ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না- প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:২৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
  • / ৪১৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত। একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে কোনো ক্ষতি নেই।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা ১১টায় সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথমেই বাংলাদেশের ভেতরে দিয়ে ভারতের রেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন আসে। দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা প্রসঙ্গও ছিল প্রশ্নটিতে। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে, ওজনটা কীসে মাপছে? ওজন মাপা হচ্ছে কীভাবে? আগে তো পাল্লায় হতো, এখন মেশিনে মাপা হয়। এখন তাহলে কীভাবে বিক্রি হবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যারা সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, একটি মাত্র মিত্র শক্তি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীনে সহযোগিতা করেছে। পৃথিবীতে যারা মিত্র শক্তি যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করে তারা কিন্তু ওই দেশ ছেড়ে যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখনই চেয়েছেন তারা (ভারতের সৈন্য) দেশে ফেরত যাক, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এরপরও যারা কথা বলে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে তারা এ কথা বলে কীভাবে? আসলে যারা এ কথা বলে তারা নিজেই ভারতের কাছে বিক্রি করা। কারণ আমরা দেখেছি যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারত বিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা।

একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী বলে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সঙ্গে) সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কী চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব? ইউরোপের দিকে তাকান সেখানে কোনো বর্ডার নেই। সেখানে কী এক দেশ আরেক দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, এর উপকার পাবে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ৫টি নতুন সমঝোতা স্মারক, ৩টি নবায়িত সমঝোতা স্মারক সই হয়, দুটি রূপকল্প সই হয়। বৈঠকে ভারতে কাজের ক্ষেত্রে ১৩টি যৌথ কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসবের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো, উভয় দেশের শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বজায় রাখার জন্য একটি রুপকল্প ঘোষণা। ডিজিটাল অংশীদারত্ব, সবুজ অংশীদারত্ব, রেল যোগাযোগ নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। সামুদ্রিক যোগাযোগ, সুনীল অর্থনীতি, রেল যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, স্যাটেলাইট ও সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ৫টি সামঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শহরসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সহনশীলতা প্রশমন ও মৎস্য খাতে সহযোগিতার জন্য ৩টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে গৃহীত কিছু কাজের ঘোষণা দেওয়া হয়, এখানে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন, তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণের প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ভারতে চিকিৎসার জন্য যারা যাবে তাদের ই-ভিসা প্রদান নিয়ে আলোচনা করেছি। রঙ্গপুরে ভারতের একটি নতুন হাইকমিশন অফিস প্রতিষ্ঠা করার বিষয়েও কথা হয়েছে। যার মাধ্যেমে স্বল্প সময়ে ভিসা ও ভ্রমণ সহজ হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের দুদেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। ২১ ও ২২ জুন আমি রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর করেছি। একই মাসে সরকারপ্রধান হিসেবে দুবার দিল্লি সফর আমার জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এসবই আমাদের দুদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নতুন সরকার গঠনের পর এটিই ছিল কোনো দেশে আমার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। একই সঙ্গে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের পর ভারতেও ছিল এটি প্রথমবারের মত কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফর। এটি অবশ্যই আমার এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত সম্মানের।

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না- প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:২৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত। একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে কোনো ক্ষতি নেই।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা ১১টায় সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথমেই বাংলাদেশের ভেতরে দিয়ে ভারতের রেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন আসে। দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা প্রসঙ্গও ছিল প্রশ্নটিতে। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে, ওজনটা কীসে মাপছে? ওজন মাপা হচ্ছে কীভাবে? আগে তো পাল্লায় হতো, এখন মেশিনে মাপা হয়। এখন তাহলে কীভাবে বিক্রি হবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যারা সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, একটি মাত্র মিত্র শক্তি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীনে সহযোগিতা করেছে। পৃথিবীতে যারা মিত্র শক্তি যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করে তারা কিন্তু ওই দেশ ছেড়ে যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখনই চেয়েছেন তারা (ভারতের সৈন্য) দেশে ফেরত যাক, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এরপরও যারা কথা বলে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে তারা এ কথা বলে কীভাবে? আসলে যারা এ কথা বলে তারা নিজেই ভারতের কাছে বিক্রি করা। কারণ আমরা দেখেছি যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারত বিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা।

একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী বলে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সঙ্গে) সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কী চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব? ইউরোপের দিকে তাকান সেখানে কোনো বর্ডার নেই। সেখানে কী এক দেশ আরেক দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, এর উপকার পাবে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ৫টি নতুন সমঝোতা স্মারক, ৩টি নবায়িত সমঝোতা স্মারক সই হয়, দুটি রূপকল্প সই হয়। বৈঠকে ভারতে কাজের ক্ষেত্রে ১৩টি যৌথ কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসবের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো, উভয় দেশের শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বজায় রাখার জন্য একটি রুপকল্প ঘোষণা। ডিজিটাল অংশীদারত্ব, সবুজ অংশীদারত্ব, রেল যোগাযোগ নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। সামুদ্রিক যোগাযোগ, সুনীল অর্থনীতি, রেল যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, স্যাটেলাইট ও সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ৫টি সামঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শহরসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সহনশীলতা প্রশমন ও মৎস্য খাতে সহযোগিতার জন্য ৩টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে গৃহীত কিছু কাজের ঘোষণা দেওয়া হয়, এখানে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন, তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণের প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ভারতে চিকিৎসার জন্য যারা যাবে তাদের ই-ভিসা প্রদান নিয়ে আলোচনা করেছি। রঙ্গপুরে ভারতের একটি নতুন হাইকমিশন অফিস প্রতিষ্ঠা করার বিষয়েও কথা হয়েছে। যার মাধ্যেমে স্বল্প সময়ে ভিসা ও ভ্রমণ সহজ হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের দুদেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। ২১ ও ২২ জুন আমি রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর করেছি। একই মাসে সরকারপ্রধান হিসেবে দুবার দিল্লি সফর আমার জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এসবই আমাদের দুদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নতুন সরকার গঠনের পর এটিই ছিল কোনো দেশে আমার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। একই সঙ্গে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের পর ভারতেও ছিল এটি প্রথমবারের মত কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফর। এটি অবশ্যই আমার এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত সম্মানের।