ঢাকা ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অস্তিত হারাতে বসেছে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৫১৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি :

কাঁসা তৈরির টুং টাং শব্দ আর ক্রেতাদের পদভারে একসময় মুখরিত থাকতো জামালপুর ইসলামপুরের কাঁসারীপাড়া। এখানকার কাঁসার কদর ছিল দেশজুড়ে। ঐতিহ্যবাহী এ কাঁসা শিল্পটি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল। সেই চিত্র এখন আর নেই। মেলামাইন ও প্লাষ্টিকসহ সহজলভ্য নানা সামগ্রীর বাজারে টিকতে না পেরে অস্তিত হারাতে বসেছে ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুরের উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামে কাঁসা শিল্প গড়ে উঠে। পরে এলাকাটি কাঁসারীপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। এক সময় ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প বিশ্ববাজারে বেশ কদর ছিল। আজ থেকে দুই যুগ আগেও কোনো বিয়ে-শাদী, আকিকা, সুন্নতে খৎনাসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসাবে দেয়া হতো কাঁসার জিনিসপত্র।

 

 

এছাড়াও কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাকরিতে যোগদান কিংবা অন্যত্র বদলির সময় এমনকি কোনো এমপি-মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদের সংবর্ধিত করা হতো কাঁসার তৈরী সামগ্রী দিয়ে। এসব নানা কারণে ক্রমেই কাঁসার জিনিসপত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সারাদেশ থেকে কাঁসা ব্যাবসায়ীরা কাঁসা সামগ্রী কিনতে ভীড় জমাতো ইসলামপুরে। কাঁসার কারখানাগুলোতে কারিগররা দিনরাত কাজ করেও কাঁসা সামগ্রী সরবরাহে হিমশিম খেতো।

কাঁসা শিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি কারুকার্য নান্দনিক কাঁসা একসময় দেশের গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছিল সুদুর লন্ডনে। তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯৪২ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম শহরে সারা বিশ্বের হস্তশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। ওই প্রদর্শনীতে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্পের কারিগর স্বর্গীয় জগৎচন্দ্র কর্মকার ইসলামপুরের কাঁসার তৈজসপত্রাদি প্রদর্শন করেছিল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প হিসাবে স্বর্ণপদক লাভ করে। এরপর থেকে সারা বিশ্বে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্পের পরিচিতি ঘটে।

 

 

ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবে পাঠ্যপুস্তকেও স্থান করে নেয় ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প। কাঁসা শিল্প কারখানায় কর্মরত কারিগররা জানান, কাঁসা হলো একটি মিশ্র ধাতব পদার্থ। তামা বা কপার ৮০০ গ্রাম এর সাথে টিনএ্যাংগট ২০০ গ্রাম মিশিয়ে আগুনে পুড়ালে ১ কেজি কাঁসা তৈরি হয়।

এছাড়া তামা, দস্তা, রাং বা অন্যান্য ধাতব পদার্থ মিশ্রণের উপর নির্ভর করে এ শিল্পের স্থায়িত্ব, স্বচ্ছতা, মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা। উল্লেখ্যযোগ্য কাঁসার তৈজসপত্রাদির মধ্যে কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাঁধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, চায়নিজ, মালা, দরাজ, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামে রয়েছে থালা ও গ্লাস। স্বন্দেশ গ্লস নামে একটি বিশেষ গ্লস তৈরি হয়। এই গ্লাসটিতে চার পার্ট রয়েছে। ১ম পার্টে পানি, ২য় পার্টে মিষ্টি, ৩য় পার্টে পানসুপারী, ৪র্থ পার্টে পান মসলা একই সাথে রাখা যায়। কৃষ্ণচুড়া, ময়ুরকণ্ঠি, বকঠুট, ময়ুর আঁধার, মলিকা ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় জগ। সাদাবাটি, কাংরিবাঠি, বোলবাটি, রাজভোগী, রাঁধেশ্বরী, জলতরঙ্গ, রামভোগী, গোলবাটি, কাজল বাটি, ঝিনাই বাটি, ফুলতুলি বাটি, মালা বাটি ইত্যাদি নাম রয়েছে বাটির নাম। বোয়াল মুখী, হাতা, চন্দ্রমুখী, চাপিলামুখী, পঞ্চমুখী, কবুতর বুটি, ঝিনাইমুখী ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় চামচ।

 

 

এছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির বাহিরে রয়েছে কাঁসার তৈরী নানা সামগ্রী। পূজা-অর্চনায় মঙ্গল প্রদীপ, কোসাকুর্ষি, মঙ্গলঘট, ইত্যাদি কাঁসার বাদ্যযন্ত্র উল্লেখ্যযোগ্য। সেকাল থেকেই বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের মানুষজন ওইসব তৈজসপত্র বড় দরদ দিয়েই পারিবারিক ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করে আসছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ শিল্পের সাথে বেশী জড়িত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই দেশ ত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে চলে যায়। পাকহানাদার বাহিনী কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িতদের বাড়ীঘর আগুনে পুড়ে দেয়। স্বাধীনতার পর ক্ষুদ্র অংশ দেশে ফিরে আসে। নানা প্রেক্ষাপটে কাসা কর্মকারের সংখ্যা কমতে থাকে। এরপর নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর ধরণ বদলে যাওয়ায় এ শিল্পে ধ্বস নেমেছে। গত ১৫ বছরে কাঁসা-পিতলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ গুন। কাঁচামাল ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে পারছে না এ শিল্পটি।

নারায়ন কর্মকার জানান, আগের মতো অর্ডার নেই তাই প্রায় সময় হাতে কাজ থাকেনা। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটালেও পৈত্রিক পেশার মায়ায় পেশাটি ছাড়তে পারছিনা। অনেকেই টিকতে না পেরে নানা পেশায় চলে গেছে। পৈত্রিক পেশা আঁকরে ধরে থাকা প্রায় ২০/২৫টি পরিবার আজও কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে।

 

 

কাঁসা শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অংকন কর্মকার জানান, কাঁসার নানা উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা উচ্চমূল্যে খরিদ করতে চায় না। তাই বর্তমানে এ শিল্পের চরম দুর্দিন চলছে। অনেকেই বাঁচার তাগিদে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। তবে সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা পেলে ডিজিটালাইজ পদ্ধতিতে সল্প সময়ে এ শিল্পটিকে আরো উন্নত করা যাবে এবং শিল্পটির হারানো ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভীর হাসান রুমান জানান, ঐহিত্যবাহী কাঁসা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিজনকে ১৮ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান জানান, ইতিমধ্যে কাঁসা শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের মাঝে উপকরণ বিতরণ ও কমন সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন করেছি। এই শিল্পের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনী উদ্যোগ। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়,পর্যটন মন্ত্রনালয় ও সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে যুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

অস্তিত হারাতে বসেছে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প

আপডেট সময় : ১০:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি :

কাঁসা তৈরির টুং টাং শব্দ আর ক্রেতাদের পদভারে একসময় মুখরিত থাকতো জামালপুর ইসলামপুরের কাঁসারীপাড়া। এখানকার কাঁসার কদর ছিল দেশজুড়ে। ঐতিহ্যবাহী এ কাঁসা শিল্পটি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছিল। সেই চিত্র এখন আর নেই। মেলামাইন ও প্লাষ্টিকসহ সহজলভ্য নানা সামগ্রীর বাজারে টিকতে না পেরে অস্তিত হারাতে বসেছে ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুরের উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামে কাঁসা শিল্প গড়ে উঠে। পরে এলাকাটি কাঁসারীপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। এক সময় ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প বিশ্ববাজারে বেশ কদর ছিল। আজ থেকে দুই যুগ আগেও কোনো বিয়ে-শাদী, আকিকা, সুন্নতে খৎনাসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসাবে দেয়া হতো কাঁসার জিনিসপত্র।

 

 

এছাড়াও কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাকরিতে যোগদান কিংবা অন্যত্র বদলির সময় এমনকি কোনো এমপি-মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদের সংবর্ধিত করা হতো কাঁসার তৈরী সামগ্রী দিয়ে। এসব নানা কারণে ক্রমেই কাঁসার জিনিসপত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সারাদেশ থেকে কাঁসা ব্যাবসায়ীরা কাঁসা সামগ্রী কিনতে ভীড় জমাতো ইসলামপুরে। কাঁসার কারখানাগুলোতে কারিগররা দিনরাত কাজ করেও কাঁসা সামগ্রী সরবরাহে হিমশিম খেতো।

কাঁসা শিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি কারুকার্য নান্দনিক কাঁসা একসময় দেশের গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছিল সুদুর লন্ডনে। তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯৪২ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম শহরে সারা বিশ্বের হস্তশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। ওই প্রদর্শনীতে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্পের কারিগর স্বর্গীয় জগৎচন্দ্র কর্মকার ইসলামপুরের কাঁসার তৈজসপত্রাদি প্রদর্শন করেছিল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প হিসাবে স্বর্ণপদক লাভ করে। এরপর থেকে সারা বিশ্বে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্পের পরিচিতি ঘটে।

