ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বেড়া পাম্পিং ষ্টেশন-বাঘাবাড়ি সড়ক পুনঃনির্মাণে আড়াই যুগের দুর্ভোগ লাঘব

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও পাবনার বেড়া সিএনবি মোড়ে যানজটের চিত্র প্রতিদিনের। পাবনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ন মহাসড়কটির এই দু’টি স্থানে প্রতিদিন অসংখ্যবার দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী-চালকদের। তবে, এবার সেই দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই মিলবে। কারণ, ৩০ বছর পর বেড়া পাম্পিং ষ্টেশন থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্ত করা হচ্ছে।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি সড়কটি পুন:নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। সড়কটি নির্মাণ হলে বেড়া থেকে বাঘাবাড়ির দূরত্ব কমবে ৫ কিলোমিটার। সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ের পাশাপাশি, বেড়া সিএনবি মোড় ও বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড়ে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাবেন যাত্রীরা।
বেড়া পাউবো সুত্রে জানা যায়, পাবনা সেঁচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৮০ সালে বেড়া পাম্পিং স্টেশনে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যানবাহন চলাচলের জন্য বাঁধটি পাঁকা করা হয়েছিল। বেড়া পাম্পিং সেন্টশন থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড় পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার।

কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কটি ছোট যানবাহন চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বর্ষা মওসুমে নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধের স্লাব ভেঙে যায়। অবৈধভাবে দখল করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কের ঢালুতে শতাধিক বসতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে বর্তমানে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে নির্মাণকাজ। এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ের পাশাপাশি যানজট থেকে মুক্তি পাবে যাত্রী সাধারণ। নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্য বিক্রির আশা করছের স্থানীয় চাষিরা।

সূত্র জানায়, ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের মেসার্স সালেহ এন্ড মেসার্স বেলাল কন্সট্রাকশন (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দা তুষার আহমেদ সাচ্চু বলেন, এই সড়কটা ৩০ বছর ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। সড়কটি নির্মাণ করায় যাতায়াত, কৃষি পন্য পরিবহণ ও অসুস্থ মানুষকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যাবে।

ট্রাক চালক আব্দুর রহমান বলেন, বেড়া ও বাঘাবাড়িতে মহাসড়কে অনেক যানজট হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কাজে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে, জ্বালানী কম লাগবে। আরামে যাতায়াত করতে পারবো।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন বলেন, আগে এই সড়কে যাতাযাতে অনেক কষ্ট ছিল। আমরা এখন অনায়াসে মালামাল পরিবহনসহ যাতায়াতে অনেক সহজ হবে। সময় কম লাগবে, পথ কম হবে। বাঘাবাড়ি তিন মাথা ও বেড়া সিঅ্যান্ডবি এলাকায় অনেক যানজট হয়, সেটা লাঘব হবে এই সড়কের কারণে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল লতিফ প্রামানিক বলেন, রাস্তাটা হচ্ছে। আমারে অনেক ভালো হচ্ছে। রোগী নিয়ে যেতে পারবো। ফসল বেচতে পারবো। ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারবে সময়মতো। অসুখ বিসুখ হলে দ্রুত হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া যাবে।

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাশেম বলেন, আশির দশকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ৩০ বছর পর নতুন করে পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে। ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার এই সড়ক বাঘাবাড়ি থেকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবু সাঈদ বলেন, বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের অধিনে বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ কাম সড়ক ও বাঁধের স্লাব প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। করোনা ও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ কিছুটা দেরী হয়েছে। কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। তবে পাউবো কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিল ছাড় দিলে আমাদের কাজের গতি আরও বাড়বে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, এডিপি ভুক্ত প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। ৩০ বছর এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিলো। এটি নির্মাণ ও মেরামত করার মূল উদ্দেশ্য ভারী যানবাহন চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা। এছাড়াও স্থানীয় ৫টি গ্রামবাসীর উপকারসহ যাতায়াত ব্যবস্থা ও সময় কমে আসবে। স্থানীয় মানুষের দাবি ছিল সড়কটি পুনঃনির্মানের। এটি নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে সেঁচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে অন্যদিকে এলাকাবাসীও এর সুফল পাবে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

