ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অতিথি পাখির খুনসুটিতে মুখরিত চলনবিল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:১০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

বর্ষা মওসুমে চলনবিলের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার। শুষ্ক মওসুমে (মূল বিলটি) আয়তন কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক নয় থেকে ৩১ বর্গকিলোমিটার। প্রকৃতির হলুদ ও সবুজ রং ছড়িয়ে পড়েছে চলনবিলের চারদিকে। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির রং-বেরঙের পাখির কলকাকলি, খুনসুটি, ওড়াউড়ি ও পানির ভেতর ডুব দেয়া আর দলবেঁধে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখে তৃপ্ত হন পর্যটকরা।

আগে বাংলাদেশে বছরের নির্ধারিত সময়ে এসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থেকে পরিযায়ী পাখি নিজভূমিতে ফিরে যেত। এখন থাকে আরও বেশিদিন। কিছু কিছু থেকেও যায়। ওরা পরে দেশের পাখিদের দলভূক্ত পাখিদের সমাজে অতিথি হয়ে। গত ক’বছর ধরে শীতের অনেকটা আগেই পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। একটা সময় এসব অতিথি পাখি নির্দিষ্ট কিছু জলাশয়ে আসতো। বেশি আসত সিলেট সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজারের হাওড়গুলোয়। পরিযায়ী পাখি যেসব জায়গায় নামত এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চর মনপুরা, উড়িরচর মুহুরী ড্যাম, নিঝুম দীপ, পতেঙ্গা সৈকত, সোনাদিয়া, মহেশখালী দীপ, আইলার বিল বাইক্কা হাওড়, হাকালুকি হাওড়, টাঙ্গুয়ার হাওড়। ক’বছর ধরে এর বাইওে আরও অনেক এলাকা যুক্ত হয়েছে।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের ডিন ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু চলনবিলই নয়, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা নদীতে পাখির আনাগোনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ প্রকৃতিতে নিরাপত্তাবোধ থেকেই পাখির আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, শীতপ্রধান দেশ থেকে পাখি বাংলাদেশে আসে। সাগর মহাসাগর পাহাড় বনভূমি মরুভূমি পেরোনোর সময় পরিযায়ী পাখিদের পথ চিনতে একটুও ভূল হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘দেহজ গ্রন্থি, আলোকরশ্মি, বাতাসের গতি, রাতে আকাশের তারা, ভূমির গন্ধ ও আকৃতির সঙ্গে জিও ম্যাগনেটিজম বিষয়টি পাখিদের একটি জিনগত প্রক্রিয়া। এরা কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেয়ার আগে শরতে বেশি করে খাবার খেয়ে পালকে শক্তি সঞ্চয় করে। আকাশে উল্টো তীরের আকৃতিতে ওড়ে। সামনে অথবা পেছনে থাকে গাইড পাখি। যারা এর আগে বাংলাদেশে এসেছিল, তারা নেতৃত্ব দিয়ে পরিযায়ী পাখিদের পথ চিনিয়ে আনে। এভাবে প্রতি বছর গাইড পাখি তৈরি হয়। জন্মের পর ছানাকে মা পাখি শিখিয়ে দেয় এক সময় অনেক পথ উড়ে ভিন দেশে যেতে হবে।

 

চলনবিল ঘুরে বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘এ বছর শীত বেশি পড়েছে, তার ওপর প্রাকৃতিক কারণে কমে গেছে জলজ উদ্ভিদ। পরিযায়ী পাখীদের বড় একটি অংশ পানিফল, হেলেঞ্চা, বল্লুয়া,চাল্লিয়া ইত্যাদিসহ শাপলাপাতাকে ঘিরে বসবাস করে। এসব জলজ উদ্ভিদ থেকে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং পোকা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা মওসুমের পর জেগে ওঠা সমতল ভূমিতে ফসল আবাদে প্রচুর পরিমান রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রযোগ এবং কচুরিপানার কারণে পনির নিচে থাকা জলজ উদ্ভিদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর যেভাবে পাখির উপস্থিতি দেখা মিলত, এ বছর তার চেয়ে বেশি এসেছে। চলনবিলের বিশাল অংশ জলজ উদ্ভিদ শুন্য। জলজ উদ্ভিদ কমে গেছে অন্তত ৪০ শতাংশ। তবে অন্যান্য বছর থেকে বেড়েছে পাখির সংখ্য ও প্রজাতি। গত বছর চলনবিলে ৩০ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এ বছর ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২ প্রজাতির দেখা মিলেছে।
এই শীতে চলনবিলের মূল আকর্ষণ হচ্ছে নানা ধরনের পাখি। পাখির রঙে বিচিত্রময় হয়ে উঠে চলনবিলের আকাশ। হাজারো পাখির ওড়াউড়ি , কিচিরমিচির আর ডানায় রোদের ঝিকিমিকি চলনবিলকে যন্ত্র-কোলাহল থেকে আলাদা করে রাখে। বিলের আকাশ জুড়ে ঘুড়ে বেড়ায় পাখি। কখনো ভেজা ঘাসে দল বেঁধে বিশ্রাম নেয়। কখনো টলমল করা পানিতে বুক ডুবিয়ে ভাসতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে তৃপ্ত হন পর্যটকরা।

