন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মেলা উপলক্ষে রয়েছে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।

মেলা থেকে গৃহস্থালি পণ্য কিনছিলেন শাহিনা আক্তার তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি মেলা পাশর্^বর্তী এলাকায়। এবারের মেলায় গত কয়দিনে আরও তিনবার মেলায় এসেছেন তিনি। তখন পণ্যে তেমন ছাড় না পাওয়ায় কেনা-কাটা করা হয় নাই। কিন্তু আজ দেখছি প্রায় স্টলগুলোতেই কম-বেশি ছাড় দিচ্ছে। তাই কিছু গৃহস্থালি পণ্য কিনলাম।

গৃহস্থালি পণ্য বিক্রেতা সামিউল ইসলাম জানান, এবারের মেলায় প্রথমদিকে সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত আশানুরূপ তেমন বেচা-বিক্রি হয় নাই। এদিকে মেলার প্রায় শেষের দিকে। তবে কয়েকদিন থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বেড়েছে। ওই বিক্রেতা বলেন, ধীরে ধীরে লোক সমাগম বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে দিন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রি আরও বাড়বে বলেও জানান ওই বিক্রেতা।

মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা সামগ্রী। এসব পণ্যে চলছে নানা আকর্ষণীয় অফার। তেমনি বাহারি ডিজাইনের কাশ্মীরি কার্পেটে চলছে বিশেষ ছাড়। এতে স্টলটিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সন্ধ্যায় মেলায় কাশ্মীরি কার্পেটের স্টলে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, মেলা উপলক্ষে কাশ্মীরের প্রত্যেকটি কার্পেটে ২০ শতাংশ ছাড় চলছে। ছাড় দিয়ে এসব কার্পেট সাত হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কার্পেটগুলো ভারতের কাশ্মীর, জাম্মু, শ্রীনগর, কলকাতা, হিমাচল, রাজস্থান তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।

আকাশ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাণিজ্যমেলায় অনেক দোকানে কার্পেট দেখেছি। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাশ্মীর কার্পেটের কাজ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শীতকালে বাসার ফ্লোর ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই বাসার জন্য কয়েকটি কাশ্মীর সিল্ক কার্পেট পছন্দ করছি।

জান্নাতুন নাহার সুমনা নামে এক ক্রেতা বলেন, মেলায় এ বছর দুইবার এসেছি। আজ বন্ধুর সঙ্গে এসেছি। ভারতীয় দোকানটির কার্পেটগুলো খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের। দেখতে খুব সুন্দর। তাই এখান থেকে কয়েকটি কার্পেট কিনবো ভাবছি।

স্টলটির ইনচার্জ ইমরান খান বলেন, এবারই প্রথম বাণিজ্যমেলায় এসেছি। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের সিল্ক কার্পেটের দোকান রয়েছে। আশা করছি, এবার আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হবে।

ডেমরা থেকে আসা দর্শনার্থী তাছমিয়া তাছমীন মেলায় ইমিটেশনের গয়না কিনছিলেন। তিনি বলেন পরিবারে জন্য কিছু কসমেটিক কিনছি। বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন দেশের কসমেটিকস, ইমিটেশনের গয়না পাওয়া যায়। তা ব্যতিক্রম, দৃষ্টিনন্দন ও মানের দিক দিয়ে সেরা। তিনি বলেন, ইমিটেশনের গয়নাগুলো শাড়ি বা থ্রিপিসের সাথে মানসই করে পড়লে অনেক বেশি ব্যক্তিত্ববান মনে হয়। আবার বিভিন্ন অফার আর ছাড়ের বিষয়তো রয়েছেই।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। একদিকে কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। অন্যদিকে বিনোদনে মেতেছে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সীরা। তাদের জন্য মেলায় করা হয়েছে মিনিপার্ক। স্টলগুলোর তুলনায় মিনিপার্কেই আগ্রহ বেশি মানুষের।

সন্ধ্যায় বাণিজ্যমেলায় দেখা যায়, মিনিপার্কে ইলেকট্রনিক বোটের পাশে মানুষের ভিড় বেশি। বোটে পাঁচ মিনিট চড়তে দিতে হবে ৬০ টাকা।

আসিফ ভূঁইয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বাণিজ্যমেলায় এসে ছেলেকে ইলেকট্রনিক নৌকায় চড়াই। নৌকায় চড়ে সে বেশ আনন্দিত।

বোটের সামনে দেখা গেলো নূরুন নাহার নামে এক নারীকে। তিনি মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়ে বোটে চড়েছে। শৈশবকালের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। গ্রামে ছোটবেলায় মেলাতে বাবার সঙ্গে চরকি ও নৌকায় চড়েছি। এখন ইচ্ছা জেগেছে এই নৌকায় চড়তে।

ইলেকট্রনিক বোটটির পরিদর্শক সামসুল আলম বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সুন্দর সময় উপভোগের সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

৩ বছরের মেয়ে জুয়েনার জন্য খেলনা কিনছিলেন মা শাহিদা বেগম। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় শিশু পার্ক ছাড়া বাচ্চাদের বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। তাই প্রতিবছরই বাণিজ্য মেলায় বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে আসি। এছাড়া এখানে শিশু পার্কের ব্যবস্থা রয়েছে। এই মেলা শিশুদের জন্য বিনোদন বটে।

১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বসতো মেলা। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্যমেলা। এটি এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী জায়গা। তখন মেলায় শিশুপার্ক ছিল না। এবার করা হয়েছে মিনিপার্ক।

এবারের বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল কোটি টাকা দামের একটি খাট। শুরু থেকেই খাটটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়লেও মেলা প্রায় শেষ হতে এলেও এখনও বিক্রি হয়নি এই ‘পরী পালং খাট’। বিক্রেতা কোটি টাকা দাম হাঁকলেও ক্রেতাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে।

খাটটির ডিজাইনার ও মালিক মো. নুরুন্নবী বলেন, রাজকীয় কারুকাজ ও পরীর ডিজাইনে খাটটি তৈরি করা হয়েছে। কোনোরকম মেশিনের ব্যবহার ছাড়াই সর্বোচ্চ নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। খাটটির দাম এক কোটি টাকা চাইছি। যিনি খাটটি কিনবেন তাকে উপহার হিসেবে একটি ইয়ামাহার এফজেড মডেলের মোটরসাইকেল ও এক ভরি সোনার গহনা উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ দাম পাইনি। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মেলায় স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, স্টলের সামনে একটি ব্যারিকেড দেওয়া আছে। ব্যারিকেডের কাছাকাছি থেকে খাটটি দেখছেন দর্শনার্থীরা। খাটের চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরীর আদলে চারটি মূর্তি। বিভিন্ন অংশে আরও ১২টি পরী রয়েছে।

তিনি বলেন, খাটের চার কোণে বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি রয়েছে। এর পাশে চারটি চাঁদ ও ছয়টি সূর্যের নকশা আছে। বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ রয়েছে। পাটাতনগুলো ভাঁজ করে তুলে রাখার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে এটি তৈরি। প্রায় ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে খাটটি দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে স্টলটির সামনে। কেউ সেলফি তুলছেন, আবার কেউ শুধু খাটের নানা প্রান্ত থেকে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাও করেছেন। তবে মালিকপক্ষ ও বিক্রেতার নিষেধ থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারও। কেউ যাতে খাটের কাছে যেতে না পারেন, স্পর্শ করতে না পারেন, সেজন্য সার্বক্ষণিক দু’জন কর্মী স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, নতুন পরিবেশে মেলার আয়োজন ও স্থাপনা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়া মানুষ এখন বিনোদন প্রেমিক। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় আশপাশের জেলা থেকেও লোকজন আসছেন। এতে অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিন লোক সমাগম বেড়েছে। আরেকটি বিষয় হলো- এবারের মেলায় ধুলাবালি সমস্যা অনেক কম। এতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারছেন। আড্ডা দিচ্ছেন। পছন্দের পণ্য কিনছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দিন যতই যাচ্ছে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী সমাগম বাড়ছে। মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছুটির দিন ছাড়াও অনেক রয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীরা যাতে করে হয়রানির শিকার না হন সে কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের টিম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে।

এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বাণিজ্যমেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেলার টিকিট কেনা যাবে।

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/3rbo