 

 

ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবে পাঠ্যপুস্তকেও স্থান করে নেয় ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প। কাঁসা শিল্প কারখানায় কর্মরত কারিগররা জানান, কাঁসা হলো একটি মিশ্র ধাতব পদার্থ। তামা বা কপার ৮০০ গ্রাম এর সাথে টিনএ্যাংগট ২০০ গ্রাম মিশিয়ে আগুনে পুড়ালে ১ কেজি কাঁসা তৈরি হয়।

এছাড়া তামা, দস্তা, রাং বা অন্যান্য ধাতব পদার্থ মিশ্রণের উপর নির্ভর করে এ শিল্পের স্থায়িত্ব, স্বচ্ছতা, মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা। উল্লেখ্যযোগ্য কাঁসার তৈজসপত্রাদির মধ্যে কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাঁধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, চায়নিজ, মালা, দরাজ, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামে রয়েছে থালা ও গ্লাস। স্বন্দেশ গ্লস নামে একটি বিশেষ গ্লস তৈরি হয়। এই গ্লাসটিতে চার পার্ট রয়েছে। ১ম পার্টে পানি, ২য় পার্টে মিষ্টি, ৩য় পার্টে পানসুপারী, ৪র্থ পার্টে পান মসলা একই সাথে রাখা যায়। কৃষ্ণচুড়া, ময়ুরকণ্ঠি, বকঠুট, ময়ুর আঁধার, মলিকা ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় জগ। সাদাবাটি, কাংরিবাঠি, বোলবাটি, রাজভোগী, রাঁধেশ্বরী, জলতরঙ্গ, রামভোগী, গোলবাটি, কাজল বাটি, ঝিনাই বাটি, ফুলতুলি বাটি, মালা বাটি ইত্যাদি নাম রয়েছে বাটির নাম। বোয়াল মুখী, হাতা, চন্দ্রমুখী, চাপিলামুখী, পঞ্চমুখী, কবুতর বুটি, ঝিনাইমুখী ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় চামচ।

 

 

এছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির বাহিরে রয়েছে কাঁসার তৈরী নানা সামগ্রী। পূজা-অর্চনায় মঙ্গল প্রদীপ, কোসাকুর্ষি, মঙ্গলঘট, ইত্যাদি কাঁসার বাদ্যযন্ত্র উল্লেখ্যযোগ্য। সেকাল থেকেই বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের মানুষজন ওইসব তৈজসপত্র বড় দরদ দিয়েই পারিবারিক ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করে আসছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ শিল্পের সাথে বেশী জড়িত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই দেশ ত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে চলে যায়। পাকহানাদার বাহিনী কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িতদের বাড়ীঘর আগুনে পুড়ে দেয়। স্বাধীনতার পর ক্ষুদ্র অংশ দেশে ফিরে আসে। নানা প্রেক্ষাপটে কাসা কর্মকারের সংখ্যা কমতে থাকে। এরপর নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর ধরণ বদলে যাওয়ায় এ শিল্পে ধ্বস নেমেছে। গত ১৫ বছরে কাঁসা-পিতলের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ গুন। কাঁচামাল ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে পারছে না এ শিল্পটি।

নারায়ন কর্মকার জানান, আগের মতো অর্ডার নেই তাই প্রায় সময় হাতে কাজ থাকেনা। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটালেও পৈত্রিক পেশার মায়ায় পেশাটি ছাড়তে পারছিনা। অনেকেই টিকতে না পেরে নানা পেশায় চলে গেছে। পৈত্রিক পেশা আঁকরে ধরে থাকা প্রায় ২০/২৫টি পরিবার আজও কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে।

 

 

কাঁসা শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অংকন কর্মকার জানান, কাঁসার নানা উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা উচ্চমূল্যে খরিদ করতে চায় না। তাই বর্তমানে এ শিল্পের চরম দুর্দিন চলছে। অনেকেই বাঁচার তাগিদে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। তবে সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা পেলে ডিজিটালাইজ পদ্ধতিতে সল্প সময়ে এ শিল্পটিকে আরো উন্নত করা যাবে এবং শিল্পটির হারানো ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভীর হাসান রুমান জানান, ঐহিত্যবাহী কাঁসা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিজনকে ১৮ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান জানান, ইতিমধ্যে কাঁসা শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের মাঝে উপকরণ বিতরণ ও কমন সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন করেছি। এই শিল্পের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনী উদ্যোগ। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়,পর্যটন মন্ত্রনালয় ও সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে যুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

বা/খ: জই