ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

এক উঠানেই তিন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় : ধর্মীয় সম্পৃতির বিরল দৃষ্টান্ত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪২:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৯৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
মসজিদ ও মন্দিরের প্রবেশ পথ একটা ! মাঝে শুধু ইটের ছোট্ট দেয়াল।  এটি দিয়ে মুসলিমরা মসজিদে ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে।  যুগের পর যুগ পাশাপাশি থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। কখনো কেউ কোন কারণে বিরক্তিবোধ করেনি।  এক উঠানের একপাশে মসজিদ অন্যপাশে মন্দির।  কয়েককদম হাটলে আবার শ্রী মঙ্গল  বৌদ্ধ বিহার।  এক পাশে ডোলির ঢাক অন্য পাশে ভেসে আসে মোয়াজ্জিনের আজান।  আবার সকাল সন্ধ্যা বৌদ্ধ বিহারের  ভান্তের বন্দনার আওয়াজ।  এ যেন সম্পৃতির এক বিরল দৃষ্টান্ত।  এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এভাবেই সহাবস্থানে অনন্য  ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সাগর সৈকত  মসজিদ, শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও সিমা বৌদ্ধ বিহার।
সরেজমিন দেখা গেছে, মসজিদে আজান হলে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আবার ক্ষণ বুঝে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বন্দনায় মসগুল থাকে।  এ যেন ধর্মীয় সম্প্রতির এক বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  হিন্দু সম্প্রদায়ের  দুর্গাপূজাসহ বছরে কয়েকটি বড় উৎসব উৎযাপন করতে হয় এ মন্দিরে।  রাসমেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগমও হয় এই মন্দির প্রাঙ্গণে; তবুও কোনদিন কারো ধর্মচর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কেউ কারো !  কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিস্ময় প্রকাশ করেন এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ বসবাস দেখে।
স্থানীয় তথ্যমতে, কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে  মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় উনিশশত সাতানব্বই সালে এবং শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজের কাছ থেকে  জানা গেছে,  কালী মন্দিরের প্রাঙ্গণে স্নানের কার্যক্রম চলে আসছে প্রায় দুইশত বছর আগ থেকে এবং শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা হয় উনিশত ছিয়ানব্বই সাল থেকে। অন্যপাশে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার স্থাপিত হয় ১৭শ’ চুরাশি সালে। ওই সময় থেকে একই জায়গায় পাশাপাশি চলছে তিন ধর্মের তিন উপাসনালয়ের কার্যক্রম।
এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের ঢাক, ঢোলসহ যাবতীয় বাদ্য বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। আবার সকাল সন্ধ্যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়রা তাদের বিহারে বন্দনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি একই মাঠে মসজিদ-মন্দির।  অন্যপাশে বৌদ্ধদের বৌদ্ধ বিহার।  এতদ্ব সত্ত্বেও  নামাজ পড়তে কোনো অসুবিধা হয় না। ওদের ধর্ম ওরা পালন করে, আমাদের ধর্ম আমরা পালন করি। এখানে কোনো সমস্যা হয় না।’
কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে  মসজিদের মোয়াজ্জেম হাফেজ হারুন অর রশিদ  বলেন, আমি সাতাশ বছর ধরে এই মসজিদে খেদমত করে আসছি। ধর্ম পালনে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। মসজিদ-মন্দির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সবকিছু হয়। কোনদিন কোন বিষয় মত বিরোধ হয়নি।
শ্রী  রাধাকৃষ্ণ  মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজ জানান, প্রতি বছর রাস উৎসবকে সামনে রেখে  এখানে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। মসজিদে আজানের সময় মন্দিরের সবধরনের ঢাক-ঢোল বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। ধর্মীয় সম্প্রতি সদা সর্বদাই  বজায় রাখি।
শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধাক্ষ  ইন্দ্রনীল ভিক্ষু বলেন,  আমরা তিন সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি সদা সম্মান জানাই। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি আশা করি কোনদিন ঘটবেও না।
কুয়াকাটা পৌরমেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার  বলেন, যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চলে আসছে এখানে। কোনদিন কারো প্রার্থনায় বাধার সৃষ্টি হয়নি।
বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

