নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে চলতি সপ্তাহে দেশটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে নিজেদের ঠাণ্ডা করতে ফ্যান চালাতে পারছেন না বাসিন্দারা। তাতে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, শিগগিরই এ গরম থেকে রেহাই মিলছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, ১০ দিন আগে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখান থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৫ দশমিক ৮ ফারেনহাইট)।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করে বলেছে, শিগগিরই গরম কমছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে এদেশে আরও ঘন ঘন, তীব্র ও দীর্ঘতর তাপপ্রবাহে অবদান রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন।
মিজানুর রহমান নামের রাজধানী ঢাকার এক দোকানদার বলেন, আবহাওয়ার চরম গরম। উপরন্তু দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এতে আমাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে।
তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে অনেকে চিকিৎসার শরণাপন্ন হচ্ছেন। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন আমরা অনেক রোগী পাচ্ছি। যাদের অধিকাংশই হিট স্ট্রোকে ভুগছেন। এছাড়া তাপমাত্রাজনিত অন্যান্য সমস্যাও আছে।
এরই মধ্যে নাগরিকদের ঘরের মধ্যে থাকতে উৎসাহিত করেছেন কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পান পানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে দেশের অনেক স্থানে পানি স্বল্পতা দেখা গেছে।
৫২ বছর বয়সী রিকশাচালক মোহাম্মদ সুলতান বলেন, পানির অভাব ও তাপে আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোথাও গাছের পাতাও নড়ছে না। কোনো জায়গায় ছায়া নেই। ফলে রিকশা চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে দেশের ৬ অঞ্চলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার (৭ জুন) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুধবার (৭ জুন) ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত (পুন:) ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া যশোর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত (পুন:) ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, তীব্র দাবদাহের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং। গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। সারা দিন কাজের ব্যাঘাত তো ঘটছেই, লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঘুমাতে পারছে না মানুষ। সামান্য বৃষ্টি আশায় কাতর সবাই।
তবে সোমবার ও মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টির দেখা মিলেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামতেই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। সারা দিন তীব্র দাবদাহে ছটফট করা চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য যেন খানিকটা প্রশান্তি। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কখনো হালকা কখনো ভারী বৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে পোড়া নগরবাসীর জন্য অন্যরকম এক প্রশান্তি হলেও বৃষ্টি শেষে আবার গরম শুরু হয়েছে।
প্রকাশক
মানিক কুমার সরকার
সম্পাদক
শামছুর রহমান শিশির
Copyright © 2024 বাংলা খবর. All rights reserved.