ঢাকা ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঢাকায় ২৫ বছর সংরক্ষণে এক কবর দেড় কোটি টাকা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৯৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কবরস্থান আছে মাত্র ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে ছয়টি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কবরস্থানে মরদেহ দাফনে নতুন নীতিমালা জারি করেছে ডিএনসিসি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কবর সংরক্ষণ করা যাবে ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। এজন্য একটি কবর সংরক্ষণে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। যদিও আগে ৬ থেকে ১১ লাখ টাকার মধ্যে একই সময় পর্যন্ত কবর সংরক্ষণ করা যেতো।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থান সমূহের নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়। ডিএনসিসির সচিব (অ.দা.) মোহাম্মদ মাহে আলমের সই করা এই নীতিমালা ওই দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কবর সংরক্ষণে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতেই ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ডিএনসিসির সমাজ কল্যাণ বিভাগ সূত্র জানায়, আগে ১০, ১৫, ২০, ২৫ বছর পর্যন্ত কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। এখন নতুন নীতিমালায় ১৫ বছর বা ২৫ বছর মেয়াদি কবর সংরক্ষণ করতে হবে। আগে বনানী কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণে ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। একই কবরস্থানে আগে ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ৪৫ লাখ টাকা ছিল। এখন এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

একইভাবে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২৫ বছর কবর ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা এক কোটি টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা বেড়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের কবর সংরক্ষণ ফি ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের ফি ৪৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা সংরক্ষণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মিরপুর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ২০ লাখ করা হয়েছে।

এছাড়া রায়ের বাজার কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ১০ লাখ করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে ১৫ লাখ করা হয়েছে।

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কবরের জন্য স্থায়ী জায়গা কেনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয় এবং এখনও সেই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এখন সরকারি ফিসহ ঢাকার কবরস্থানে মরদেহ দাফন করতে খরচ হয় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। সাধারণত, এই কবরগুলো এক থেকে দেড় বছর স্থায়ী হয়।

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় তুলনামূলক ধনীরা বাস করেন। তাদের পরিবারের কেউ মারা গেলে তারা সবার কবরই সংরক্ষণ করতে চায়। এ সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কবর বিষয়ক অন্যান্য নিয়ম

নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, এককালীন সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে। তবে আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোনো বৈধ উত্তরসূরি, শুভাকাঙ্ক্ষী ১৫/২৫ বছরের অনুমোদিত সংরক্ষণ মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার কবর সংরক্ষণে আগ্রহী হলে ইতোপূর্বে অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। তার আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হলে (১৫/২৫ বছরের) নির্ধারিত নবায়ন ফি পরিশোধ সাপেক্ষে সংরক্ষণের মেয়াদ নবায়ন করা যাবে।

সংরক্ষিত প্রতিটি কবরের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার পরিমাণ ৮’-০” x ৪’-০” এর অতিরিক্ত হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কবর পাকা করার ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত জায়গার বেশি জমি ব্যবহার করা যাবে না। কবরের উচ্চতা হবে ছাদবিহীন অনধিক ৩’-০”।

এই নীতিমালার আওতায় সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ বনানী কবরস্থানের জন্য ৫০ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য কবরস্থানসমূহের জন্য ৩০ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সংরক্ষিত কবরের উপর দাফনকৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, স্বামী,স্ত্রী, পিতা-মাতা, সহোদর-সহোদরা ব্যতীত অন্য কাউকে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না। পুনঃকবরের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরম পূরণ পূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। যখনই পুনঃকবর দেওয়া হোক না কেন, যে সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়া হবে তার (সংরক্ষিত কবরের) পূর্বের মেয়াদ বহাল থাকবে। মেয়াদি কবরের উপর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের দুই বছরের মধ্যে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঢাকায় ২৫ বছর সংরক্ষণে এক কবর দেড় কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০৩:৪২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কবরস্থান আছে মাত্র ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে ছয়টি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কবরস্থানে মরদেহ দাফনে নতুন নীতিমালা জারি করেছে ডিএনসিসি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কবর সংরক্ষণ করা যাবে ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। এজন্য একটি কবর সংরক্ষণে এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। যদিও আগে ৬ থেকে ১১ লাখ টাকার মধ্যে একই সময় পর্যন্ত কবর সংরক্ষণ করা যেতো।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থান সমূহের নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়। ডিএনসিসির সচিব (অ.দা.) মোহাম্মদ মাহে আলমের সই করা এই নীতিমালা ওই দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কবর সংরক্ষণে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতেই ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ডিএনসিসির সমাজ কল্যাণ বিভাগ সূত্র জানায়, আগে ১০, ১৫, ২০, ২৫ বছর পর্যন্ত কবর সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। এখন নতুন নীতিমালায় ১৫ বছর বা ২৫ বছর মেয়াদি কবর সংরক্ষণ করতে হবে। আগে বনানী কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণে ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। একই কবরস্থানে আগে ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ৪৫ লাখ টাকা ছিল। এখন এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

একইভাবে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২৫ বছর কবর ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা এক কোটি টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা বেড়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের কবর সংরক্ষণ ফি ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ২৪ লাখ, এখন ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের ফি ৪৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা সংরক্ষণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মিরপুর কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ২০ লাখ করা হয়েছে।

এছাড়া রায়ের বাজার কবরস্থানে আগে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ৬ লাখ, এখন তা ১০ লাখ করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ ফি ছিল ১১ লাখ, এখন তা বাড়িয়ে ১৫ লাখ করা হয়েছে।

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কবরের জন্য স্থায়ী জায়গা কেনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয় এবং এখনও সেই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এখন সরকারি ফিসহ ঢাকার কবরস্থানে মরদেহ দাফন করতে খরচ হয় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। সাধারণত, এই কবরগুলো এক থেকে দেড় বছর স্থায়ী হয়।

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় তুলনামূলক ধনীরা বাস করেন। তাদের পরিবারের কেউ মারা গেলে তারা সবার কবরই সংরক্ষণ করতে চায়। এ সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কবর বিষয়ক অন্যান্য নিয়ম

নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, এককালীন সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে। তবে আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোনো বৈধ উত্তরসূরি, শুভাকাঙ্ক্ষী ১৫/২৫ বছরের অনুমোদিত সংরক্ষণ মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার কবর সংরক্ষণে আগ্রহী হলে ইতোপূর্বে অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। তার আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হলে (১৫/২৫ বছরের) নির্ধারিত নবায়ন ফি পরিশোধ সাপেক্ষে সংরক্ষণের মেয়াদ নবায়ন করা যাবে।

সংরক্ষিত প্রতিটি কবরের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার পরিমাণ ৮’-০” x ৪’-০” এর অতিরিক্ত হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কবর পাকা করার ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত জায়গার বেশি জমি ব্যবহার করা যাবে না। কবরের উচ্চতা হবে ছাদবিহীন অনধিক ৩’-০”।

এই নীতিমালার আওতায় সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ বনানী কবরস্থানের জন্য ৫০ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য কবরস্থানসমূহের জন্য ৩০ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সংরক্ষিত কবরের উপর দাফনকৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, স্বামী,স্ত্রী, পিতা-মাতা, সহোদর-সহোদরা ব্যতীত অন্য কাউকে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না। পুনঃকবরের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরম পূরণ পূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। যখনই পুনঃকবর দেওয়া হোক না কেন, যে সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়া হবে তার (সংরক্ষিত কবরের) পূর্বের মেয়াদ বহাল থাকবে। মেয়াদি কবরের উপর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের দুই বছরের মধ্যে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না।