 

পাখিপ্রেমী সালেহ উদ্দিন জানান, পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য চলনবিলে জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে প্রতি বছর বাড়বে পরিযায়ী পাখির আগমন। চলনবিলের শাপলা শালুকসহ পর্যাপ্ত খাবার সংস্থান থাকায় এই বিলে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। পরিযায়ী পাখি এদেশের পরিবেশের ওপর গৃরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাখিদের বিষ্ঠা চলনবিলের মাছের উৎকৃষ্ঠ খাবার। তিনি অভিযোগ করেন, চলনবিলে প্রতিদিন রাতের আধারে পাখি শিকার করছে চোরা শিকারিরা। যা ভোরের আলো ফোটার আগেই মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট হাতে এবং স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। বিষটোপ দিয়ে পাখি হত্যা করা হচ্ছে। তিনি চলনবিলে বিষটোপ দিয়ে হত্যা করা পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন।

 

বিশিষ্ট পাখিবিদ (অবঃ) অধ্যাপক ড. জাকির হোসাইন জানান, এবছর পাখির উপস্থিতি অন্যান্য বছর থেকে কম। তবে আমি ৪২ প্রজাতির পাখির দেখা পেয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজ সরালি, বালিহাঁস, পাতি তিলি হাঁস, মরচে রং ভূতিহাঁস, গিরিহাঁস, পিয়ং হাঁস, গয়ার বা সাপপাখি, পাতিকুট, পাতি পানমুরগি, বেগুনি কামেল, পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জলময়ুর, ছোট ডুবুরি, ধলাবক, বেগুনি বক, ধুপনি বক, মাছরাঙা, গোবক, লালফিদ্দা, বড়গুটি ঈগল, পুরের পানকাপাস, পালাসি কুরাঈগল, সঙ্খচিল, প্রায় ৫-৭ প্রজাতির ফুটকি, কালা লেজ জৌরালি, তিলা লালপা, বিল বাটান, গেওয়ালা বাটান, কালাপাখ ঠেঙি, লাল লতিকা টিটি, মেটেমাথা টিটি, রাঙাচ্যাগা ইত্যাদি।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন ‘পাখি শিকারিরা বিভিন্ন কায়দায় পাখি ধরে নিয়ে ফেরি করে গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করছে। তাই এসব অতিথি পাখি আর চলনবিল নিরাপদ ভাবছে না। ফলে কমছে পাখির সংখ্যা। সেই সাথে নিয়ম না মেনে চলনবিলে করা হচ্ছে ফিশারি। এ কারণেও পাখির আগমন কমে গেছে। উদ্ভিদ ও জলজ বৈচিত্র্য নেই। নদী বিল খনন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে চলনবিলকে নিরাপদ রাখতে পারলে সারা বছর এখানে পাখি থাকবে। জলজ উদ্ভিদের ভেতর লুকিয়ে থেকে পরিযায়ী পাখিরা নিজেকে শক্রর হাত থেকে রক্ষা করে এবং খাবার সংগ্রহ করে। জলজ বনে অনেক প্রজাতির পাখি ডিম পাড়ে। তাই জলজ বন ও জলজ উদ্ভিদ না থাকলে পাখি আসবে না। এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরী বলে তিনি জানিয়েছেন।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

