ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তিস্তার তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন

আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৪২:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজারহাটে রাক্ষুসে তিস্তার তীব্র ভাঙনে নদীতে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি,গাছপালা ও বসত ভিটাসহ নানা মূল্যবান সম্পদ। হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে উপজেলার বুড়িরহাট স্পার বাঁধসহ হাট-বাজার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ,মন্দির ও সহস্রাধিক বাড়িঘর। তবে ভাঙন ঠেকাতে শুধুমাত্র একটি স্থানে কুড়িগ্রাম পাউবো জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বালু সংগ্রহ শুরু করলেও অন্যান্য স্থানে ভাঙন রোধে বরাদ্দ না থাকায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

সরেজমিনে জানা গেছে, এই এলাকায় পক্ষকাল ব্যাপী প্রতি রাতে ভারী বর্ষণ হয়ে আসছে। এছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিন ধরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, রামহরী, তৈয়বখাঁ, ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের বড়দরগা খিতাবখাঁ, বুড়িরহাট এবং নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। এতে করে প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি,গাছপালা ও ভিটেমাটি। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার শতশত মানুষ। ভাঙনে ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে চতুরা,খিতাবখাঁ ও কালিরহাট গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটে। ফসলী জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। গত বছরের বন্যায় নদী গর্ভে অর্ধাংশ বিলীন হওয়া বুড়িরহাট স্পার বাঁধটির বাকী অংশও দেবে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের মানুষ জন।

অপরদিকে, তীব্র নদী ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, তৈয়বখাঁ এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাবখাঁ, বুড়িরহাটসহ ৮টি গ্রামের সহস্রাধিক বসতভিটাসহ তৈয়বখাঁ বাজার, কালিরহাট বাজার, বুড়িরহাট বাজার, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কালিরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি ইউনিয়নের ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ নানা স্থাপনা ও শতশত একর ফসলি জমি হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর তিস্তা নদী ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িযালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত এক যুগে রাক্ষুসে তিস্তা কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচ হাজারেরও বেশী পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি।

চতুরা গ্রামের সদ্য বসত ভিটা হারানো নিবারণ চন্দ্র (৫০) বলেন, কোনটে যামো,কোনটে থাকমো কিছুই চিন্তা করি কুল পাংনা।

নমিতা রানী (৬০) বলেন, নদী ভাংগা গড়ার সাথে হামার জীবন মিশে গেছে,তবে এরআগে অনেকবার ভাঙছে তখন অন্যটে বাড়ি করার জায়গাও আছিলো,সামর্থও আছিলো। কিন্তু এবারে আর কোন জায়গাও নাই,সামর্থও নাই।

একই গ্রামের গ্রামে নদী ভাঙনের মুখে বসতভিটায় থাকা মিলন মিয়া (৪৫) বলেন,“আমরা ত্রাণ চাই না,দাবি একটাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।

চরখিতাবখাঁ গ্রামের ইউপি সদস্য মামুন মন্ডল বলেন, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে,জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত না হলে নদীতে পানি কমার সময় ভাঙন আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন কুড়িগ্রাম-২আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার হামিদুল হক খন্দকার ও রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী বলেন,বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন,“ভাঙন কবলিত কালিরহাটে ২’শ মিটার স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ পেয়েছি এবং অদ্য কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরেজমিন পরিদর্শনের পর ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

তিস্তার তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন

আপডেট সময় : ০৬:৪২:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

রাজারহাটে রাক্ষুসে তিস্তার তীব্র ভাঙনে নদীতে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি,গাছপালা ও বসত ভিটাসহ নানা মূল্যবান সম্পদ। হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে উপজেলার বুড়িরহাট স্পার বাঁধসহ হাট-বাজার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ,মন্দির ও সহস্রাধিক বাড়িঘর। তবে ভাঙন ঠেকাতে শুধুমাত্র একটি স্থানে কুড়িগ্রাম পাউবো জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বালু সংগ্রহ শুরু করলেও অন্যান্য স্থানে ভাঙন রোধে বরাদ্দ না থাকায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

সরেজমিনে জানা গেছে, এই এলাকায় পক্ষকাল ব্যাপী প্রতি রাতে ভারী বর্ষণ হয়ে আসছে। এছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিন ধরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, রামহরী, তৈয়বখাঁ, ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের বড়দরগা খিতাবখাঁ, বুড়িরহাট এবং নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। এতে করে প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি,গাছপালা ও ভিটেমাটি। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার শতশত মানুষ। ভাঙনে ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে চতুরা,খিতাবখাঁ ও কালিরহাট গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটে। ফসলী জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। গত বছরের বন্যায় নদী গর্ভে অর্ধাংশ বিলীন হওয়া বুড়িরহাট স্পার বাঁধটির বাকী অংশও দেবে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের মানুষ জন।

অপরদিকে, তীব্র নদী ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, তৈয়বখাঁ এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাবখাঁ, বুড়িরহাটসহ ৮টি গ্রামের সহস্রাধিক বসতভিটাসহ তৈয়বখাঁ বাজার, কালিরহাট বাজার, বুড়িরহাট বাজার, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কালিরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি ইউনিয়নের ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ নানা স্থাপনা ও শতশত একর ফসলি জমি হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর তিস্তা নদী ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িযালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত এক যুগে রাক্ষুসে তিস্তা কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচ হাজারেরও বেশী পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি।

চতুরা গ্রামের সদ্য বসত ভিটা হারানো নিবারণ চন্দ্র (৫০) বলেন, কোনটে যামো,কোনটে থাকমো কিছুই চিন্তা করি কুল পাংনা।

নমিতা রানী (৬০) বলেন, নদী ভাংগা গড়ার সাথে হামার জীবন মিশে গেছে,তবে এরআগে অনেকবার ভাঙছে তখন অন্যটে বাড়ি করার জায়গাও আছিলো,সামর্থও আছিলো। কিন্তু এবারে আর কোন জায়গাও নাই,সামর্থও নাই।

একই গ্রামের গ্রামে নদী ভাঙনের মুখে বসতভিটায় থাকা মিলন মিয়া (৪৫) বলেন,“আমরা ত্রাণ চাই না,দাবি একটাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।

চরখিতাবখাঁ গ্রামের ইউপি সদস্য মামুন মন্ডল বলেন, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে,জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত না হলে নদীতে পানি কমার সময় ভাঙন আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন কুড়িগ্রাম-২আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার হামিদুল হক খন্দকার ও রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী বলেন,বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন,“ভাঙন কবলিত কালিরহাটে ২’শ মিটার স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ পেয়েছি এবং অদ্য কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরেজমিন পরিদর্শনের পর ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান।