ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গুপ্তধনের সন্ধানে বিলুপ্তপ্রায় দুলাইয়ের দানবীর জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়ির ভগ্নাবশেষ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩
  • / ৪৯০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

পাবনার ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম দুলাই জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়ি। ঐতিহাসিক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা রহিত হলে, বৃটিশ আমলের জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকেই জমিদারদের গল্পগাঁথা কল্পকাহিনী সাহিত্য, কাব্য আর উপন্যাসের উপজীব্য হতে থাকে। তেমনি আজিম চৌধুরীর জমিদারি শেষ হলে কিছু সুযোগ সন্ধানী স্বার্থান্বেষী মহল হানা দেয় চৌধুরীবাড়ীর অন্দর মহলে। গুপ্তধনের সন্ধানে বাড়ীর মূল্যবান কাঠের দরজা–জানালা খুলে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে সিন্দুক খোঁজার তামাশায় বাড়ীর দেয়াল, মেঝে এমনকি ছাদ ভাঙতে থাকে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত মনোমুগ্ধকর ভবনগুলোর ছাদ ও মেঝের পতন ঘটে। এর আগে ইংরেজ সরকার বাড়ীটি নিলামে উঠিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র বিক্রি করে দেয়।

বর্তমানে এই জমিদার বংশের পঞ্চম প্রাণ পুরুষ পাবনা মেরিন একাডেমির প্রধান প্রকৌশলী আহসান জান চৌধুরী ১৯৯৪ সাল থেকে চল্লিশ একর জায়গার এই বাড়ীটি দেখভাল করেন। তিনি জানান, আমার বাবা রওশন জান চৌধুরী ১৯৮৫সালে পরিত্যাক্ত পুকুর গুলো নর্দান ফিশারিজ নাম দিয়ে পূনঃখনন করে। বর্তমানে আমি এখানে একটি স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। মৎস্য খামার, কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া চল্লিশটি পরিবারের কর্মসংস্থান করা হয়েছে।

প্রায় ২৫০ বছর আগে তুর্কিস্তানের সমরখন্দ থেকে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামে (আহলাদিপুর) বসতি গড়েন আজিমুদ্দিন চৌধুরীর পিতামহ শরফুদ্দিন সরকার। আজিম চৌধুরীর পিতা রহিমুদ্দিন সরকার আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষ মুন্সি ছিলেন। তিনি রাজশাহী কালেক্টরেট অফিসে সেরেস্তাদার ও পেশকার ছিলেন। পরবর্তীতে (১৭২২-১৮১৫) চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত হন। রহিমুদ্দিনের একমাত্র উত্তররাধিকারী ফখরুদ্দিন আহলে আহসান আজিম চৌধুরীর (১৭৯০-১৮৮০) অধীনে জমিদারি সুখ্যাতি অর্জন করে। ইংরেজ শাসনামলে তিনি তিনটি নীল কুঠির স্থাপন করেন। জমিদারীর আয়ের সঙ্গে ,নীল কুঠিরের আয় যুক্ত হলে তার প্রভাব প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পায়। প্রায় ৭০০ বিঘা জমির ওপর এই বাড়িটি নির্মিত। এখানে ছিল বিলাশবহুল প্রাসাদ, কাঁচারিবাড়ী, মসজিদ, পুকুর, হাম্মাম খানা ।

এই জমিদার বাড়ি দুই অংশে বিভক্ত। উত্তর দিকে বেষ্টনি-দেয়াল পরিবৃত সন্মূখ ভবনটি কাচারি ও পশ্চাৎভাগ অন্দর মহল। দুটি ভবনই দোতলা। একটি বড় কক্ষের উভয় দিকে দুটি করে ছোট কক্ষ এবং কাচারি ভবনটি ছোট-বড় কক্ষের সমন্বয়ে গঠিত।

এ জমিদারবাড়িটি চারদিকে পরিখা বেষ্টিত। অর্ধ-বৃত্তাকৃতির খিলান সহযোগে ছয়টি স্তম্ভের ওপরে প্রবেশপথ নির্মিত। ভগ্নদশাগ্রস্ত প্রবেশপথের অংশবিশেষ এখনও বিদ্যমান। প্রাধান কক্ষের চারদিক খিলান দ্বারা বেষ্টিত। দ্বিতলের ছাদের পতন ঘটেছে এবং সম্পর্ণ নির্মাণাদি বিধ্বস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে। বাড়ির দ্বিতীয় অংশের, পশ্চাতে গোছলের জন্য বড় আকারের জলাধার সংবলিত হাম্মাম ছিল এবং নালার সাহায্যে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। জমিদারবাড়ির দিঘি থেকে এ পানি সরবরাহ করা হতো। চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে প্রাঙ্গণের দক্ষিণে আছে একটি পুকুর এবং পশ্চিমে আছে মসজিদ।

