ঢাকা ০৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শুধু নারী নয়, পুরুষও নির্যাতনের শিকার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৬০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রফেসর মোঃ খালিকুজ্জামান চৌধুরী :

আমাদের সমাজে ‘নির্যাতন’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন কেউ আছেন কিনা আমার জানা নেই। আমার দৃষ্টিতে এটি একটি পরিচিত শব্দ। নির্যাতন মানব জীবনে কখনো সুফল বয়ে আনে না; বরং কষ্ট আর দুর্ভোগ সৃষ্টি করে যার পরিণতি কখনো কখনো ভয়াবহ হতে পারে। তাই সভ্য সমাজে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে নির্যাতন কাম্য হতে পারে না। এটি ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়। আমাদের দেশে নির্যাতনের শিকার হন অনেকেই। অনাকাঙ্খিত-অপ্রত্যাশিত নির্যাতন নেমে আসে কারো কারো জীবনে। কখনো এর থাবা থেকে মুক্তি পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে যে নির্যাতনের কথা প্রায়শ: শোনা যায়, তা হলো নারী ও শিশু নির্যাতন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনও রয়েছে। আইন থাকলেই চলে না, আইনের প্রয়োগ থাকতে হয়। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আমার প্রথম কথাটি হলো-সমাজের একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে আমি কখনো নির্যাতনের পক্ষে নই। কেউ নির্যাতনের শিকার হোক এমনটি প্রত্যাশিত নয়। আমার দ্বিতীয় কথাটি হলো-কেউ যদি নির্যাতনের শিকার হয়েই বসে তবে সে ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীকে বিচারের আওতায় এনে প্রচলিত আইনে তার শাস্তি বিধান একান্ত জরুরী।

যে কোনো ধরনের নির্যাতন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এর জন্য শাস্তি হলে তা অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। অপরাধের শাস্তিবিধান নিঃসন্দেহে সুফলদায়ক। প্রসঙ্গত বলতে হয়, আরেকটি কথা, আর তা হলো- ‘পুরুষ নির্যাতন’। আমরা নারী ও শিশু নির্যাতনের কথা বলি-নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের কথা বলি এবং এই আইনে শাস্তির কথা বলি; আবার এসব নিয়ে লেখালেখিও কম হয় না। কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের কথা বলি ক’জন? নারীও যে পুরুষের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে এবং পুরুষ হতে পারে নির্যাতনের শিকার কথাটি বোধ হয় অস্বীকার করার উপায় নেই। আমার জানামতে, আমাদের দেশের বিভিন্ন বয়স ও স্তরের অনেক পুরুষ নির্যাতনের শিকার। স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতিত। এই নির্যাতনের প্রতিকার আদৌ হচ্ছে কি? নারী ও শিশু নির্যাতন আইন রয়েছে, আছে কি পুরুষ নির্যাতন আইন?

পুরুষ নির্যাতনের আইন রয়েছে আর আইনের ধারায় নির্যাতন অপরাধে অভিযুক্ত, দোষী প্রমাণিত নারীরাও শাস্তি পাচ্ছে এমনটি কখনো শুনি নি আমি। কেউ শুনেছেন কি না আমার জানা নেই। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় যতটুকু জানি, এদেশে অনেক পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই নির্যাতনের মূলে রয়েছে স্ত্রীরা। বিভিন্ন বয়স ও স্তরের এসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। নেই কোনো প্রতিকার, নেই কোনো বিচার। আবার লজ্জা ও পারিবারিক সম্ভ্রমের কারণে এই নির্যাতনের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না, দমিয়ে রাখছেন তবে অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ হচ্ছেন। সবকিছুরই তো সীমা আছে, সীমা অতিক্রম করলে পরিণতি কখনো শুভ হয় না, বিস্ফোরণও ঘটে যায়। তাইতো ইংরেজিতে একটি কথা আছে। কথাটি হলো ‘ৎবঢ়ৎবংংবফ বসড়ঃরড়হং নবপড়সব ফধহমবৎড়ঁং’. ধৈর্য্য ও সহনশীলতার বাঁধ যখন ভেঙ্গে যায়, তখন এক ভয়াবহ চিত্রই দৃশ্যমান হয় যা মানবের জন্য অভিশাপ। প্রাত্যহিক জীবনে নির্যাতনের প্রভাব বড়ই করুণ; পুরুষের রুটিন কাজ সম্পাদনের পথে একটি বড় বাধা, অস্থিরতা সৃষ্টি করে মনের মধ্যে, টেনশন বেড়ে যায়। ফলে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ অসুস্থ থাকলে তার অসুস্থতাও বেড়ে যায়। স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন, আত্মহত্যা করেছেন এসব খবরও শোনা যায়।

আমার জানামতে, আইনতো সবার জন্য। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই আইনের শাসন প্রযোজ্য। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, এ দেশে নারী নির্যাতনের শিকার হয়, আবার পুরুষও নির্যাতনের শিকার হয়। তাই নারী ও শিশু নির্যাতনের আইন থাকলে পুরুষ নির্যাতনের আইনও থাকা উচিত। নির্যাতনকারী পুরুষ বা নারী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় এনে অপরাধের শাস্তিবিধান করলে বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটবে, স্বস্তি পাবে পুরুষ সম্প্রদায়।

[লেখক : অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত), মোবাইল নং-০১৭১৮-৭৪৭৪৪১]

