ঢাকা ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ডিজিএম বললেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকুরীচ্যুত

উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় গ্রাহকের প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
  • আপডেট সময় : ০২:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • / ৪২২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার ম্যানেজার, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহক  হয়রানি, গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, হোন্ডি, হেরোইন ব্যবসায়ীদের গভীর সখ্যতা, গ্রাহকদের ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলা, অধীনাস্ত কর্মচারীদের সাথে ছোটখাট বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক লেগে থাকায় ব্যাংকের চেন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
এক সময়ে গোদাগাড়ীর সব ব্যাংকের চেয়ে গ্রাহক সেবা, লেনদেন, ঋনের কিস্তি উত্তোলন, ঋন প্রদান, স্টুডেন্টস একাউন্ট, নতুন একাউন্ড খোলাসহ বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে ছিল ব্যাংকটি কিন্তু ম্যানেজার মেহেদী হাসান যোগদান করার পর থেকে দিনে দিনে গ্রাহকসেবা তলানীতে নেমে এসেছে।
এবছর  ১৪ জানুয়ারী মেহেদী হাসান উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় যোগদান করার পর থেকে ব্যাংকে চেন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে, গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, তাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলাসহ নানা কারনে গ্রাহকসেবার মান নিন্মগামী হওয়ায় উত্তরা ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার কর্মকর্তা আবু তাহের কর্মরত থাকার সময় শতাধিক গ্রাহকের এসডিপিস, সঞ্চয় হিসেব, বিভিন্ন হিসেব নম্বরে টাকা জমা দেয়ার সময় এন্টি না করে ভাউচার নষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায়  ১৫ লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগে রয়েছে। ভুক্তভোগি অনেকে টাকা ফেরত পেলেও এখনো বেশ কিছু গ্রাহককে টাকা ফেরত না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরছেন। কিন্তু ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে প্রতারক ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তাহেরের গোপন সখ্যতা থাকায় এতদিন পরেও গ্রাহকগণ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
গ্রাহকের টাকা আত্নসাৎ করা, শাস্তি না হওয়ায় অনেকে এ ব্যাংককে গ্রামীণ বলে আখ্যায়িত করছেন। প্রতারিত অনেক গ্রাহক এখনও  টাকা ফেরত না পেয়ে দিনের পর দিন ম্যানেজারের নিকট ঘুরচ্ছেন কিন্তু কাজের কিছুই না। শুধু কি তাই ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তাহের বিরুদ্ধে উত্তরা ব্যাংক চাঁপাই নবাবগঞ্জ শাখায় ডেপুটেশনে গিয়েও একই কায়দায় বেশ কিছু গ্রাহকের ভাউচার নষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখা ম্যানেজার তিনি যোগদান করে হেরোইন, হন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এমন কি তিনি (ম্যানেজার) গরুর রাখাল দিয়ে কর্মজীরন শুরু করা হন্ডি, মাদক ব্যবসায়ীর আনোয়ার হোসেন বিরুর বাড়ী ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। এ দিকে ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার হিসেবে সম্পতি আরঙ্গজেব দেওয়ান ও জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার যোগদান করে ম্যানেজারের পথ ধরে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, মাদক মামলার আসামী, একধিক বিয়ে করা, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট লোকমান হোসেনের রাজকীয় বাড়ীতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা বাড়ী থেকে এনে ব্যাংকে জমা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব হোন্ডি মাদক ব্যবসায়ীরা শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার উৎস কিসের আর ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে তাদের সখ্যতা কেন?  দুদকসহ অন্য সংস্থা তদন্ত করলে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসবেই।
ম্যানেজার মেহেদী হাসান, সেকেন্ড অফিসার, জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার মাদক, হন্ডি ব্যবসায়ীদের বাড়ী ভাড়া নেয়া এবং সখ্যতা গড়ে তোলার বিষয়টি সাধারণ বৈধ ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মানুষ উত্তরা ব্যাংকের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন। অনেকে এ তিন  ব্যাংক কর্মকর্তার আচারনেও নাখোশ।
এ ব্যপারে উত্তরা ব্যাংকের জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদারের সাথে গত ২০ জুন দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হোন্ডি, মাদক ব্যাবসায়ী সাথে সখ্যতা ও তাদের টাকা বহন করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার বাড়ী মান্দায়, এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে থাকতে হয়। যে বাসা ভাড়া নিতে যায় সেটাই হোন্ডি ও মাদক ব্যবসায়ীদের বাসা। সেকেন্ড অফিসার বিষয়টি জানতে পেরে এ বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। ম্যানেজার পাশের বাসায় ভাড়া থাকেন সেটও নাকি মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীর।
গত ৮ এপ্রিল রমিসা বেগম  প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল পড়া প্রকৌশলী মেয়ে নিয়ে উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় গিয়েছিলেন। স্বামী নকিমুদ্দিন শাহ গত বছর  ডিসেম্বরে মারা যান। তিনি  হাটপাড়ার বাড়ী মরগেজ রেখে ৫ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়েছিলেন। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন। ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। মেয়ের প্রাইভেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে কিছু টাকা ম্যানেজ করে ব্যাংক, লোন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। ম্যানেজার মেহেদী হাসানের নিকট অনুরোধ করেছিলেন রমিসা বেগম ও তার মেয়ে। আমাদেরকে টাকা কমানোর জন্য ঢাকায় আবেদন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করেন নি।
তারা জানান, নকিমুদ্দিন মারা যাওয়ার সময় সাবেক ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম আমাদের কথা দিয়েছিলেন এব্যপারে সাহায্য করবেন একথা শুনার বর্তমান ম্যানেজার খুব রাগ করেন। এসময় ব্যাংকে আসেন এক মাদক ব্যবসায়ী হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড ফাদার ৮ লাখ টাকা জমা দেয়ার জন্য। ম্যানেজার চিয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তার সাথে কুশালাদি বিনিময় করে তাকে সেকেন্ড অফিসারের নিকট নিয়ে গিয়ে পরিচয় করে দেন। এদিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েটি মা রমিসা বেগমকে বলেন, কান্না করো না তুমি দোয়া কর একদিন বড় হয়ে তোমার মুখে হাসি ফুটাবো। বাবা নেই আমি আছি মা। এ বলে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ম্যানেজারের মাধ্যমে পরিশোধ করে মৃত্যু বাবাকে ঋণ মুক্ত করেন।
ওই সময় ব্যাংকের ক্যাশে তুমুল হৈ চৈ শুনা যায় এক গ্রাহককে ছেঁড়া টাকা দিয়েছেন এক বাউন্ডিল গ্রাহক বুঝতে না পেরে বাড়ী চলে যান। পরে ফিরে এসে ছেঁড়া টাকাগুলি পরিবর্তন করতে এলে বর্কবির্তক হৈ হুল্লা শুরু হয়। আর ম্যানেজার সেকেন্ড অফিসার মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড় ফাদারের সাথে খোস গল্পে ব্যস্ত ছিল। ওই গ্রাহক ছেঁড়া টাকা পরিবর্তন না পেয়ে রাগ করে ব্যাংক ত্যাগ করেন। বিষয়টি সেদিন উপস্থিত অনেক গ্রাহক অবগত আছেন।
গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে পূবালী ব্যাংক গোদাগাড়ী উপ-শাখায় একজন আওয়ামী নেতা, ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা, দুজন  শিক্ষক যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা এফডিআর করেছেন। শিক্ষক সমিতি করেছেন ৩৭ লাখ টাকার এফডিআর।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহঃ সাধারন সম্পাদক, গোগ্রাম আদর্শ বহুমূখি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার মেহেদী হাসান এ ব্যাংকে যোগদান করার পর থেকে গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ শাখা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকদের বিভিন্ন হিসেবের ভাউচার নষ্ট  করে, লাখ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন, এখনও অনেক গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে দিনের পর দিন ঘুরছেন। এর তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচার করার দাবী জানাচ্ছি।
মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার মেহেদী হাসান এ ব্যাংকে যোগদান করার পর থেকে গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আমার ব্যক্তিগত ও স্কুলের বেশ কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে ব্যাংকে উপস্থিত হলে তিনি ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলেন। কয়েকটি হিসেব নম্বরের স্টেটমেন্ট নেয়ার জন্য ব্যাংককে গত ১৬ মে ব্যাংকে যায় তিনি স্টেটমেন্ট দিতে দেরী করেন, আমাকে চা অফার করেন,  আমি বলি দুপুরে চা পান করবো না বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করবো।  তিনি  উত্তর দেন চা খাবেন না তো কি কারনে ব্যাংকে এসেছেন। আমার সব একাউন্ট বন্ধ করে দেন আপনার ব্যাংকে আসবো না। তিনি বলেন সমস্যা নেই বন্ধ করে দিব আমার বেতন কমবে জানান, বিষয়টি ডিজিএম ডিজিএম  অলক কুমার ও উত্তরা ব্যাংকের ডিএমডি – ৩ মোঃ আসরাফুজ্জামানকে আবহিত করেও কোন লাভ হয় নি বলে জানান, এই ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক।
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ গ্রাহকের সাথে খারাপ আচারণের  ব্যপারে ডিজিএম  অলক কুমারের সাথে মোবাইলে  যোগাযোগ করা হলে  তিনি বলেন, সে এখন চাকুরীচ্যুত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিন  হেড অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রাহকদের সাথে খারাপ অচারণের বিষয়টি আমি দেখবে করো কোন সমস্যা হবে না বলে জানান।  কিন্তু দুদিন পরে পল্টি নিয়ে ম্যানেজার মেহেদী হাসান পক্ষে সাফায় গান ওই কর্মকর্তা।
ওই সব অনিয়ম, গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের, গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণের বিষয়গুলি উত্তরা ব্যাংকের ডিএমডি -৩ মোঃ আসরাফুজ্জামানের সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের অভিযোগ সেল আছে সেখানে অভিযোগ করেন। এটা সাংবাদিকদের কাজ নয় এমন সময় তিনি নরম সুরে বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ করতে বলার পরামার্শ দেন।
এদিকে গোদাগাড়ীর একটি ব্যাংকের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করা শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, মহিশালবাড়ী উত্তরা ব্যাংক চলে হন্ডি ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ীদের টাকায়। তাদের খেলাপী ঋন, খারাপ ঋনের সংখ্যা অনেক বেশী। ওদের ওখানে শিক্ষিত, বৈধ ব্যবসায়ীদের সম্মান নেই, সম্মান আছে লুঙ্গী পড়া, ব-কলম অবৈধ টাকার মালিকদের,  একজন ব্যাংক কর্মকতা হিসেবে লজ্জা পায় যখন শুনি ম্যানেজার, সেকেন্ড অফিসার, জেনারেল অফিসার চিহ্নিত হেরোইন ও হন্ডি ব্যবসায়ীর বাসায় ভাড়া থাকেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে আমাদের এখানে গ্রাহক হচ্ছেন। একই মন্তব্য করেন, গ্রাহক নাজমুল হক, মাহাতাব, শাহীন, মাসুদ আলম, এমএন রেদওয়ান, শহিদুল ইসলামন, মাইনুল, আব্দুল কুদ্দুস  তুসারসহ অনেকে।
এ ব্যপারে ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল কেটে দেন।
এ ব্যপারে সেকেন্ড অফিসার অরঙ্গজেব দেওয়ানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার ওই বাসায় আগে থেকে ভাড়া ছিল তিনি আমাকে ওই বাসা ভাড়া করে দিয়েছিলেন। সে যে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এটা অবগত হওয়ার পর একমাস থেকে বাসা ছেড়ে দিয়েছি।
বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

ডিজিএম বললেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকুরীচ্যুত

উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় গ্রাহকের প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

আপডেট সময় : ০২:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার ম্যানেজার, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহক  হয়রানি, গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, হোন্ডি, হেরোইন ব্যবসায়ীদের গভীর সখ্যতা, গ্রাহকদের ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলা, অধীনাস্ত কর্মচারীদের সাথে ছোটখাট বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক লেগে থাকায় ব্যাংকের চেন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
এক সময়ে গোদাগাড়ীর সব ব্যাংকের চেয়ে গ্রাহক সেবা, লেনদেন, ঋনের কিস্তি উত্তোলন, ঋন প্রদান, স্টুডেন্টস একাউন্ট, নতুন একাউন্ড খোলাসহ বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে ছিল ব্যাংকটি কিন্তু ম্যানেজার মেহেদী হাসান যোগদান করার পর থেকে দিনে দিনে গ্রাহকসেবা তলানীতে নেমে এসেছে।
এবছর  ১৪ জানুয়ারী মেহেদী হাসান উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় যোগদান করার পর থেকে ব্যাংকে চেন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে, গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, তাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলাসহ নানা কারনে গ্রাহকসেবার মান নিন্মগামী হওয়ায় উত্তরা ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার কর্মকর্তা আবু তাহের কর্মরত থাকার সময় শতাধিক গ্রাহকের এসডিপিস, সঞ্চয় হিসেব, বিভিন্ন হিসেব নম্বরে টাকা জমা দেয়ার সময় এন্টি না করে ভাউচার নষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায়  ১৫ লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগে রয়েছে। ভুক্তভোগি অনেকে টাকা ফেরত পেলেও এখনো বেশ কিছু গ্রাহককে টাকা ফেরত না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরছেন। কিন্তু ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে প্রতারক ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তাহেরের গোপন সখ্যতা থাকায় এতদিন পরেও গ্রাহকগণ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
গ্রাহকের টাকা আত্নসাৎ করা, শাস্তি না হওয়ায় অনেকে এ ব্যাংককে গ্রামীণ বলে আখ্যায়িত করছেন। প্রতারিত অনেক গ্রাহক এখনও  টাকা ফেরত না পেয়ে দিনের পর দিন ম্যানেজারের নিকট ঘুরচ্ছেন কিন্তু কাজের কিছুই না। শুধু কি তাই ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তাহের বিরুদ্ধে উত্তরা ব্যাংক চাঁপাই নবাবগঞ্জ শাখায় ডেপুটেশনে গিয়েও একই কায়দায় বেশ কিছু গ্রাহকের ভাউচার নষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখা ম্যানেজার তিনি যোগদান করে হেরোইন, হন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এমন কি তিনি (ম্যানেজার) গরুর রাখাল দিয়ে কর্মজীরন শুরু করা হন্ডি, মাদক ব্যবসায়ীর আনোয়ার হোসেন বিরুর বাড়ী ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। এ দিকে ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার হিসেবে সম্পতি আরঙ্গজেব দেওয়ান ও জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার যোগদান করে ম্যানেজারের পথ ধরে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, মাদক মামলার আসামী, একধিক বিয়ে করা, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট লোকমান হোসেনের রাজকীয় বাড়ীতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা বাড়ী থেকে এনে ব্যাংকে জমা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব হোন্ডি মাদক ব্যবসায়ীরা শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার উৎস কিসের আর ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে তাদের সখ্যতা কেন?  দুদকসহ অন্য সংস্থা তদন্ত করলে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসবেই।
