ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জমিসহ পাঁকা ঘর বদলে দিলো ওদের জীবন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৫৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি :

পৌর শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার পিচঢালা পথ পেরোলে দরবেশ মেছের মাঝির (রা.) পূণ্যভূমি বানারীপাড়া উপজেলার আলতা গ্রামে আশ্রয়ণে সারি সারি সেমি পাঁকা রঙিন ঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সেমি পাঁকা এ ঘরগুলোর টিনের চালা যেন ‘লাল-সবুজের’ পতাকা। এর এক পাশে রয়েছে সন্ধ্যা নদীর শাখা বৃহৎ আকারের খাল আর অপর পাশে পিচঢালা পথ। খালের তীরে বাড়িগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল-ফলের বাগান। রয়েছে নানারকম শাক-সবজির সবুজের সমারোহ। রঙিন টিনের আধাপাঁকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন এক দল নারী-পুরুষ। খাল ও সড়কের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১২৩।

জনসংখ্যার হিসাবে এখানে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষের বসতি। শুরুতে মাটির ভিটায় কাঠ ও বাঁশের বেড়া আর ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ১০টি ঘরে বসবাস শুরু হলেও এখন এখানে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১২৩ ঘরেই শান্তির বসবাস তাদের। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। এখানকার অর্ধশত ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

২০ মার্চ সোমবার বসন্তের স্নিগ্ধ সকালে সরেজমিনে এ আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, মৃদুমন্দ বাতাসে খালের পাড়ে ঘরের আঙিনার গাছে ঢেঁড়শ ও মরিচের নাচন। পাশের মাচায় লকলকিয়ে বাড়ছে সিম আর লাউ, নিচের গাছে ঝুলছে ছোট ছোট বেগুন ও লাল-সবুজ টমেটো। রয়েছে পেপে ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা সবজি। গাছে গাছে আমের মুকুল জানান দিচ্ছে শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমন। নারকেল, সুপারী, আমড়া, চিনা বাদাম, পেয়ারা ও মাল্টাসহ নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ পল্লীকে সমৃদ্ধ করছে। এর পাশেই সুবাস ছড়াচ্ছে গাছের বাহারী রঙিন ফুল। রয়েছে হাস-মুরগি আর গবাদী পশুর খামার। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল।

পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের খামার আর নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। আবার কেউবা ব্যস্ত কাগজের মোড়ক (ঠোঙ্গা) তৈরী ও সেলাইয়ের কাজে। ক্ষুদ্র দোকানও ঘরে তুলেছেন কেউ কেউ। এক কথায় ছোট পরিসরে আদর্শ রঙিন ছিমছাম সারি সারি ঘর। আর সেই সুখনিলয়ের আঙিনায় সবজি খেতে কাজ করছিলেন শেফালী মন্ডল (৭০) নামের এক বিধবা বৃদ্ধা। এক পর্যায় তিনি ঘরের বারান্দায় কাগজের মোড়ক তৈরী করতে বসেন। ১৫ বছর আগে স্বামী জ্ঞানেন্দ্রনাথ মন্ডলের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে দিলীপকে নিয়ে তিনি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা থেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে বানারীপাড়ায় আসেন। পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডে কুন্ডু বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে মা-ছেলে মিলে কাগজের মোড়ক তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জমিসহ সুন্দর পাকা ঘর করে দেওয়ায় মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন তিনি।

আরেক বাসিন্দা শাহীন শিকদারের স্ত্রী সাথী (৩২) জানান, এর আগে তারা পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডে ভাড়া থাকতেন। মনোরম পরিবেশে জমিসহ রঙিন পাকা ঘর পেয়ে তারা আবেগ আপ্লুত। শহিদ খলিফার স্ত্রী ঝুমুর (৩০) জানান, এর আগে তারা পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডে বসবাস করতেন। পিঠা বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় তারা পিরোজপুরের পাড়েরহাট থেকে এখানে পাড়ি জমান। প্রমনেন্দ হালদার (৭০) জানান, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রী। তিনি আগে বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মাছরং গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি জানান, এখানের পরিবেশ অনেক ভালো, শুধু জমিসহ ঘরই নয় ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগ, রান্না ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমাদের জীবনকে মধুময় করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

আগে সেবা প্রদানের এ আশ্রয়ন প্রকল্প সারা বিশ্বে ‘অর্ন্তভূক্তিমূলক  শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা  পেয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে  প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের জমিসহ এই পাঁকা ঘর অনাবিল হাঁসি ফুঁটিয়েছে অসহায় মানুষের মুখে। আশ্রয়ণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বানারীপাড়ার  সন্ধ্যা ও এর শাখা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে আশ্রয়নে ২ শতক জমিসহ সেমি পাঁকা ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহহীন-ভূমিহীনরা জমিসহ স্বপ্নের এ পাঁকা ঘর পাওয়ায় এই অসহায় মানুষগুলোর জীবন বদলে গেছে। এই মানুষগুলোর একসময় ছিলোনা নিজস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। তারা মানবেতর জীবনযাপন করতেন।  প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান ।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি  প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২২ মার্চ বানারীপাড়া  উপজেলাকে  শতভাগ ভূমি ও গৃহহীন  মুুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। উপকারভোগীসহ বানারীপাড়াবাসীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুুয়ালি এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমূূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য বানারীপাড়াবাসী এখন উন্মূখ হয়ে আছে।

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন  তন্বী  বলেন, ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবেনা’- মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বানারীপাড়া উপজেলা প্রশাসন। বানারীপাড়ায় সদর ইউনিয়নের আলতার এ আশ্রয়ণসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট ৩৮০টি পরিবারের জন্য সেমি পাঁঁকা ঘর নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব আশ্রয়ণে বসবাসকারী উপকারভোগীদের জীবনমান আমূল বদলে গেছে।  আগামী জুন মাসে বানারীপাড়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করার মানসে কাজ চলছে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের মাধ্যমে পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ উপজেলার বাইশারী, সলিয়াবাকপুর ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে নির্মিত জমিসহ আরও ১৪২টি সেমি পাঁকা ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করবেন বলেও জানান তিনি।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

জমিসহ পাঁকা ঘর বদলে দিলো ওদের জীবন

আপডেট সময় : ১০:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি :

পৌর শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার পিচঢালা পথ পেরোলে দরবেশ মেছের মাঝির (রা.) পূণ্যভূমি বানারীপাড়া উপজেলার আলতা গ্রামে আশ্রয়ণে সারি সারি সেমি পাঁকা রঙিন ঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সেমি পাঁকা এ ঘরগুলোর টিনের চালা যেন ‘লাল-সবুজের’ পতাকা। এর এক পাশে রয়েছে সন্ধ্যা নদীর শাখা বৃহৎ আকারের খাল আর অপর পাশে পিচঢালা পথ। খালের তীরে বাড়িগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল-ফলের বাগান। রয়েছে নানারকম শাক-সবজির সবুজের সমারোহ। রঙিন টিনের আধাপাঁকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন এক দল নারী-পুরুষ। খাল ও সড়কের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১২৩।

জনসংখ্যার হিসাবে এখানে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষের বসতি। শুরুতে মাটির ভিটায় কাঠ ও বাঁশের বেড়া আর ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ১০টি ঘরে বসবাস শুরু হলেও এখন এখানে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১২৩ ঘরেই শান্তির বসবাস তাদের। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। এখানকার অর্ধশত ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

২০ মার্চ সোমবার বসন্তের স্নিগ্ধ সকালে সরেজমিনে এ আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, মৃদুমন্দ বাতাসে খালের পাড়ে ঘরের আঙিনার গাছে ঢেঁড়শ ও মরিচের নাচন। পাশের মাচায় লকলকিয়ে বাড়ছে সিম আর লাউ, নিচের গাছে ঝুলছে ছোট ছোট বেগুন ও লাল-সবুজ টমেটো। রয়েছে পেপে ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা সবজি। গাছে গাছে আমের মুকুল জানান দিচ্ছে শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমন। নারকেল, সুপারী, আমড়া, চিনা বাদাম, পেয়ারা ও মাল্টাসহ নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ পল্লীকে সমৃদ্ধ করছে। এর পাশেই সুবাস ছড়াচ্ছে গাছের বাহারী রঙিন ফুল। রয়েছে হাস-মুরগি আর গবাদী পশুর খামার। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল।

পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের খামার আর নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। আবার কেউবা ব্যস্ত কাগজের মোড়ক (ঠোঙ্গা) তৈরী ও সেলাইয়ের কাজে। ক্ষুদ্র দোকানও ঘরে তুলেছেন কেউ কেউ। এক কথায় ছোট পরিসরে আদর্শ রঙিন ছিমছাম সারি সারি ঘর। আর সেই সুখনিলয়ের আঙিনায় সবজি খেতে কাজ করছিলেন শেফালী মন্ডল (৭০) নামের এক বিধবা বৃদ্ধা। এক পর্যায় তিনি ঘরের বারান্দায় কাগজের মোড়ক তৈরী করতে বসেন। ১৫ বছর আগে স্বামী জ্ঞানেন্দ্রনাথ মন্ডলের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে দিলীপকে নিয়ে তিনি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা থেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে বানারীপাড়ায় আসেন। পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডে কুন্ডু বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে মা-ছেলে মিলে কাগজের মোড়ক তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জমিসহ সুন্দর পাকা ঘর করে দেওয়ায় মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন তিনি।

আরেক বাসিন্দা শাহীন শিকদারের স্ত্রী সাথী (৩২) জানান, এর আগে তারা পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডে ভাড়া থাকতেন। মনোরম পরিবেশে জমিসহ রঙিন পাকা ঘর পেয়ে তারা আবেগ আপ্লুত। শহিদ খলিফার স্ত্রী ঝুমুর (৩০) জানান, এর আগে তারা পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডে বসবাস করতেন। পিঠা বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় তারা পিরোজপুরের পাড়েরহাট থেকে এখানে পাড়ি জমান। প্রমনেন্দ হালদার (৭০) জানান, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রী। তিনি আগে বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মাছরং গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি জানান, এখানের পরিবেশ অনেক ভালো, শুধু জমিসহ ঘরই নয় ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগ, রান্না ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমাদের জীবনকে মধুময় করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

আগে সেবা প্রদানের এ আশ্রয়ন প্রকল্প সারা বিশ্বে ‘অর্ন্তভূক্তিমূলক  শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা  পেয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে  প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের জমিসহ এই পাঁকা ঘর অনাবিল হাঁসি ফুঁটিয়েছে অসহায় মানুষের মুখে। আশ্রয়ণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বানারীপাড়ার  সন্ধ্যা ও এর শাখা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে আশ্রয়নে ২ শতক জমিসহ সেমি পাঁকা ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহহীন-ভূমিহীনরা জমিসহ স্বপ্নের এ পাঁকা ঘর পাওয়ায় এই অসহায় মানুষগুলোর জীবন বদলে গেছে। এই মানুষগুলোর একসময় ছিলোনা নিজস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। তারা মানবেতর জীবনযাপন করতেন।  প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান ।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি  প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২২ মার্চ বানারীপাড়া  উপজেলাকে  শতভাগ ভূমি ও গৃহহীন  মুুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। উপকারভোগীসহ বানারীপাড়াবাসীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুুয়ালি এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমূূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য বানারীপাড়াবাসী এখন উন্মূখ হয়ে আছে।

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন  তন্বী  বলেন, ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবেনা’- মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বানারীপাড়া উপজেলা প্রশাসন। বানারীপাড়ায় সদর ইউনিয়নের আলতার এ আশ্রয়ণসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট ৩৮০টি পরিবারের জন্য সেমি পাঁঁকা ঘর নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব আশ্রয়ণে বসবাসকারী উপকারভোগীদের জীবনমান আমূল বদলে গেছে।  আগামী জুন মাসে বানারীপাড়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করার মানসে কাজ চলছে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের মাধ্যমে পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ উপজেলার বাইশারী, সলিয়াবাকপুর ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে নির্মিত জমিসহ আরও ১৪২টি সেমি পাঁকা ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করবেন বলেও জানান তিনি।

বা/খ: এসআর।