ঢাকা ০৯:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ কাজ চলছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৪৮১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম : যমুনার বুকে দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ। রাতদিন চলছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। যমুনা সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে চার দশমিক আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুটি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতুর ৪৭ এবং ৪৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান বসানো হয়েছে। চলছে দ্বিতীয়টি বসানোর কাজ।

২০২১ সালে শুরু হয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর করা হয়। সেতুটি চালু হলে উত্তরের ১৬ জেলায় দ্রæত যোগাযোগসহ ব্যবসা-বানিজ্যে নতুন দীগন্ত উন্মোচিত হবে।
জানা গেছে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে সাবরুট ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যমুনায় বিদ্যমান সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি। যমুনা সড়ক সেতুতে রেল চলাচলে সমস্যার কারণে ২০১৪ সালে পরিকল্পনা নেয়া হয় রেল সেতু নির্মানের। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হয় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প”।

প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুকে ঘিরে যমুনার সিরাজগঞ্জ ও টাংগাইল দুই পাড়ে দুটি প্যাকেজে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেতুর পূর্বপ্রান্তে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয়েছে প্রথম ¯প্যান। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৬টি ¯প্যান বসানো হবে। দেশি বিদেশী প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৪টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৮টি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন এগুলোর ওপর সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান বসানো হচ্ছে। বাকি পিলারের কাজ পরে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয় ও সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এতে ট্রেন যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাপানী কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গেøাবাল কোম্পানি লিমিটেডসহ যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানি প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর দু’প্রান্তে দুটি ভাগে চলছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০২১ সালের মার্চ মাসে পিলারের পাইলিং কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির লোহা আর কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে মেগা এই প্রকল্প। অত্যাধুনিক স্প্যান বসছে সেতুটিতে। এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তাতে আলাদাভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। এই প্রক্রিয়াটি বেশ টেকসই। বলা হচ্ছে, এর ফলে আগামী ১০০ বছরেও সেতুর কাঠামোতে মরিচা ধরবে না। এমনকি আবহাওয়া বদলের সাথে সাথে গার্ডারের রংও বদলে যাবে নিজে থেকেই।

রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্রাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। সেতুটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এটি খুলে দেয়া হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে গতি আসবে। উত্তর জনপদের ব্যবসা-বানিজ্য ও শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থানসহ নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, এই সেতুটির কাজ দ্রæত এগিয়ে চলায় খুশি ব্যবসায়ীরা। অল্প খরচে ট্রেনে উত্তরাঞ্চল থেকে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিজ ও শিল্প পণ্য আনা নেয়া করা যাবে। ইতোমধ্যে সেতুর পশ্চিমপাড়ে গড়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। রেলসেতুটি নির্মান শেষে এখান থেকে উৎপাদিত কৃষিজ ও শিল্পপণ্য ট্রেন যোগে পরিবহন করা যাবে দেশ-বিদেশে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে বিদ্যমান যমুনা সড়ক সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সাথে যুক্ত হবে যমুনা রেলসেতু। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৪৩১ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। তবে দুপাশে দশমিক ০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল সেতু), ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ সড়ক (সংযোগ বাঁধ) নির্মাণ করাহচ্ছে। আর লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্লাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
উল্ল্পাাড়ার ব্যবসায়ী, সমাজসেবক হাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সাথে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এতে যাত্রী সেবার মান বাড়বে। এছাড়া পণ্য পরিবহনে কমে আসবে আমদানী রপ্তানী খরচ।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর পর দেশের রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পবির্তন আনতে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মান কাজ শুরু করেছেন। সেতুটি নির্মান হলে দেশের রেল যোগোযোগ সমৃদ্ধ হবে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বহু মানুষ নিবিঘেœ রেলপথে রাজধানী ঢাকাতে প্রতিদিন যাতায়াত করে গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে সন্ধ্যা আবার বাড়ি ফিরে আসতে পারবে। সেতুটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপ‚র্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি জানান।

রেল মন্ত্রনালয়ের সচিব হুমায়ন কবীর জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সমস্ত দুষ্টি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে। সেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গেও সাথে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। “উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করায় ডাবল লাইনের এ সেতু দিয়ে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে অন্তত ৮৮ টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। রাতদিন চলছে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। এখন পর্যন্ত রেলওয়ে সেতুর কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ কাজ চলছে

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

শফিউল আযম : যমুনার বুকে দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ। রাতদিন চলছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। যমুনা সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে চার দশমিক আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুটি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতুর ৪৭ এবং ৪৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান বসানো হয়েছে। চলছে দ্বিতীয়টি বসানোর কাজ।

২০২১ সালে শুরু হয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর করা হয়। সেতুটি চালু হলে উত্তরের ১৬ জেলায় দ্রæত যোগাযোগসহ ব্যবসা-বানিজ্যে নতুন দীগন্ত উন্মোচিত হবে।
জানা গেছে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে সাবরুট ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যমুনায় বিদ্যমান সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি। যমুনা সড়ক সেতুতে রেল চলাচলে সমস্যার কারণে ২০১৪ সালে পরিকল্পনা নেয়া হয় রেল সেতু নির্মানের। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হয় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প”।

প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুকে ঘিরে যমুনার সিরাজগঞ্জ ও টাংগাইল দুই পাড়ে দুটি প্যাকেজে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেতুর পূর্বপ্রান্তে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের উপর বসানো হয়েছে প্রথম ¯প্যান। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৬টি ¯প্যান বসানো হবে। দেশি বিদেশী প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৪টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৮টি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন এগুলোর ওপর সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান বসানো হচ্ছে। বাকি পিলারের কাজ পরে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয় ও সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এতে ট্রেন যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাপানী কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গেøাবাল কোম্পানি লিমিটেডসহ যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানি প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর দু’প্রান্তে দুটি ভাগে চলছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০২১ সালের মার্চ মাসে পিলারের পাইলিং কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির লোহা আর কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে মেগা এই প্রকল্প। অত্যাধুনিক স্প্যান বসছে সেতুটিতে। এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তাতে আলাদাভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। এই প্রক্রিয়াটি বেশ টেকসই। বলা হচ্ছে, এর ফলে আগামী ১০০ বছরেও সেতুর কাঠামোতে মরিচা ধরবে না। এমনকি আবহাওয়া বদলের সাথে সাথে গার্ডারের রংও বদলে যাবে নিজে থেকেই।

রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্রাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। সেতুটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এটি খুলে দেয়া হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে গতি আসবে। উত্তর জনপদের ব্যবসা-বানিজ্য ও শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থানসহ নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, এই সেতুটির কাজ দ্রæত এগিয়ে চলায় খুশি ব্যবসায়ীরা। অল্প খরচে ট্রেনে উত্তরাঞ্চল থেকে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিজ ও শিল্প পণ্য আনা নেয়া করা যাবে। ইতোমধ্যে সেতুর পশ্চিমপাড়ে গড়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। রেলসেতুটি নির্মান শেষে এখান থেকে উৎপাদিত কৃষিজ ও শিল্পপণ্য ট্রেন যোগে পরিবহন করা যাবে দেশ-বিদেশে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে বিদ্যমান যমুনা সড়ক সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সাথে যুক্ত হবে যমুনা রেলসেতু। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৪৩১ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। তবে দুপাশে দশমিক ০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল সেতু), ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ সড়ক (সংযোগ বাঁধ) নির্মাণ করাহচ্ছে। আর লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্লাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
উল্ল্পাাড়ার ব্যবসায়ী, সমাজসেবক হাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সাথে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এতে যাত্রী সেবার মান বাড়বে। এছাড়া পণ্য পরিবহনে কমে আসবে আমদানী রপ্তানী খরচ।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর পর দেশের রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পবির্তন আনতে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মান কাজ শুরু করেছেন। সেতুটি নির্মান হলে দেশের রেল যোগোযোগ সমৃদ্ধ হবে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বহু মানুষ নিবিঘেœ রেলপথে রাজধানী ঢাকাতে প্রতিদিন যাতায়াত করে গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে সন্ধ্যা আবার বাড়ি ফিরে আসতে পারবে। সেতুটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপ‚র্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি জানান।

রেল মন্ত্রনালয়ের সচিব হুমায়ন কবীর জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সমস্ত দুষ্টি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে। সেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গেও সাথে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। “উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করায় ডাবল লাইনের এ সেতু দিয়ে ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে অন্তত ৮৮ টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। রাতদিন চলছে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। এখন পর্যন্ত রেলওয়ে সেতুর কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।