ঢাকা ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশে বড় অর্জনগুলো আওয়ামী লীগের হাত ধরেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মহৎ এবং বৃহৎ অর্জনসমূহ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে নাড়া দিতে চাই।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে। আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চূলায় রান্না হয়। আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। এই সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

দেশে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ-বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামী বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন।

যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগের স্থাপনের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু নির্মাণ। বিগত ১৪ বছরে আমরা পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্র্নিমাণ করেছি। এছাড়া, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

যে অঙ্গীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী

চলতি বছরের শেষে অথবা পরের বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাবো। তবে যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাবো।

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলতো। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করত, তেমনি মানুষের বাড়িতে চুলা জ্বলতো না। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এমনি এক অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি। জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর সেই ইশতেহারের আলোকে আমরা আশু করণীয়, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

জনগণকে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ায় স্বস্তি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি। রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে টিকিয়ে রাখা।

একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়, তা কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে (২০০৫-০৬) মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছি। ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়? কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তা তুলে ধরতে চাই। জোট সরকারের শেষ অর্থবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০০৫-০৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪-শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্রতা কমেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৫-০৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪-শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

সারাদেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি। সব ঘর আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ীমূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিল। কিন্তু আপনাদের সহায়তায় এবং আমাদের সরকারের সময়মত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা খুব ভালোভাবেই সেই মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছি। তবে মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কয়েকটি পণ্য বেশি দামে কিনে স্বল্পদামে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি। ১ কোটি পরিবার টিসিবির ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি ক্রয় করতে পারছেন।

দেশ অনেক এগিয়েছে, আরও এগিয়ে নিতে হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এ দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে ভাষণ শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশে বড় অর্জনগুলো আওয়ামী লীগের হাত ধরেই: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:৪২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মহৎ এবং বৃহৎ অর্জনসমূহ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে নাড়া দিতে চাই।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে। আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চূলায় রান্না হয়। আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। এই সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

দেশে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ-বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামী বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন।

যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগের স্থাপনের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু নির্মাণ। বিগত ১৪ বছরে আমরা পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্র্নিমাণ করেছি। এছাড়া, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

যে অঙ্গীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী

চলতি বছরের শেষে অথবা পরের বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রেও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাবো। তবে যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাবো।

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলতো। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করত, তেমনি মানুষের বাড়িতে চুলা জ্বলতো না। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এমনি এক অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি। জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর সেই ইশতেহারের আলোকে আমরা আশু করণীয়, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

জনগণকে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ায় স্বস্তি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি। রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে টিকিয়ে রাখা।

একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়, তা কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে (২০০৫-০৬) মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছি। ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়? কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তা তুলে ধরতে চাই। জোট সরকারের শেষ অর্থবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০০৫-০৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪-শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্রতা কমেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৫-০৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪-শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

সারাদেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি। সব ঘর আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ীমূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিল। কিন্তু আপনাদের সহায়তায় এবং আমাদের সরকারের সময়মত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা খুব ভালোভাবেই সেই মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছি। তবে মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কয়েকটি পণ্য বেশি দামে কিনে স্বল্পদামে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি। ১ কোটি পরিবার টিসিবির ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি ক্রয় করতে পারছেন।

দেশ অনেক এগিয়েছে, আরও এগিয়ে নিতে হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এ দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে ভাষণ শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।