ঢাকা ০৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যে শর্তে আলোচনায় বসতে চায় আওয়ামী লীগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩
  • / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সঙ্গে আলোচনা নিয়ে গত দু’দিনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভিন্নধর্মী বক্তব্য উঠে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানান, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়, তবেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে আওয়ামী লীগ। এর আগে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

আপাতত আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নেই। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোয় অসন্তুষ্ট হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে এলোমেলো বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

নির্বাচন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাব না। দলের পক্ষ থেকে আমাদের অবস্থান হলো—বিএনপি যদি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়, তাহলে আলোচনায় বসা যেতে পারে। কিন্তু তারা নির্বাচন প্রতিহত করার নীতিতে থাকবে আর আমরা তাদের আলোচনায় ডাকব, এটা হবে না। ’

সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার হুট করে ১৪ দলের সমাবেশ থেকে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোয় আমির হোসেন আমুর ওপর নাখোশ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আমুর সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে তো আমরা এখন আলোচনায় বসছি না। এটা তো দলের অবস্থান নয়। ’

সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পর আমির হোসেন আমু বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। বিকেলে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের এক আলোচনাসভায় বক্তব্যে আমু তাঁর আগের দিনের দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে আসেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে আওয়ামী লীগ রাজি আছে বলে জানান। এর পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের আলোচনায় বসার বিষয়টি সামনে আসে।

১৪ দলের আলোচনাসভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চলছে। এই সংবিধানের ভিত্তিতে যেকোনো সমাধান করতে আমরা প্রস্তুত। আপনারা আসুন, গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা আলোচনায় রাজি আছি। আলোচনার দ্বার খোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ’

১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র বলেন, ‘প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক, আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কীভাবে সবাই মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়। ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আমুর সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব। এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে, এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। ’

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংলাপ নিয়ে বক্তব্যটি তাঁর ব্যক্তিগত। এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি ১৪ দলেও আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে (আমু) যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কথাটি গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি সেভাবে বলেননি।

আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। আমির হোসেন আমু যে মত দিয়েছেন সেটাও একটা বক্তব্য। তবে এ বিষয়টি ১৪ দলে আলোচিত হয়নি।

বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বানের বিষয়টি গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় স্পষ্ট করেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার কথা কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ’

১৪ দলের জনসভায় দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘২০১৩ সালের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছিল, সেদিনও জাতিসংঘের সামনে আলোচনার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, তোমরা পরাজিত হয়েছিলে। আবারও সেই নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। ’

আমু বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তাঁর অধীনে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা ক্ষমতা কার হাতে দেবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলে যাই। কাউকে আলোচনার জন্য নয়। ’

আমির হোসেন আমু গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। নানা মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও চাপ আছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক বাস্তবতায় বিএনপির নির্বাচনে না আসার কারণ নেই। ফলে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার বিষয়টি এই মুহূর্তে বিবেচনায় নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার কথা মাঠে নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে আছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে আলোচনায় ব্যস্ত রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ ব্যাহত করার কৌশল নিতে পারে আওয়ামী লীগ।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই। ’

বিএনপির প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীরা ‘এলোমেলো’ বক্তব্য দিচ্ছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিএনপি সন্ত্রাসী দল, এরা সন্ত্রাস করে। এদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আর কালকে (মঙ্গলবার) আমির হোসেন আমু বলেন যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন। আবার আজকে (বুধবার) শুনলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সঠিক না। ওবায়দুল কাদেরেরটা সঠিক না আমির হোসেন আমুরটা সঠিক?’

মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। তারপর ওই সংবাদ প্রত্যাহার করে নিলেন। সব কিছুতেই এলোমেলো যে হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

যে শর্তে আলোচনায় বসতে চায় আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ১১:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সঙ্গে আলোচনা নিয়ে গত দু’দিনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভিন্নধর্মী বক্তব্য উঠে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানান, যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়, তবেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে আওয়ামী লীগ। এর আগে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন বিষয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

আপাতত আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নেই। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোয় অসন্তুষ্ট হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে এলোমেলো বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

নির্বাচন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাব না। দলের পক্ষ থেকে আমাদের অবস্থান হলো—বিএনপি যদি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়, তাহলে আলোচনায় বসা যেতে পারে। কিন্তু তারা নির্বাচন প্রতিহত করার নীতিতে থাকবে আর আমরা তাদের আলোচনায় ডাকব, এটা হবে না। ’

সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার হুট করে ১৪ দলের সমাবেশ থেকে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোয় আমির হোসেন আমুর ওপর নাখোশ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আমুর সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে তো আমরা এখন আলোচনায় বসছি না। এটা তো দলের অবস্থান নয়। ’

সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পর আমির হোসেন আমু বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। বিকেলে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের এক আলোচনাসভায় বক্তব্যে আমু তাঁর আগের দিনের দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে আসেন।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে আওয়ামী লীগ রাজি আছে বলে জানান। এর পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের আলোচনায় বসার বিষয়টি সামনে আসে।

১৪ দলের আলোচনাসভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চলছে। এই সংবিধানের ভিত্তিতে যেকোনো সমাধান করতে আমরা প্রস্তুত। আপনারা আসুন, গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা আলোচনায় রাজি আছি। আলোচনার দ্বার খোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ’

১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র বলেন, ‘প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক, আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কীভাবে সবাই মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়। ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আমুর সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব। এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে, এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। ’

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংলাপ নিয়ে বক্তব্যটি তাঁর ব্যক্তিগত। এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি ১৪ দলেও আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে (আমু) যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কথাটি গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি সেভাবে বলেননি।

আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। আমির হোসেন আমু যে মত দিয়েছেন সেটাও একটা বক্তব্য। তবে এ বিষয়টি ১৪ দলে আলোচিত হয়নি।

বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বানের বিষয়টি গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় স্পষ্ট করেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার কথা কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ’

১৪ দলের জনসভায় দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘২০১৩ সালের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছিল, সেদিনও জাতিসংঘের সামনে আলোচনার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, তোমরা পরাজিত হয়েছিলে। আবারও সেই নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। ’

আমু বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তাঁর অধীনে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা ক্ষমতা কার হাতে দেবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলে যাই। কাউকে আলোচনার জন্য নয়। ’

আমির হোসেন আমু গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। নানা মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও চাপ আছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক বাস্তবতায় বিএনপির নির্বাচনে না আসার কারণ নেই। ফলে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার বিষয়টি এই মুহূর্তে বিবেচনায় নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার কথা মাঠে নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে আছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে আলোচনায় ব্যস্ত রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ ব্যাহত করার কৌশল নিতে পারে আওয়ামী লীগ।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি পপুলার পার্টি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই। ’

বিএনপির প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীরা ‘এলোমেলো’ বক্তব্য দিচ্ছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিএনপি সন্ত্রাসী দল, এরা সন্ত্রাস করে। এদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আর কালকে (মঙ্গলবার) আমির হোসেন আমু বলেন যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত আছেন। আবার আজকে (বুধবার) শুনলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সঠিক না। ওবায়দুল কাদেরেরটা সঠিক না আমির হোসেন আমুরটা সঠিক?’

মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। তারপর ওই সংবাদ প্রত্যাহার করে নিলেন। সব কিছুতেই এলোমেলো যে হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।