এটি আয়তাকৃতির দৈঘ্যে ১৪;০২ মিটার এবং প্রস্থ ৬.৭১ মিটার। মসজিদটির পরিসর বৃদ্ধি করায় বর্তমানে এর প্রস্থ ১২.৮০ মিটার। মসজিদের চারকোণায় চারটি পার্শ্ববুরুজ আছে যা ছাদের ওপর পর্যন্ত উঠেছে। মসজিদটি তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট এবং গম্বুজগুলি অষ্টভূজাকৃতির ড্রামের ওপরে রক্ষিত আর গম্বুজের শীর্ষদেশ প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় সজ্জিত। ছাদের ওপরে চারদিক মারলন নকশা সংবলিত প্যারাপেট লক্ষণীয়। অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আয়তাকার ফ্রেমে সংস্থাপিত। মসজিদের দক্ষিণ দিকে ক্রমে নীচের দিকে ধাবমান একটি বহু ধাপবিশিষ্টি সিঁড়িযুক্ত পুকুর আছে। মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত মুঘল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের অনুকরণে নির্মিত। মসজিদের প্রবেশপথের শীর্ষে পূর্ব দিকে শ্বেত পাথরে উৎকীর্ণ শিলালিপি পাঠে জানা যায় যে, মসজিদটি রহিম উদ্দিন চৌধুরী ১২১৭ হিজরি অনুসারে ১৮০২ খ্রি: নির্মাণ করেন।

উইলিয়ম উইলসন হান্টারের মতে আজিম চৌধুরী প্রজ্ঞায়, চিন্তাভাবনায় সূদুর প্রসারী দূরদৃষ্টি সম্পন মানুষ ছিলেন। পাবনা জেলায় তিনটি ডিসপেনসারি ছিল। আজিম চৌধুরী দুলাই ডিসপেনসারি ১৮৬৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রজাদের ভালবাসায় সিক্ত ছিলেন। জনহিতৈষি ও দানবীর জমিদার ছিলেন। যা লোকমুখে ছন্দ কবিতায় সাক্ষ্য বহন করে।

চৌধুরী ফখরউদ্দিন নামটি যাহার।/ ওরফে আজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রচার। /বিশ্বাস ও ভক্তি মূলে উপরে তোমার/ প্রবল প্রতাপে থাকি জগৎ মাঝার/ প্রজা বন্ধু দয়াবান হইয়া আজিম/দানধ্যানে পুণ্য লভিতে তাজিম/ফিটিং আদি টমটমে চড়িছে আধুলি পয়সা করেছে জোটন/ সামনে অর্থের তোড়া রাখি সাজাইয়া/ গরিবে করিত দান গাড়ি আহরিয়া/ শুনিয়া গরিব-দুঃখী আনন্দে মাতিয়া/সড়কের দুইধারে রহিত সাজিয়া/ মুখেতে সুখের বোল জয় জয় রব/ আসিছেন মহাপ্রভ’ দুঃখীর বান্ধব/ আসিবে কাঙাল-পালক আজিম এখন / ভিক্ষা দিবে মনমতো করি বরিষণ।

সিপাহি বিদ্রোহীদের (১৮৫৮ খ্রি;) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করায় আজিম চৌধুরির সাঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে খাজনা না দেয়ায় বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে ইংরেজদের সাথে চৌধুরীর যুদ্ধ বাঁধে। সে যুদ্ধে আজিম চৌধুরী পরাজিত হয়ে সুরঙ্গ পথ দিয়ে পালিয়ে ভারতের কলকাতার নিকটবর্তী শহর চন্দন নগরে চলে যান। এ সময় ইংরেজরা তার বাড়ীটি নিলামে তোলে। ১০-১৫ বছর পরে ফিরে এসে পাবনা শহরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। শহরের ফায়ার ব্রিগেডের পাশে নিজবাড়িতে তার সমাধি সুরক্ষিত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

