ঢাকা ০২:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / ৪১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে আগামী ৭২ ঘণ্টায় অবনতি পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। রাজধানীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যারয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।

তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পেলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনার পানি, যা আগামী তিনদিন পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। ফলে সিলেটর বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে যেকোন সময় বড় বন্যা দেখা দিতে পারে।

উদয় রায়হান জানান, বর্তমানে চারটি প্রধান নদীর ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের বৃষ্টিপাত কিছু কম থাকায় নদীর পানি কমে আসছে। উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে।

তিনি জানান,সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে এখন পানি বিপৎসীমার উপরে থাকলেও বৃষ্টিপাত কমে আসায় পরিস্থিতি তিনদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ২৫ তারিখ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের পানি কম থাকবে। ২৭-২৮ তারিখের উত্তরে বৃষ্টি বাড়তে পারে এবং নাব্যতা সংকট থাকায় নদীগুলো আকস্মিক বন্যাপ্রবণ নদী হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে হঠাৎই পানি বেড়ে যেতে পারে।

এদিকে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ৭২ গন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলে দুধকুমার, তিস্তাও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। রংপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।

বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

এছাড়া জেলার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯টায় কাউনিয়া পয়েন্ট তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২২ সেন্টিমিটার‌ ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা নদীসহ ১৬টি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এরমধ্যে ধরলা নদীর ফুলবাড়ী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে। টানা পাঁচদিন থেকে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে চর-দ্বীপগুলোর অনেক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। জেলার চরাঞ্চলে প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ বাস করে। কাজ না থাকায় পরিবারগুলো খাদ্যসঙ্কটে পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য ২৫১ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। এর আগে ১৪৪ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বন্যায় জেলার প্রায় এক হাজার চারশ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এরমধ্যে মরিচ, আউশ ধান, পাট, চিনা, পটল খেতসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৩:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে আগামী ৭২ ঘণ্টায় অবনতি পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। রাজধানীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যারয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।

তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পেলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনার পানি, যা আগামী তিনদিন পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। ফলে সিলেটর বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে যেকোন সময় বড় বন্যা দেখা দিতে পারে।

উদয় রায়হান জানান, বর্তমানে চারটি প্রধান নদীর ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের বৃষ্টিপাত কিছু কম থাকায় নদীর পানি কমে আসছে। উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে।

তিনি জানান,সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে এখন পানি বিপৎসীমার উপরে থাকলেও বৃষ্টিপাত কমে আসায় পরিস্থিতি তিনদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ২৫ তারিখ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের পানি কম থাকবে। ২৭-২৮ তারিখের উত্তরে বৃষ্টি বাড়তে পারে এবং নাব্যতা সংকট থাকায় নদীগুলো আকস্মিক বন্যাপ্রবণ নদী হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে হঠাৎই পানি বেড়ে যেতে পারে।

এদিকে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ৭২ গন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলে দুধকুমার, তিস্তাও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। রংপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।

বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

এছাড়া জেলার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যে জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯টায় কাউনিয়া পয়েন্ট তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২২ সেন্টিমিটার‌ ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা নদীসহ ১৬টি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এরমধ্যে ধরলা নদীর ফুলবাড়ী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে। টানা পাঁচদিন থেকে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে চর-দ্বীপগুলোর অনেক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। জেলার চরাঞ্চলে প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ বাস করে। কাজ না থাকায় পরিবারগুলো খাদ্যসঙ্কটে পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য ২৫১ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। এর আগে ১৪৪ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বন্যায় জেলার প্রায় এক হাজার চারশ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এরমধ্যে মরিচ, আউশ ধান, পাট, চিনা, পটল খেতসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে।