ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
আজকের সেহরি ও ইফতার ::
ঢাকায় সেহেরি ৪:৩৪ মি. ইফতার ৬:১৬ মি.:: চট্টগ্রামে সেহেরি ৪:২৯ মি. ইফতার ৬:১০ মি. :: রাজশাহীতে সেহেরি ৪:৪০ মি. ইফতার ৬:২৩ মি. :: খুলনায় সেহেরি ৪:৩৮ মি. ইফতার ৬:১৯ মি. :: বরিশালে সেহেরি ৪:৩৫ মি. ইফতার ৬:১৬ মি. :: সিলেটে সেহেরি ৪:২৭ মি. ইফতার ৬:১০ মি. :: রংপুরে সেহেরি ৪:৩৮ মি. ইফতার ৬:২১ মি. :: ময়মনসিংহে সেহেরি ৪:৩৩ মি. ইফতার ৬:১৬ মি. ::::

পানির অভাবে সেঁচ সঙ্কটে ধুকছে বাংলাদেশ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:১১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম , বিশেষ প্রতিবেদক :

ভারত তিস্তা নদীর পানি সংযোগ খালের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলায় প্রত্যাহার করে চার লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ন্ত্রণ করে সেঁচ দেয়া হচ্ছে ভারতের পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের তিন কোটি ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এদিকে ভারত তিস্তা নদীতে আরো দুইটি সেঁচ খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভাটির বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এদিকে উজানে পানি প্রত্যাহারের বিরূপ প্রভাব পড়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহের যমুনা নদীতে। এই নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। যমুনা সংযুক্ত ২০টি শাখা নদী শুকিয়ে গেছে। নদীর মূলধারা সঙ্কীর্ণ হয়ে পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ক্ষিণধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ, পানিসম্পদ, কৃষি অর্থনীতি এবং নৌপথে যোগাযোগ হুমকীর মুখে পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ভারত তিস্তার পানি সরিয়ে নেয়ায় ভাটির বাংলাদেশ অংশে তিস্তার বুকে জেগে উঠছে অসংখ্য ধুধু বালু চর। ভারত ‘তিস্তা-মহানন্দা মূল ক্যানেল’-এর সাহায্যে তিস্তার প্রবাহ থেকে ১৫০০ কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে সরিয়ে নিচ্ছে। তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানেলের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদাহ জেলার প্রায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ দেয়া হয়। এছাড়া মহানন্দা প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর, ডাউক নগর প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর, নাগর টাঙ্গন প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর এবং তিস্তা-জলঢাকা ক্যানেলের মাধ্যমে ৫৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেঁচ দেয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুস্ক মওসুমে দেশে প্রায় ৩৭ লাখ গভীর ও অগভীর নলকুপ চালু থাকে। এসব সেঁচযন্ত্রের মাধমে বড় বড় নদী, শাখা-উপশাখা-প্রশাখা নদীগুলোর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল, বিল, হাওর থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। নদ-নদী-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেঁচব্যবস্থা ভূগর্ভনির্ভর হয়ে পড়েছে। এছাড়া উজানে অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রন করায় দেশের সেচ ব্যবস্থায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশের মানুষের গৃহস্থালি ও চাষাবাদের জন্য যতটুকু পানির প্রযোজন হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পানি প্রয়োজন হয় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদীর পানির প্রয়োজনীয় খাতগুলো হচ্ছে, সমুদ্রের লোনা পানিকে ঠেকানো, ভূগর্ভস্থ জলাধার পূনর্ভরণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, পরিবেশ এবং চাষাবাদের জমিতে পুষ্টি সরবরাহ করা, নৌপথের নাব্যতা বজায় রাখা, গৃহস্থালি ও কলকারখানার পানির জোগান দেয়া ইত্যাদি।

 

 

ভারত থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার প্রবাহ একসঙ্গে ধারন করে যমুনা নদী বিশাল জলরাশি নিয়ে বির্স্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান। কিন্তু ভারত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে বহুসংখ্যক জলবিদ্যুৎ ও সেঁচ প্রকল্প নির্মাণ করেছে। ফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। ইতোমধ্যে যমুনার পানির প্রবাহ কমে গেছে। আর নদীর বুক ভরাট হয়ে অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠছে। সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে নদীর মূলধারা। নাব্যতা সঙ্কটে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বাঘাবাড়ি বন্দরে আসছে। যমুনা নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।

