ঢাকা ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন আজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের ইতিহাসে আর্থিক অঙ্কে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাশিয়ানসহ সাড়ে ৪ হাজারের অধিক বিদেশি ও বাংলাদেশি মিলিয়ে ২৩ হাজার মানুষ দিন-রাত কাজ করছেন। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা চুল্লি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এর। এছাড়া আরও উপস্থিত থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। ঈশ্বরদীর জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেন্দ্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারাও থাকবেন সেখানে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর বা কমিশনিং প্রক্রিয়ায় এই চুল্লি স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরমাণুবিজ্ঞানীরা এই চুল্লিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন শুরু হচ্ছে, যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণকাজ শেষ হলে রূপপুর কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণকাজ। যদিও প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম ১ হাজার ২০০ ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ এগিয়ে চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ধাপে ধাপে হাজারের অধিক রাশিয়ান নাগরিককে কাজ শেষে বের হতে দেখা যায়। একই সঙ্গে পরবর্তী শিফটে কাজে যোগ দিতে তখন একইভাবে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। প্রকল্পের ভেতরে রাশিয়ান ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রম ঘিরে প্রকল্প এলাকা সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বড় বড় বিলবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছবিও। উদ্বোধনী আয়োজনে পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান নিজেও রূপপুরে অবস্থান করছেন। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়াদি তদারক করছেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকায় রয়েছেন। এসেছেন রাশিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে প্রকল্পের অগ্রগতি ও অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি জানান, আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় দেশ, পাওয়ারফুল দেশ, তারাও হতবাক হয়েছে যে বাংলাদেশ কী করে এই সময়ের মধ্যে এই জায়গায় পৌঁছে গেল।

কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ কত শতাংশ আগাল, সেটা ঐভাবে হিসাব করে বলা যায় না। দুইভাবে হিসাব করি—ফাইন্যান্সিয়াল আর ফিজিক্যাল। আমাদের ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ফাইন্যান্সিয়াল থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, যে সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা, সেই সময় ধরেই আগাচ্ছি।’ ইউরেনিয়াম আনার অগ্রগতি প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যেই আমাদের প্রথম জ্বালানি আসবে।

এ সময় প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ৭০ ভাগ। আর দ্বিতীয় ইউনিটের সঙ্গে সাত মাস এদিক-ওদিক। দুটি ইউনিটের ফাইন্যান্সিয়াল প্রোগ্রেস ৫৩ ভাগ। ইন্ডিভিজুয়ালি প্রথম ইউনিট ৭০ ভাগ আর দ্বিতীয় ইউনিট ৪০ ভাগ। আর ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ফাইন্যান্সিয়াল থেকে বেশি। তিনি বলেন, ‘বুধবার আমাদের নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরের দ্বিতীয় ইউনিটের কনস্ট্রাকশন কাজ উদ্বোধনের পর স্টার্টআপ, এরপর কমিশনিং শুরু করব। এরপর আমরা জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করব। এই কমিশনিংয়ের কাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা। গ্রিডে যাবে ২০২৪ সালে। দ্বিতীয় ইউনিট যাবে ২০২৫ সালে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এখানে ৩০০ মিটারের পর জনগণ বসবাস করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশের আর্থসামাজিক তথা নাগরিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত প্রধানত তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মজুতও আমাদের দেশে সীমিত। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে আমদানিনির্ভর তরল পেট্রোলিয়ামের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই কিরিয়েংকো উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃদপিণ্ড বলে বিবেচিত রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবনীশক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করলে দাঁড়াবে ৮০ বছর।

চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, যা নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে রূপপুর দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করতে প্রকল্প এলাকার আনুষঙ্গিক সব ধরনের নির্মাণকাজ শেষ হতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন আজ

আপডেট সময় : ১০:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের ইতিহাসে আর্থিক অঙ্কে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাশিয়ানসহ সাড়ে ৪ হাজারের অধিক বিদেশি ও বাংলাদেশি মিলিয়ে ২৩ হাজার মানুষ দিন-রাত কাজ করছেন। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা চুল্লি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এর। এছাড়া আরও উপস্থিত থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। ঈশ্বরদীর জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেন্দ্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারাও থাকবেন সেখানে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর বা কমিশনিং প্রক্রিয়ায় এই চুল্লি স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরমাণুবিজ্ঞানীরা এই চুল্লিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলে অভিহিত করে থাকেন। প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন শুরু হচ্ছে, যা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণকাজ শেষ হলে রূপপুর কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণকাজ। যদিও প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম ১ হাজার ২০০ ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ এগিয়ে চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ধাপে ধাপে হাজারের অধিক রাশিয়ান নাগরিককে কাজ শেষে বের হতে দেখা যায়। একই সঙ্গে পরবর্তী শিফটে কাজে যোগ দিতে তখন একইভাবে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। প্রকল্পের ভেতরে রাশিয়ান ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন কার্যক্রম ঘিরে প্রকল্প এলাকা সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বড় বড় বিলবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছবিও। উদ্বোধনী আয়োজনে পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান নিজেও রূপপুরে অবস্থান করছেন। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়াদি তদারক করছেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকায় রয়েছেন। এসেছেন রাশিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে প্রকল্পের অগ্রগতি ও অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি জানান, আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, অনেক বড় বড় দেশ, পাওয়ারফুল দেশ, তারাও হতবাক হয়েছে যে বাংলাদেশ কী করে এই সময়ের মধ্যে এই জায়গায় পৌঁছে গেল।

কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ কত শতাংশ আগাল, সেটা ঐভাবে হিসাব করে বলা যায় না। দুইভাবে হিসাব করি—ফাইন্যান্সিয়াল আর ফিজিক্যাল। আমাদের ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ফাইন্যান্সিয়াল থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, যে সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা, সেই সময় ধরেই আগাচ্ছি।’ ইউরেনিয়াম আনার অগ্রগতি প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যেই আমাদের প্রথম জ্বালানি আসবে।

এ সময় প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ৭০ ভাগ। আর দ্বিতীয় ইউনিটের সঙ্গে সাত মাস এদিক-ওদিক। দুটি ইউনিটের ফাইন্যান্সিয়াল প্রোগ্রেস ৫৩ ভাগ। ইন্ডিভিজুয়ালি প্রথম ইউনিট ৭০ ভাগ আর দ্বিতীয় ইউনিট ৪০ ভাগ। আর ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ফাইন্যান্সিয়াল থেকে বেশি। তিনি বলেন, ‘বুধবার আমাদের নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরের দ্বিতীয় ইউনিটের কনস্ট্রাকশন কাজ উদ্বোধনের পর স্টার্টআপ, এরপর কমিশনিং শুরু করব। এরপর আমরা জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করব। এই কমিশনিংয়ের কাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা। গ্রিডে যাবে ২০২৪ সালে। দ্বিতীয় ইউনিট যাবে ২০২৫ সালে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এখানে ৩০০ মিটারের পর জনগণ বসবাস করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করলে দেশের আর্থসামাজিক তথা নাগরিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত প্রধানত তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মজুতও আমাদের দেশে সীমিত। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে আমদানিনির্ভর তরল পেট্রোলিয়ামের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই কিরিয়েংকো উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃদপিণ্ড বলে বিবেচিত রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবনীশক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করলে দাঁড়াবে ৮০ বছর।

চুক্তি অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, যা নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে রূপপুর দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করতে প্রকল্প এলাকার আনুষঙ্গিক সব ধরনের নির্মাণকাজ শেষ হতে হবে।