অতিথি পাখির খুনসুটিতে মুখরিত চলনবিল

আপডেট সময় : ০১:১০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

বর্ষা মওসুমে চলনবিলের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার। শুষ্ক মওসুমে (মূল বিলটি) আয়তন কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক নয় থেকে ৩১ বর্গকিলোমিটার। প্রকৃতির হলুদ ও সবুজ রং ছড়িয়ে পড়েছে চলনবিলের চারদিকে। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির রং-বেরঙের পাখির কলকাকলি, খুনসুটি, ওড়াউড়ি ও পানির ভেতর ডুব দেয়া আর দলবেঁধে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখে তৃপ্ত হন পর্যটকরা।

আগে বাংলাদেশে বছরের নির্ধারিত সময়ে এসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থেকে পরিযায়ী পাখি নিজভূমিতে ফিরে যেত। এখন থাকে আরও বেশিদিন। কিছু কিছু থেকেও যায়। ওরা পরে দেশের পাখিদের দলভূক্ত পাখিদের সমাজে অতিথি হয়ে। গত ক’বছর ধরে শীতের অনেকটা আগেই পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। একটা সময় এসব অতিথি পাখি নির্দিষ্ট কিছু জলাশয়ে আসতো। বেশি আসত সিলেট সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজারের হাওড়গুলোয়। পরিযায়ী পাখি যেসব জায়গায় নামত এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চর মনপুরা, উড়িরচর মুহুরী ড্যাম, নিঝুম দীপ, পতেঙ্গা সৈকত, সোনাদিয়া, মহেশখালী দীপ, আইলার বিল বাইক্কা হাওড়, হাকালুকি হাওড়, টাঙ্গুয়ার হাওড়। ক’বছর ধরে এর বাইওে আরও অনেক এলাকা যুক্ত হয়েছে।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের ডিন ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু চলনবিলই নয়, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা নদীতে পাখির আনাগোনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ প্রকৃতিতে নিরাপত্তাবোধ থেকেই পাখির আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, শীতপ্রধান দেশ থেকে পাখি বাংলাদেশে আসে। সাগর মহাসাগর পাহাড় বনভূমি মরুভূমি পেরোনোর সময় পরিযায়ী পাখিদের পথ চিনতে একটুও ভূল হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘দেহজ গ্রন্থি, আলোকরশ্মি, বাতাসের গতি, রাতে আকাশের তারা, ভূমির গন্ধ ও আকৃতির সঙ্গে জিও ম্যাগনেটিজম বিষয়টি পাখিদের একটি জিনগত প্রক্রিয়া। এরা কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেয়ার আগে শরতে বেশি করে খাবার খেয়ে পালকে শক্তি সঞ্চয় করে। আকাশে উল্টো তীরের আকৃতিতে ওড়ে। সামনে অথবা পেছনে থাকে গাইড পাখি। যারা এর আগে বাংলাদেশে এসেছিল, তারা নেতৃত্ব দিয়ে পরিযায়ী পাখিদের পথ চিনিয়ে আনে। এভাবে প্রতি বছর গাইড পাখি তৈরি হয়। জন্মের পর ছানাকে মা পাখি শিখিয়ে দেয় এক সময় অনেক পথ উড়ে ভিন দেশে যেতে হবে।

 

চলনবিল ঘুরে বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘এ বছর শীত বেশি পড়েছে, তার ওপর প্রাকৃতিক কারণে কমে গেছে জলজ উদ্ভিদ। পরিযায়ী পাখীদের বড় একটি অংশ পানিফল, হেলেঞ্চা, বল্লুয়া,চাল্লিয়া ইত্যাদিসহ শাপলাপাতাকে ঘিরে বসবাস করে। এসব জলজ উদ্ভিদ থেকে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং পোকা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা মওসুমের পর জেগে ওঠা সমতল ভূমিতে ফসল আবাদে প্রচুর পরিমান রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রযোগ এবং কচুরিপানার কারণে পনির নিচে থাকা জলজ উদ্ভিদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর যেভাবে পাখির উপস্থিতি দেখা মিলত, এ বছর তার চেয়ে বেশি এসেছে। চলনবিলের বিশাল অংশ জলজ উদ্ভিদ শুন্য। জলজ উদ্ভিদ কমে গেছে অন্তত ৪০ শতাংশ। তবে অন্যান্য বছর থেকে বেড়েছে পাখির সংখ্য ও প্রজাতি। গত বছর চলনবিলে ৩০ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এ বছর ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২ প্রজাতির দেখা মিলেছে।
এই শীতে চলনবিলের মূল আকর্ষণ হচ্ছে নানা ধরনের পাখি। পাখির রঙে বিচিত্রময় হয়ে উঠে চলনবিলের আকাশ। হাজারো পাখির ওড়াউড়ি , কিচিরমিচির আর ডানায় রোদের ঝিকিমিকি চলনবিলকে যন্ত্র-কোলাহল থেকে আলাদা করে রাখে। বিলের আকাশ জুড়ে ঘুড়ে বেড়ায় পাখি। কখনো ভেজা ঘাসে দল বেঁধে বিশ্রাম নেয়। কখনো টলমল করা পানিতে বুক ডুবিয়ে ভাসতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে তৃপ্ত হন পর্যটকরা।

 

পাখিপ্রেমী সালেহ উদ্দিন জানান, পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য চলনবিলে জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে প্রতি বছর বাড়বে পরিযায়ী পাখির আগমন। চলনবিলের শাপলা শালুকসহ পর্যাপ্ত খাবার সংস্থান থাকায় এই বিলে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। পরিযায়ী পাখি এদেশের পরিবেশের ওপর গৃরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাখিদের বিষ্ঠা চলনবিলের মাছের উৎকৃষ্ঠ খাবার। তিনি অভিযোগ করেন, চলনবিলে প্রতিদিন রাতের আধারে পাখি শিকার করছে চোরা শিকারিরা। যা ভোরের আলো ফোটার আগেই মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট হাতে এবং স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। বিষটোপ দিয়ে পাখি হত্যা করা হচ্ছে। তিনি চলনবিলে বিষটোপ দিয়ে হত্যা করা পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন।

 

বিশিষ্ট পাখিবিদ (অবঃ) অধ্যাপক ড. জাকির হোসাইন জানান, এবছর পাখির উপস্থিতি অন্যান্য বছর থেকে কম। তবে আমি ৪২ প্রজাতির পাখির দেখা পেয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজ সরালি, বালিহাঁস, পাতি তিলি হাঁস, মরচে রং ভূতিহাঁস, গিরিহাঁস, পিয়ং হাঁস, গয়ার বা সাপপাখি, পাতিকুট, পাতি পানমুরগি, বেগুনি কামেল, পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, জলময়ুর, ছোট ডুবুরি, ধলাবক, বেগুনি বক, ধুপনি বক, মাছরাঙা, গোবক, লালফিদ্দা, বড়গুটি ঈগল, পুরের পানকাপাস, পালাসি কুরাঈগল, সঙ্খচিল, প্রায় ৫-৭ প্রজাতির ফুটকি, কালা লেজ জৌরালি, তিলা লালপা, বিল বাটান, গেওয়ালা বাটান, কালাপাখ ঠেঙি, লাল লতিকা টিটি, মেটেমাথা টিটি, রাঙাচ্যাগা ইত্যাদি।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন ‘পাখি শিকারিরা বিভিন্ন কায়দায় পাখি ধরে নিয়ে ফেরি করে গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করছে। তাই এসব অতিথি পাখি আর চলনবিল নিরাপদ ভাবছে না। ফলে কমছে পাখির সংখ্যা। সেই সাথে নিয়ম না মেনে চলনবিলে করা হচ্ছে ফিশারি। এ কারণেও পাখির আগমন কমে গেছে। উদ্ভিদ ও জলজ বৈচিত্র্য নেই। নদী বিল খনন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে চলনবিলকে নিরাপদ রাখতে পারলে সারা বছর এখানে পাখি থাকবে। জলজ উদ্ভিদের ভেতর লুকিয়ে থেকে পরিযায়ী পাখিরা নিজেকে শক্রর হাত থেকে রক্ষা করে এবং খাবার সংগ্রহ করে। জলজ বনে অনেক প্রজাতির পাখি ডিম পাড়ে। তাই জলজ বন ও জলজ উদ্ভিদ না থাকলে পাখি আসবে না। এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরী বলে তিনি জানিয়েছেন।

বা/খ: এসআর।