জানা যায়, হিমালয় পর্বতমালার উৎস থেকে যে কয়টি দেশ পানির বিপুল সম্ভার লাভ করে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব নদীর প্রবাহ সরাসরি বাংলাদেশ পেতে পারে না। ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর প্রায় সবক’টি নদী ও উপনদীতে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ, বাঁধ নির্মাণ এবং সেঁচ খাল খনন করে বিপুল পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তারা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা ও মহানন্দাসহ হিমালয় অঞ্চলের অভিন্ন নদী ও উপনদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ভাটির বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারত ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম উৎস ও প্রদায়ক রাঙ্গানদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করেছে। ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া এর অন্যতম কারন বলে জানা গেছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের অন্যতম উৎস পাগলাদিয়ায় একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। এই বাঁধের মাধ্যমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এজন্য পাগলাদিয়ার পানি বাঁধের ভেতর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অংশে পানির সঙ্কট হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্রের আরেক উৎস লাংপি নদীর উপর একটি বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস রাইডাক নদীতে ভুটান-ভারত যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এই প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর গুরুত্বপূর্ণ উৎস কপিলি নদীকে কেন্দ্র করে ভারত বেশ ক’টি বাঁধ ও রিজার্ভার নির্মাণ করেছে। সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন এই বাঁধ প্রকল্পের লক্ষ্য। এটি নির্মিত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

ভারতের নাগাল্যান্ডে ডয়াং নদীর উপর নির্মিত একটি ড্যাম ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর উৎস উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্তত চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানির প্রবাহে টান পড়ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্রের উপনদী উমিয়ামের পানি সরিয়ে নিয়ে উপক্র নামক নদীতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। পানি প্রত্যাহারের ফলে কার্যত এই অন্যতম উপনদীর পানি থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্র নদে ২৩টি পানি সঞ্চয়াগার নির্মাণ করেছে। প্রতিটি সঞ্চয়াগারের পানি ধারণ ক্ষমতা হবে এক লাখ ৫০ হাজার কিউসেক। এ পানি ভারতের পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে সেচ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আওতায় রয়েছে তিন কোটি ৫০ লাখ হেক্টর জমি।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রকৃতিগত দিক দিয়ে নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বুনিয়াদ। পেশাগত দিক থেকে জীবন-জীবিকার একটি অংশ নির্ভরশীল এ দেশের নদ-নদীর ওপর। এ দেশের কৃষি সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ- এর সবই নদীনির্ভর। অর্থাৎ নদীকে বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন তথা মানুষের জীবন-জীবিকা কল্পনাই করা যায় না। ভারত অভিন্ন নদ-নদীর পানি একতরফা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছরে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে ক্রমাগত পঙ্গু করে দিচ্ছে।

নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিস্তার উজানে ভারত ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রকল্প নির্মাণ করে ফেলেছে। আরো প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় তিস্তার ভাটিতে পানির প্রবাহ একেবারে কমে গেছে, বাড়ছে সঙ্কট। তিস্তায় পানি প্রবাহ কমার কারণে বাংলাদেশ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমার, বুড়ি তিস্তাসহ যমুনা নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। রংপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

 

বা/খ: জই

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/pm7m

নিউজটি শেয়ার করুন

পানির অভাবে সেঁচ সঙ্কটে ধুকছে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৭:১১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

শফিউল আযম , বিশেষ প্রতিবেদক :

ভারত তিস্তা নদীর পানি সংযোগ খালের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ জেলায় প্রত্যাহার করে চার লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ন্ত্রণ করে সেঁচ দেয়া হচ্ছে ভারতের পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের তিন কোটি ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এদিকে ভারত তিস্তা নদীতে আরো দুইটি সেঁচ খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভাটির বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এদিকে উজানে পানি প্রত্যাহারের বিরূপ প্রভাব পড়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহের যমুনা নদীতে। এই নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। যমুনা সংযুক্ত ২০টি শাখা নদী শুকিয়ে গেছে। নদীর মূলধারা সঙ্কীর্ণ হয়ে পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ক্ষিণধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ, পানিসম্পদ, কৃষি অর্থনীতি এবং নৌপথে যোগাযোগ হুমকীর মুখে পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ভারত তিস্তার পানি সরিয়ে নেয়ায় ভাটির বাংলাদেশ অংশে তিস্তার বুকে জেগে উঠছে অসংখ্য ধুধু বালু চর। ভারত ‘তিস্তা-মহানন্দা মূল ক্যানেল’-এর সাহায্যে তিস্তার প্রবাহ থেকে ১৫০০ কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে সরিয়ে নিচ্ছে। তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানেলের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদাহ জেলার প্রায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ দেয়া হয়। এছাড়া মহানন্দা প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর, ডাউক নগর প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর, নাগর টাঙ্গন প্রধান ক্যানেলের মাধ্যমে এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর এবং তিস্তা-জলঢাকা ক্যানেলের মাধ্যমে ৫৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেঁচ দেয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুস্ক মওসুমে দেশে প্রায় ৩৭ লাখ গভীর ও অগভীর নলকুপ চালু থাকে। এসব সেঁচযন্ত্রের মাধমে বড় বড় নদী, শাখা-উপশাখা-প্রশাখা নদীগুলোর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল, বিল, হাওর থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। নদ-নদী-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেঁচব্যবস্থা ভূগর্ভনির্ভর হয়ে পড়েছে। এছাড়া উজানে অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রন করায় দেশের সেচ ব্যবস্থায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশের মানুষের গৃহস্থালি ও চাষাবাদের জন্য যতটুকু পানির প্রযোজন হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পানি প্রয়োজন হয় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদীর পানির প্রয়োজনীয় খাতগুলো হচ্ছে, সমুদ্রের লোনা পানিকে ঠেকানো, ভূগর্ভস্থ জলাধার পূনর্ভরণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, পরিবেশ এবং চাষাবাদের জমিতে পুষ্টি সরবরাহ করা, নৌপথের নাব্যতা বজায় রাখা, গৃহস্থালি ও কলকারখানার পানির জোগান দেয়া ইত্যাদি।