গুপ্তধনের সন্ধানে বিলুপ্তপ্রায় দুলাইয়ের দানবীর জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়ির ভগ্নাবশেষ

আপডেট সময় : ১০:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

পাবনার ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম দুলাই জমিদার আজিম চৌধুরীর বাড়ি। ঐতিহাসিক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা রহিত হলে, বৃটিশ আমলের জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকেই জমিদারদের গল্পগাঁথা কল্পকাহিনী সাহিত্য, কাব্য আর উপন্যাসের উপজীব্য হতে থাকে। তেমনি আজিম চৌধুরীর জমিদারি শেষ হলে কিছু সুযোগ সন্ধানী স্বার্থান্বেষী মহল হানা দেয় চৌধুরীবাড়ীর অন্দর মহলে। গুপ্তধনের সন্ধানে বাড়ীর মূল্যবান কাঠের দরজা–জানালা খুলে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে সিন্দুক খোঁজার তামাশায় বাড়ীর দেয়াল, মেঝে এমনকি ছাদ ভাঙতে থাকে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত মনোমুগ্ধকর ভবনগুলোর ছাদ ও মেঝের পতন ঘটে। এর আগে ইংরেজ সরকার বাড়ীটি নিলামে উঠিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র বিক্রি করে দেয়।

বর্তমানে এই জমিদার বংশের পঞ্চম প্রাণ পুরুষ পাবনা মেরিন একাডেমির প্রধান প্রকৌশলী আহসান জান চৌধুরী ১৯৯৪ সাল থেকে চল্লিশ একর জায়গার এই বাড়ীটি দেখভাল করেন। তিনি জানান, আমার বাবা রওশন জান চৌধুরী ১৯৮৫সালে পরিত্যাক্ত পুকুর গুলো নর্দান ফিশারিজ নাম দিয়ে পূনঃখনন করে। বর্তমানে আমি এখানে একটি স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। মৎস্য খামার, কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া চল্লিশটি পরিবারের কর্মসংস্থান করা হয়েছে।

প্রায় ২৫০ বছর আগে তুর্কিস্তানের সমরখন্দ থেকে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামে (আহলাদিপুর) বসতি গড়েন আজিমুদ্দিন চৌধুরীর পিতামহ শরফুদ্দিন সরকার। আজিম চৌধুরীর পিতা রহিমুদ্দিন সরকার আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষ মুন্সি ছিলেন। তিনি রাজশাহী কালেক্টরেট অফিসে সেরেস্তাদার ও পেশকার ছিলেন। পরবর্তীতে (১৭২২-১৮১৫) চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত হন। রহিমুদ্দিনের একমাত্র উত্তররাধিকারী ফখরুদ্দিন আহলে আহসান আজিম চৌধুরীর (১৭৯০-১৮৮০) অধীনে জমিদারি সুখ্যাতি অর্জন করে। ইংরেজ শাসনামলে তিনি তিনটি নীল কুঠির স্থাপন করেন। জমিদারীর আয়ের সঙ্গে ,নীল কুঠিরের আয় যুক্ত হলে তার প্রভাব প্রতিপত্তিও বৃদ্ধি পায়। প্রায় ৭০০ বিঘা জমির ওপর এই বাড়িটি নির্মিত। এখানে ছিল বিলাশবহুল প্রাসাদ, কাঁচারিবাড়ী, মসজিদ, পুকুর, হাম্মাম খানা ।

এই জমিদার বাড়ি দুই অংশে বিভক্ত। উত্তর দিকে বেষ্টনি-দেয়াল পরিবৃত সন্মূখ ভবনটি কাচারি ও পশ্চাৎভাগ অন্দর মহল। দুটি ভবনই দোতলা। একটি বড় কক্ষের উভয় দিকে দুটি করে ছোট কক্ষ এবং কাচারি ভবনটি ছোট-বড় কক্ষের সমন্বয়ে গঠিত।

এ জমিদারবাড়িটি চারদিকে পরিখা বেষ্টিত। অর্ধ-বৃত্তাকৃতির খিলান সহযোগে ছয়টি স্তম্ভের ওপরে প্রবেশপথ নির্মিত। ভগ্নদশাগ্রস্ত প্রবেশপথের অংশবিশেষ এখনও বিদ্যমান। প্রাধান কক্ষের চারদিক খিলান দ্বারা বেষ্টিত। দ্বিতলের ছাদের পতন ঘটেছে এবং সম্পর্ণ নির্মাণাদি বিধ্বস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে। বাড়ির দ্বিতীয় অংশের, পশ্চাতে গোছলের জন্য বড় আকারের জলাধার সংবলিত হাম্মাম ছিল এবং নালার সাহায্যে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। জমিদারবাড়ির দিঘি থেকে এ পানি সরবরাহ করা হতো। চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে প্রাঙ্গণের দক্ষিণে আছে একটি পুকুর এবং পশ্চিমে আছে মসজিদ।