বেড়া পাম্পিং ষ্টেশন-বাঘাবাড়ি সড়ক পুনঃনির্মাণে আড়াই যুগের দুর্ভোগ লাঘব

আপডেট সময় : ০৩:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও পাবনার বেড়া সিএনবি মোড়ে যানজটের চিত্র প্রতিদিনের। পাবনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ন মহাসড়কটির এই দু’টি স্থানে প্রতিদিন অসংখ্যবার দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী-চালকদের। তবে, এবার সেই দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই মিলবে। কারণ, ৩০ বছর পর বেড়া পাম্পিং ষ্টেশন থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্ত করা হচ্ছে।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি সড়কটি পুন:নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। সড়কটি নির্মাণ হলে বেড়া থেকে বাঘাবাড়ির দূরত্ব কমবে ৫ কিলোমিটার। সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ের পাশাপাশি, বেড়া সিএনবি মোড় ও বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড়ে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাবেন যাত্রীরা।
বেড়া পাউবো সুত্রে জানা যায়, পাবনা সেঁচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৮০ সালে বেড়া পাম্পিং স্টেশনে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যানবাহন চলাচলের জন্য বাঁধটি পাঁকা করা হয়েছিল। বেড়া পাম্পিং সেন্টশন থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড় পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার।

কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কটি ছোট যানবাহন চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বর্ষা মওসুমে নদীর প্রবল স্রোতে বাঁধের স্লাব ভেঙে যায়। অবৈধভাবে দখল করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কের ঢালুতে শতাধিক বসতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে বর্তমানে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে নির্মাণকাজ। এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সময় ও জ্বালানী সাশ্রয়ের পাশাপাশি যানজট থেকে মুক্তি পাবে যাত্রী সাধারণ। নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্য বিক্রির আশা করছের স্থানীয় চাষিরা।

সূত্র জানায়, ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের মেসার্স সালেহ এন্ড মেসার্স বেলাল কন্সট্রাকশন (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দা তুষার আহমেদ সাচ্চু বলেন, এই সড়কটা ৩০ বছর ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। সড়কটি নির্মাণ করায় যাতায়াত, কৃষি পন্য পরিবহণ ও অসুস্থ মানুষকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যাবে।

ট্রাক চালক আব্দুর রহমান বলেন, বেড়া ও বাঘাবাড়িতে মহাসড়কে অনেক যানজট হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কাজে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে, জ্বালানী কম লাগবে। আরামে যাতায়াত করতে পারবো।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন বলেন, আগে এই সড়কে যাতাযাতে অনেক কষ্ট ছিল। আমরা এখন অনায়াসে মালামাল পরিবহনসহ যাতায়াতে অনেক সহজ হবে। সময় কম লাগবে, পথ কম হবে। বাঘাবাড়ি তিন মাথা ও বেড়া সিঅ্যান্ডবি এলাকায় অনেক যানজট হয়, সেটা লাঘব হবে এই সড়কের কারণে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল লতিফ প্রামানিক বলেন, রাস্তাটা হচ্ছে। আমারে অনেক ভালো হচ্ছে। রোগী নিয়ে যেতে পারবো। ফসল বেচতে পারবো। ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারবে সময়মতো। অসুখ বিসুখ হলে দ্রুত হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া যাবে।

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাশেম বলেন, আশির দশকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ৩০ বছর পর নতুন করে পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে। ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার এই সড়ক বাঘাবাড়ি থেকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবু সাঈদ বলেন, বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের অধিনে বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ কাম সড়ক ও বাঁধের স্লাব প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। করোনা ও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ কিছুটা দেরী হয়েছে। কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। তবে পাউবো কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিল ছাড় দিলে আমাদের কাজের গতি আরও বাড়বে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, এডিপি ভুক্ত প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। ৩০ বছর এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিলো। এটি নির্মাণ ও মেরামত করার মূল উদ্দেশ্য ভারী যানবাহন চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা। এছাড়াও স্থানীয় ৫টি গ্রামবাসীর উপকারসহ যাতায়াত ব্যবস্থা ও সময় কমে আসবে। স্থানীয় মানুষের দাবি ছিল সড়কটি পুনঃনির্মানের। এটি নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে সেঁচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে অন্যদিকে এলাকাবাসীও এর সুফল পাবে।

বা/খ: এসআর।