ঢাকা ০৯:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তাড়াশ খাদ্য গুদামে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ : তদন্ত কমিটি গঠন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি //

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী ও খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমানের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীন আমন সংগ্রহে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দুই বছর পর অভ্যন্তরীন অডিটে বিষয়টি ধরা পরায়, ইতিমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । ওই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম।

তবে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পরপরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন ঘটনার সাথে জড়িতরা সহ খাদ্য ব্যবসায়ী একাধিক চক্র।

তাড়াশ খাদ্য গুদাম সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয় ৪শ’ ৭৪ মেট্রিকটন। সে অনুযায়ী যথারীতি লক্ষমাত্রা অনুসারে আমন সংগ্রহ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গোল বাধে আরো অতিরিক্ত দেড়’শ টন আমন সংগ্রহ নিয়ে।

সূত্র আরো জানায়, সে সময়ে তাড়াশ খাদ্য গুদামে কর্মরত ( বর্তমানে পদ অবনমন হয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার খাদ্য গুদামে খাদ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমান, নিরাপত্তা কর্মী ফারুক মোল্লা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী ও স্থানীয় একটি খাদ্য ব্যবসায়ীচক্র মিলে বিধি বহির্ভূতভাবে আরো অতিরিক্ত ৫০ জন কৃষকের বিপরীতে দেড়শ’ টন আমন সংগ্রহ দেখান। কিন্তু বাস্তবে তারা কোন ধান সংগ্রহ না করেই প্রতি টন ২৭ হাজার টাকা দরে মোট ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে তুলে নিয়ে আত্মসাত করে।

এ ছাড়াও তাড়াশ খাদ্য গুদামের অন্যান্য বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তির কারণে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমান কে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত চলমান রয়েছে।

এরই মাঝে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত চলা অভ্যন্তরীণ অডিটে আলোচিত দেড়শ’ টন আমন সংগ্রহের ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসে। এ অডিট আপত্তির ফলে খাদ্য অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান কে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির অপর তিন সদস্য হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ নিয়ামুল হক, রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক শিহাব উদ্দিন ও নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ইসরাফিল হোসেন। ওই তদন্ত কমিটি ১১ মে তাড়াশ খাদ্য গুদামে তদন্ত করে ঘটনা সত্যতা খুঁজে পান।

জেলা ও উপজেলা খাদ্য গুদামের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী অতিরিক্ত দেড়শ টন আমনের পূণর্ভরন বিলের জন্য চিঠি দিলেও তিনি ওই ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর করেননি। ইয়াসিন আলীর দাবি, তিনি চিঠি দিয়ে ভুল করলেও চেকে কোনো স্বাক্ষর করেননি। তবে এতো মোটা অংকের বিলের একটি চেক বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার যাচাই ছাড়াই টাকা ছাড় করলো এটাও এক প্রশ্ন তার কাছে।

এ প্রসঙ্গে সরেজমিনে তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে পুরাতন বিষয় বলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

এ দিকে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তাড়াশ শাখায় ওই ৫০ জন কৃষকের নামে করা ব্যাংক একাউন্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে একটি চক্র সাক্ষর জাল করে করা হয় এবং তাদের অজান্তে তাদের সাক্ষর জাল করে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়। এ বিষয়ে তদন্ত করলেই আসল চিত্র বের হয়ে আসবে। তদন্ত কমিটির প্রধান মুহাম্মদ তানভীর রহমানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য মোঃ নিয়ামুল হক বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

এ দিকে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে যাওয়ার পরপরই এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চলছে। সাংবাদিক সহ প্রশাসন কে ম্যানেজ করতে তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমানের কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রতিবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

তাড়াশ খাদ্য গুদামে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ : তদন্ত কমিটি গঠন

আপডেট সময় : ১২:৫২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

// তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি //

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী ও খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমানের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীন আমন সংগ্রহে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দুই বছর পর অভ্যন্তরীন অডিটে বিষয়টি ধরা পরায়, ইতিমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । ওই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম।

তবে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পরপরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন ঘটনার সাথে জড়িতরা সহ খাদ্য ব্যবসায়ী একাধিক চক্র।

তাড়াশ খাদ্য গুদাম সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয় ৪শ’ ৭৪ মেট্রিকটন। সে অনুযায়ী যথারীতি লক্ষমাত্রা অনুসারে আমন সংগ্রহ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গোল বাধে আরো অতিরিক্ত দেড়’শ টন আমন সংগ্রহ নিয়ে।

সূত্র আরো জানায়, সে সময়ে তাড়াশ খাদ্য গুদামে কর্মরত ( বর্তমানে পদ অবনমন হয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার খাদ্য গুদামে খাদ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমান, নিরাপত্তা কর্মী ফারুক মোল্লা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী ও স্থানীয় একটি খাদ্য ব্যবসায়ীচক্র মিলে বিধি বহির্ভূতভাবে আরো অতিরিক্ত ৫০ জন কৃষকের বিপরীতে দেড়শ’ টন আমন সংগ্রহ দেখান। কিন্তু বাস্তবে তারা কোন ধান সংগ্রহ না করেই প্রতি টন ২৭ হাজার টাকা দরে মোট ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে তুলে নিয়ে আত্মসাত করে।

এ ছাড়াও তাড়াশ খাদ্য গুদামের অন্যান্য বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তির কারণে ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমান কে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত চলমান রয়েছে।

এরই মাঝে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত চলা অভ্যন্তরীণ অডিটে আলোচিত দেড়শ’ টন আমন সংগ্রহের ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসে। এ অডিট আপত্তির ফলে খাদ্য অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান কে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির অপর তিন সদস্য হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ নিয়ামুল হক, রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক শিহাব উদ্দিন ও নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ইসরাফিল হোসেন। ওই তদন্ত কমিটি ১১ মে তাড়াশ খাদ্য গুদামে তদন্ত করে ঘটনা সত্যতা খুঁজে পান।

জেলা ও উপজেলা খাদ্য গুদামের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইয়াসিন আলী অতিরিক্ত দেড়শ টন আমনের পূণর্ভরন বিলের জন্য চিঠি দিলেও তিনি ওই ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর করেননি। ইয়াসিন আলীর দাবি, তিনি চিঠি দিয়ে ভুল করলেও চেকে কোনো স্বাক্ষর করেননি। তবে এতো মোটা অংকের বিলের একটি চেক বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার যাচাই ছাড়াই টাকা ছাড় করলো এটাও এক প্রশ্ন তার কাছে।

এ প্রসঙ্গে সরেজমিনে তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে পুরাতন বিষয় বলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

এ দিকে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তাড়াশ শাখায় ওই ৫০ জন কৃষকের নামে করা ব্যাংক একাউন্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে একটি চক্র সাক্ষর জাল করে করা হয় এবং তাদের অজান্তে তাদের সাক্ষর জাল করে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়। এ বিষয়ে তদন্ত করলেই আসল চিত্র বের হয়ে আসবে। তদন্ত কমিটির প্রধান মুহাম্মদ তানভীর রহমানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য মোঃ নিয়ামুল হক বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

এ দিকে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে যাওয়ার পরপরই এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চলছে। সাংবাদিক সহ প্রশাসন কে ম্যানেজ করতে তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মোঃ কাওছার রহমানের কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রতিবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।