ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাকে ৫ টুকরো করে হত্যায় ছেলেসহ ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৩৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নোয়াখালী প্রতিনিধি : 

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নে ২০২০ সালে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ছেলেসহ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিহত নূর জাহানের ছেলে হুমায়ুন কবির (২৯), তার সহযোগী মো. নীরব (২৮), নুর ইসলাম ওরফে কসাই নুর (২৮), আবুল কালাম মামুন (২৮), মো. মিলাদ হোসেন সুমন (২৮), মো. ইসমাইল (৩৫) ও মো. হামিদ (৩৫)। সবাই সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাজমারা গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি হুমায়ুনেরই জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একই সঙ্গে ছয় সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় পুলিশ।

তিনি আরও জানান, রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাত আসামি উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও নিহতের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।

মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বিকালে সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে গৃহবধূ নুর জাহানের (৫৮) মাথাসহ মরদেহের দুই টুকরো এবং পরদিন একই স্থান থেকে আরও তিন টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে মো. নীরব ও কসাই নুর ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা মামলার বাদী নিজেই জড়িত বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর পুলিশ হুমায়ুনকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করে।

প্রসঙ্গত, নিহত নুরজাহানের ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে রয়েছেন। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুদের ভিত্তিতে। তবে ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ দিকে থাকেন। হুমায়ুন তার মাকে বিষয়টি জানালে তার মা ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন।

হুমায়ুন জবাবে মাকে জানান, তার মালিকানাধীন ১৪ শতাংশ ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মা রাজি ছিলেন না। অন্যদিকে ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল নুরজাহানের। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি তার ভাইকে প্রায়ই চাপ দিতেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমনও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও আব্দুল হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।

হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রতিশ্রুতিতে তারা ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পরে তারা রাতের কোনো এক সময় ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে মরদেহ পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন তারা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

মাকে ৫ টুকরো করে হত্যায় ছেলেসহ ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড

আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

নোয়াখালী প্রতিনিধি : 

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নে ২০২০ সালে নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ছেলেসহ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিহত নূর জাহানের ছেলে হুমায়ুন কবির (২৯), তার সহযোগী মো. নীরব (২৮), নুর ইসলাম ওরফে কসাই নুর (২৮), আবুল কালাম মামুন (২৮), মো. মিলাদ হোসেন সুমন (২৮), মো. ইসমাইল (৩৫) ও মো. হামিদ (৩৫)। সবাই সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাজমারা গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি হুমায়ুনেরই জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একই সঙ্গে ছয় সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় পুলিশ।

তিনি আরও জানান, রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাত আসামি উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও নিহতের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।

মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বিকালে সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে গৃহবধূ নুর জাহানের (৫৮) মাথাসহ মরদেহের দুই টুকরো এবং পরদিন একই স্থান থেকে আরও তিন টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে মো. নীরব ও কসাই নুর ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা মামলার বাদী নিজেই জড়িত বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর পুলিশ হুমায়ুনকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করে।

প্রসঙ্গত, নিহত নুরজাহানের ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে রয়েছেন। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুদের ভিত্তিতে। তবে ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ দিকে থাকেন। হুমায়ুন তার মাকে বিষয়টি জানালে তার মা ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করতে বলেন।

হুমায়ুন জবাবে মাকে জানান, তার মালিকানাধীন ১৪ শতাংশ ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মা রাজি ছিলেন না। অন্যদিকে ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল নুরজাহানের। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি তার ভাইকে প্রায়ই চাপ দিতেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমনও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এছাড়া তার প্রতিবেশী ইসমাইল ও আব্দুল হামিদেরও বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। এজন্য তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।

হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রতিশ্রুতিতে তারা ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পরে তারা রাতের কোনো এক সময় ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে মরদেহ পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন তারা।