বা/খ : এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

শুধু নারী নয়, পুরুষও নির্যাতনের শিকার

আপডেট সময় : ১০:৫২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩

প্রফেসর মোঃ খালিকুজ্জামান চৌধুরী :

আমাদের সমাজে ‘নির্যাতন’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন কেউ আছেন কিনা আমার জানা নেই। আমার দৃষ্টিতে এটি একটি পরিচিত শব্দ। নির্যাতন মানব জীবনে কখনো সুফল বয়ে আনে না; বরং কষ্ট আর দুর্ভোগ সৃষ্টি করে যার পরিণতি কখনো কখনো ভয়াবহ হতে পারে। তাই সভ্য সমাজে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে নির্যাতন কাম্য হতে পারে না। এটি ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়। আমাদের দেশে নির্যাতনের শিকার হন অনেকেই। অনাকাঙ্খিত-অপ্রত্যাশিত নির্যাতন নেমে আসে কারো কারো জীবনে। কখনো এর থাবা থেকে মুক্তি পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে যে নির্যাতনের কথা প্রায়শ: শোনা যায়, তা হলো নারী ও শিশু নির্যাতন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনও রয়েছে। আইন থাকলেই চলে না, আইনের প্রয়োগ থাকতে হয়। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আমার প্রথম কথাটি হলো-সমাজের একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে আমি কখনো নির্যাতনের পক্ষে নই। কেউ নির্যাতনের শিকার হোক এমনটি প্রত্যাশিত নয়। আমার দ্বিতীয় কথাটি হলো-কেউ যদি নির্যাতনের শিকার হয়েই বসে তবে সে ক্ষেত্রে নির্যাতনকারীকে বিচারের আওতায় এনে প্রচলিত আইনে তার শাস্তি বিধান একান্ত জরুরী।

যে কোনো ধরনের নির্যাতন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এর জন্য শাস্তি হলে তা অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। অপরাধের শাস্তিবিধান নিঃসন্দেহে সুফলদায়ক। প্রসঙ্গত বলতে হয়, আরেকটি কথা, আর তা হলো- ‘পুরুষ নির্যাতন’। আমরা নারী ও শিশু নির্যাতনের কথা বলি-নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের কথা বলি এবং এই আইনে শাস্তির কথা বলি; আবার এসব নিয়ে লেখালেখিও কম হয় না। কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের কথা বলি ক’জন? নারীও যে পুরুষের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে এবং পুরুষ হতে পারে নির্যাতনের শিকার কথাটি বোধ হয় অস্বীকার করার উপায় নেই। আমার জানামতে, আমাদের দেশের বিভিন্ন বয়স ও স্তরের অনেক পুরুষ নির্যাতনের শিকার। স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতিত। এই নির্যাতনের প্রতিকার আদৌ হচ্ছে কি? নারী ও শিশু নির্যাতন আইন রয়েছে, আছে কি পুরুষ নির্যাতন আইন?

পুরুষ নির্যাতনের আইন রয়েছে আর আইনের ধারায় নির্যাতন অপরাধে অভিযুক্ত, দোষী প্রমাণিত নারীরাও শাস্তি পাচ্ছে এমনটি কখনো শুনি নি আমি। কেউ শুনেছেন কি না আমার জানা নেই। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় যতটুকু জানি, এদেশে অনেক পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই নির্যাতনের মূলে রয়েছে স্ত্রীরা। বিভিন্ন বয়স ও স্তরের এসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। নেই কোনো প্রতিকার, নেই কোনো বিচার। আবার লজ্জা ও পারিবারিক সম্ভ্রমের কারণে এই নির্যাতনের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না, দমিয়ে রাখছেন তবে অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ হচ্ছেন। সবকিছুরই তো সীমা আছে, সীমা অতিক্রম করলে পরিণতি কখনো শুভ হয় না, বিস্ফোরণও ঘটে যায়। তাইতো ইংরেজিতে একটি কথা আছে। কথাটি হলো ‘ৎবঢ়ৎবংংবফ বসড়ঃরড়হং নবপড়সব ফধহমবৎড়ঁং’. ধৈর্য্য ও সহনশীলতার বাঁধ যখন ভেঙ্গে যায়, তখন এক ভয়াবহ চিত্রই দৃশ্যমান হয় যা মানবের জন্য অভিশাপ। প্রাত্যহিক জীবনে নির্যাতনের প্রভাব বড়ই করুণ; পুরুষের রুটিন কাজ সম্পাদনের পথে একটি বড় বাধা, অস্থিরতা সৃষ্টি করে মনের মধ্যে, টেনশন বেড়ে যায়। ফলে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ অসুস্থ থাকলে তার অসুস্থতাও বেড়ে যায়। স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন, আত্মহত্যা করেছেন এসব খবরও শোনা যায়।

আমার জানামতে, আইনতো সবার জন্য। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই আইনের শাসন প্রযোজ্য। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, এ দেশে নারী নির্যাতনের শিকার হয়, আবার পুরুষও নির্যাতনের শিকার হয়। তাই নারী ও শিশু নির্যাতনের আইন থাকলে পুরুষ নির্যাতনের আইনও থাকা উচিত। নির্যাতনকারী পুরুষ বা নারী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় এনে অপরাধের শাস্তিবিধান করলে বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটবে, স্বস্তি পাবে পুরুষ সম্প্রদায়।

[লেখক : অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত), মোবাইল নং-০১৭১৮-৭৪৭৪৪১]

বা/খ : এসআর।