 

 

ভারত থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার প্রবাহ একসঙ্গে ধারন করে যমুনা নদী বিশাল জলরাশি নিয়ে বির্স্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান। কিন্তু ভারত তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে বহুসংখ্যক জলবিদ্যুৎ ও সেঁচ প্রকল্প নির্মাণ করেছে। ফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। ইতোমধ্যে যমুনার পানির প্রবাহ কমে গেছে। আর নদীর বুক ভরাট হয়ে অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠছে। সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে নদীর মূলধারা। নাব্যতা সঙ্কটে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বাঘাবাড়ি বন্দরে আসছে। যমুনা নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।

জানা যায়, হিমালয় পর্বতমালার উৎস থেকে যে কয়টি দেশ পানির বিপুল সম্ভার লাভ করে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব নদীর প্রবাহ সরাসরি বাংলাদেশ পেতে পারে না। ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর প্রায় সবক’টি নদী ও উপনদীতে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ, বাঁধ নির্মাণ এবং সেঁচ খাল খনন করে বিপুল পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তারা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা ও মহানন্দাসহ হিমালয় অঞ্চলের অভিন্ন নদী ও উপনদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে ভাটির বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারত ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম উৎস ও প্রদায়ক রাঙ্গানদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করেছে। ব্রহ্মপুত্রে পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া এর অন্যতম কারন বলে জানা গেছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র নদের অন্যতম উৎস পাগলাদিয়ায় একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। এই বাঁধের মাধ্যমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেঁচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এজন্য পাগলাদিয়ার পানি বাঁধের ভেতর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অংশে পানির সঙ্কট হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্রের আরেক উৎস লাংপি নদীর উপর একটি বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস রাইডাক নদীতে ভুটান-ভারত যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ একটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে। এই প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর গুরুত্বপূর্ণ উৎস কপিলি নদীকে কেন্দ্র করে ভারত বেশ ক’টি বাঁধ ও রিজার্ভার নির্মাণ করেছে। সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন এই বাঁধ প্রকল্পের লক্ষ্য। এটি নির্মিত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।

ভারতের নাগাল্যান্ডে ডয়াং নদীর উপর নির্মিত একটি ড্যাম ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করছে। ব্রহ্মপুত্রের অপর উৎস উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে অন্তত চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করেছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানির প্রবাহে টান পড়ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্রের উপনদী উমিয়ামের পানি সরিয়ে নিয়ে উপক্র নামক নদীতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। পানি প্রত্যাহারের ফলে কার্যত এই অন্যতম উপনদীর পানি থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত ব্রহ্মপুত্র নদে ২৩টি পানি সঞ্চয়াগার নির্মাণ করেছে। প্রতিটি সঞ্চয়াগারের পানি ধারণ ক্ষমতা হবে এক লাখ ৫০ হাজার কিউসেক। এ পানি ভারতের পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে সেচ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আওতায় রয়েছে তিন কোটি ৫০ লাখ হেক্টর জমি।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রকৃতিগত দিক দিয়ে নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বুনিয়াদ। পেশাগত দিক থেকে জীবন-জীবিকার একটি অংশ নির্ভরশীল এ দেশের নদ-নদীর ওপর। এ দেশের কৃষি সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ- এর সবই নদীনির্ভর। অর্থাৎ নদীকে বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন তথা মানুষের জীবন-জীবিকা কল্পনাই করা যায় না। ভারত অভিন্ন নদ-নদীর পানি একতরফা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছরে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে ক্রমাগত পঙ্গু করে দিচ্ছে।

নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিস্তার উজানে ভারত ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রকল্প নির্মাণ করে ফেলেছে। আরো প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় তিস্তার ভাটিতে পানির প্রবাহ একেবারে কমে গেছে, বাড়ছে সঙ্কট। তিস্তায় পানি প্রবাহ কমার কারণে বাংলাদেশ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমার, বুড়ি তিস্তাসহ যমুনা নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। রংপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

 

বা/খ: জই

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/pm7m