এক উঠানেই তিন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় : ধর্মীয় সম্পৃতির বিরল দৃষ্টান্ত

আপডেট সময় : ১০:৪২:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
মসজিদ ও মন্দিরের প্রবেশ পথ একটা ! মাঝে শুধু ইটের ছোট্ট দেয়াল।  এটি দিয়ে মুসলিমরা মসজিদে ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে।  যুগের পর যুগ পাশাপাশি থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। কখনো কেউ কোন কারণে বিরক্তিবোধ করেনি।  এক উঠানের একপাশে মসজিদ অন্যপাশে মন্দির।  কয়েককদম হাটলে আবার শ্রী মঙ্গল  বৌদ্ধ বিহার।  এক পাশে ডোলির ঢাক অন্য পাশে ভেসে আসে মোয়াজ্জিনের আজান।  আবার সকাল সন্ধ্যা বৌদ্ধ বিহারের  ভান্তের বন্দনার আওয়াজ।  এ যেন সম্পৃতির এক বিরল দৃষ্টান্ত।  এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এভাবেই সহাবস্থানে অনন্য  ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সাগর সৈকত  মসজিদ, শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও সিমা বৌদ্ধ বিহার।
সরেজমিন দেখা গেছে, মসজিদে আজান হলে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আবার ক্ষণ বুঝে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বন্দনায় মসগুল থাকে।  এ যেন ধর্মীয় সম্প্রতির এক বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  হিন্দু সম্প্রদায়ের  দুর্গাপূজাসহ বছরে কয়েকটি বড় উৎসব উৎযাপন করতে হয় এ মন্দিরে।  রাসমেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগমও হয় এই মন্দির প্রাঙ্গণে; তবুও কোনদিন কারো ধর্মচর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কেউ কারো !  কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিস্ময় প্রকাশ করেন এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ বসবাস দেখে।
স্থানীয় তথ্যমতে, কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে  মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় উনিশশত সাতানব্বই সালে এবং শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজের কাছ থেকে  জানা গেছে,  কালী মন্দিরের প্রাঙ্গণে স্নানের কার্যক্রম চলে আসছে প্রায় দুইশত বছর আগ থেকে এবং শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা হয় উনিশত ছিয়ানব্বই সাল থেকে। অন্যপাশে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার স্থাপিত হয় ১৭শ’ চুরাশি সালে। ওই সময় থেকে একই জায়গায় পাশাপাশি চলছে তিন ধর্মের তিন উপাসনালয়ের কার্যক্রম।
এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের ঢাক, ঢোলসহ যাবতীয় বাদ্য বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। আবার সকাল সন্ধ্যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়রা তাদের বিহারে বন্দনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি একই মাঠে মসজিদ-মন্দির।  অন্যপাশে বৌদ্ধদের বৌদ্ধ বিহার।  এতদ্ব সত্ত্বেও  নামাজ পড়তে কোনো অসুবিধা হয় না। ওদের ধর্ম ওরা পালন করে, আমাদের ধর্ম আমরা পালন করি। এখানে কোনো সমস্যা হয় না।’
কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে  মসজিদের মোয়াজ্জেম হাফেজ হারুন অর রশিদ  বলেন, আমি সাতাশ বছর ধরে এই মসজিদে খেদমত করে আসছি। ধর্ম পালনে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। মসজিদ-মন্দির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সবকিছু হয়। কোনদিন কোন বিষয় মত বিরোধ হয়নি।
শ্রী  রাধাকৃষ্ণ  মন্দিরের ব্রম্মচারী শিশির মহারাজ জানান, প্রতি বছর রাস উৎসবকে সামনে রেখে  এখানে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। মসজিদে আজানের সময় মন্দিরের সবধরনের ঢাক-ঢোল বাজানো বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। ধর্মীয় সম্প্রতি সদা সর্বদাই  বজায় রাখি।
শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধাক্ষ  ইন্দ্রনীল ভিক্ষু বলেন,  আমরা তিন সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি সদা সম্মান জানাই। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি আশা করি কোনদিন ঘটবেও না।
কুয়াকাটা পৌরমেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার  বলেন, যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চলে আসছে এখানে। কোনদিন কারো প্রার্থনায় বাধার সৃষ্টি হয়নি।
বা/খ: এসআর।