ম্যানেজার মেহেদী হাসান, সেকেন্ড অফিসার, জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার মাদক, হন্ডি ব্যবসায়ীদের বাড়ী ভাড়া নেয়া এবং সখ্যতা গড়ে তোলার বিষয়টি সাধারণ বৈধ ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মানুষ উত্তরা ব্যাংকের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন। অনেকে এ তিন  ব্যাংক কর্মকর্তার আচারনেও নাখোশ।
এ ব্যপারে উত্তরা ব্যাংকের জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদারের সাথে গত ২০ জুন দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হোন্ডি, মাদক ব্যাবসায়ী সাথে সখ্যতা ও তাদের টাকা বহন করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার বাড়ী মান্দায়, এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে থাকতে হয়। যে বাসা ভাড়া নিতে যায় সেটাই হোন্ডি ও মাদক ব্যবসায়ীদের বাসা। সেকেন্ড অফিসার বিষয়টি জানতে পেরে এ বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। ম্যানেজার পাশের বাসায় ভাড়া থাকেন সেটও নাকি মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীর।
গত ৮ এপ্রিল রমিসা বেগম  প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল পড়া প্রকৌশলী মেয়ে নিয়ে উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় গিয়েছিলেন। স্বামী নকিমুদ্দিন শাহ গত বছর  ডিসেম্বরে মারা যান। তিনি  হাটপাড়ার বাড়ী মরগেজ রেখে ৫ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়েছিলেন। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন। ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। মেয়ের প্রাইভেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে কিছু টাকা ম্যানেজ করে ব্যাংক, লোন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। ম্যানেজার মেহেদী হাসানের নিকট অনুরোধ করেছিলেন রমিসা বেগম ও তার মেয়ে। আমাদেরকে টাকা কমানোর জন্য ঢাকায় আবেদন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করেন নি।
তারা জানান, নকিমুদ্দিন মারা যাওয়ার সময় সাবেক ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম আমাদের কথা দিয়েছিলেন এব্যপারে সাহায্য করবেন একথা শুনার বর্তমান ম্যানেজার খুব রাগ করেন। এসময় ব্যাংকে আসেন এক মাদক ব্যবসায়ী হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড ফাদার ৮ লাখ টাকা জমা দেয়ার জন্য। ম্যানেজার চিয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তার সাথে কুশালাদি বিনিময় করে তাকে সেকেন্ড অফিসারের নিকট নিয়ে গিয়ে পরিচয় করে দেন। এদিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েটি মা রমিসা বেগমকে বলেন, কান্না করো না তুমি দোয়া কর একদিন বড় হয়ে তোমার মুখে হাসি ফুটাবো। বাবা নেই আমি আছি মা। এ বলে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ম্যানেজারের মাধ্যমে পরিশোধ করে মৃত্যু বাবাকে ঋণ মুক্ত করেন।
ওই সময় ব্যাংকের ক্যাশে তুমুল হৈ চৈ শুনা যায় এক গ্রাহককে ছেঁড়া টাকা দিয়েছেন এক বাউন্ডিল গ্রাহক বুঝতে না পেরে বাড়ী চলে যান। পরে ফিরে এসে ছেঁড়া টাকাগুলি পরিবর্তন করতে এলে বর্কবির্তক হৈ হুল্লা শুরু হয়। আর ম্যানেজার সেকেন্ড অফিসার মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড় ফাদারের সাথে খোস গল্পে ব্যস্ত ছিল। ওই গ্রাহক ছেঁড়া টাকা পরিবর্তন না পেয়ে রাগ করে ব্যাংক ত্যাগ করেন। বিষয়টি সেদিন উপস্থিত অনেক গ্রাহক অবগত আছেন।
গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে পূবালী ব্যাংক গোদাগাড়ী উপ-শাখায় একজন আওয়ামী নেতা, ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা, দুজন  শিক্ষক যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা এফডিআর করেছেন। শিক্ষক সমিতি করেছেন ৩৭ লাখ টাকার এফডিআর।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহঃ সাধারন সম্পাদক, গোগ্রাম আদর্শ বহুমূখি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার মেহেদী হাসান এ ব্যাংকে যোগদান করার পর থেকে গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ শাখা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকদের বিভিন্ন হিসেবের ভাউচার নষ্ট  করে, লাখ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন, এখনও অনেক গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে দিনের পর দিন ঘুরছেন। এর তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচার করার দাবী জানাচ্ছি।
মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার মেহেদী হাসান এ ব্যাংকে যোগদান করার পর থেকে গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণ, গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আমার ব্যক্তিগত ও স্কুলের বেশ কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে ব্যাংকে উপস্থিত হলে তিনি ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলেন। কয়েকটি হিসেব নম্বরের স্টেটমেন্ট নেয়ার জন্য ব্যাংককে গত ১৬ মে ব্যাংকে যায় তিনি স্টেটমেন্ট দিতে দেরী করেন, আমাকে চা অফার করেন,  আমি বলি দুপুরে চা পান করবো না বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করবো।  তিনি  উত্তর দেন চা খাবেন না তো কি কারনে ব্যাংকে এসেছেন। আমার সব একাউন্ট বন্ধ করে দেন আপনার ব্যাংকে আসবো না। তিনি বলেন সমস্যা নেই বন্ধ করে দিব আমার বেতন কমবে জানান, বিষয়টি ডিজিএম ডিজিএম  অলক কুমার ও উত্তরা ব্যাংকের ডিএমডি – ৩ মোঃ আসরাফুজ্জামানকে আবহিত করেও কোন লাভ হয় নি বলে জানান, এই ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক।
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ গ্রাহকের সাথে খারাপ আচারণের  ব্যপারে ডিজিএম  অলক কুমারের সাথে মোবাইলে  যোগাযোগ করা হলে  তিনি বলেন, সে এখন চাকুরীচ্যুত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিন  হেড অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রাহকদের সাথে খারাপ অচারণের বিষয়টি আমি দেখবে করো কোন সমস্যা হবে না বলে জানান।  কিন্তু দুদিন পরে পল্টি নিয়ে ম্যানেজার মেহেদী হাসান পক্ষে সাফায় গান ওই কর্মকর্তা।
ওই সব অনিয়ম, গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের, গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচারণের বিষয়গুলি উত্তরা ব্যাংকের ডিএমডি -৩ মোঃ আসরাফুজ্জামানের সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের অভিযোগ সেল আছে সেখানে অভিযোগ করেন। এটা সাংবাদিকদের কাজ নয় এমন সময় তিনি নরম সুরে বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ করতে বলার পরামার্শ দেন।
এদিকে গোদাগাড়ীর একটি ব্যাংকের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করা শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, মহিশালবাড়ী উত্তরা ব্যাংক চলে হন্ডি ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ীদের টাকায়। তাদের খেলাপী ঋন, খারাপ ঋনের সংখ্যা অনেক বেশী। ওদের ওখানে শিক্ষিত, বৈধ ব্যবসায়ীদের সম্মান নেই, সম্মান আছে লুঙ্গী পড়া, ব-কলম অবৈধ টাকার মালিকদের,  একজন ব্যাংক কর্মকতা হিসেবে লজ্জা পায় যখন শুনি ম্যানেজার, সেকেন্ড অফিসার, জেনারেল অফিসার চিহ্নিত হেরোইন ও হন্ডি ব্যবসায়ীর বাসায় ভাড়া থাকেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে আমাদের এখানে গ্রাহক হচ্ছেন। একই মন্তব্য করেন, গ্রাহক নাজমুল হক, মাহাতাব, শাহীন, মাসুদ আলম, এমএন রেদওয়ান, শহিদুল ইসলামন, মাইনুল, আব্দুল কুদ্দুস  তুসারসহ অনেকে।
এ ব্যপারে ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল কেটে দেন।
এ ব্যপারে সেকেন্ড অফিসার অরঙ্গজেব দেওয়ানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি জেনারেল অফিসার মানষ দাস মজুমদার ওই বাসায় আগে থেকে ভাড়া ছিল তিনি আমাকে ওই বাসা ভাড়া করে দিয়েছিলেন। সে যে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এটা অবগত হওয়ার পর একমাস থেকে বাসা ছেড়ে দিয়েছি।
বাখ//আর