এটি আয়তাকৃতির দৈঘ্যে ১৪;০২ মিটার এবং প্রস্থ ৬.৭১ মিটার। মসজিদটির পরিসর বৃদ্ধি করায় বর্তমানে এর প্রস্থ ১২.৮০ মিটার। মসজিদের চারকোণায় চারটি পার্শ্ববুরুজ আছে যা ছাদের ওপর পর্যন্ত উঠেছে। মসজিদটি তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট এবং গম্বুজগুলি অষ্টভূজাকৃতির ড্রামের ওপরে রক্ষিত আর গম্বুজের শীর্ষদেশ প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় সজ্জিত। ছাদের ওপরে চারদিক মারলন নকশা সংবলিত প্যারাপেট লক্ষণীয়। অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আয়তাকার ফ্রেমে সংস্থাপিত। মসজিদের দক্ষিণ দিকে ক্রমে নীচের দিকে ধাবমান একটি বহু ধাপবিশিষ্টি সিঁড়িযুক্ত পুকুর আছে। মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত মুঘল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের অনুকরণে নির্মিত। মসজিদের প্রবেশপথের শীর্ষে পূর্ব দিকে শ্বেত পাথরে উৎকীর্ণ শিলালিপি পাঠে জানা যায় যে, মসজিদটি রহিম উদ্দিন চৌধুরী ১২১৭ হিজরি অনুসারে ১৮০২ খ্রি: নির্মাণ করেন।

উইলিয়ম উইলসন হান্টারের মতে আজিম চৌধুরী প্রজ্ঞায়, চিন্তাভাবনায় সূদুর প্রসারী দূরদৃষ্টি সম্পন মানুষ ছিলেন। পাবনা জেলায় তিনটি ডিসপেনসারি ছিল। আজিম চৌধুরী দুলাই ডিসপেনসারি ১৮৬৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রজাদের ভালবাসায় সিক্ত ছিলেন। জনহিতৈষি ও দানবীর জমিদার ছিলেন। যা লোকমুখে ছন্দ কবিতায় সাক্ষ্য বহন করে।

চৌধুরী ফখরউদ্দিন নামটি যাহার।/ ওরফে আজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রচার। /বিশ্বাস ও ভক্তি মূলে উপরে তোমার/ প্রবল প্রতাপে থাকি জগৎ মাঝার/ প্রজা বন্ধু দয়াবান হইয়া আজিম/দানধ্যানে পুণ্য লভিতে তাজিম/ফিটিং আদি টমটমে চড়িছে আধুলি পয়সা করেছে জোটন/ সামনে অর্থের তোড়া রাখি সাজাইয়া/ গরিবে করিত দান গাড়ি আহরিয়া/ শুনিয়া গরিব-দুঃখী আনন্দে মাতিয়া/সড়কের দুইধারে রহিত সাজিয়া/ মুখেতে সুখের বোল জয় জয় রব/ আসিছেন মহাপ্রভ’ দুঃখীর বান্ধব/ আসিবে কাঙাল-পালক আজিম এখন / ভিক্ষা দিবে মনমতো করি বরিষণ।

সিপাহি বিদ্রোহীদের (১৮৫৮ খ্রি;) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করায় আজিম চৌধুরির সাঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে খাজনা না দেয়ায় বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে ইংরেজদের সাথে চৌধুরীর যুদ্ধ বাঁধে। সে যুদ্ধে আজিম চৌধুরী পরাজিত হয়ে সুরঙ্গ পথ দিয়ে পালিয়ে ভারতের কলকাতার নিকটবর্তী শহর চন্দন নগরে চলে যান। এ সময় ইংরেজরা তার বাড়ীটি নিলামে তোলে। ১০-১৫ বছর পরে ফিরে এসে পাবনা শহরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। শহরের ফায়ার ব্রিগেডের পাশে নিজবাড়িতে তার সমাধি সুরক্ষিত আছে।