২০ নভেম্বর কবি সুফিয়া কামালের ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী
- আপডেট সময় : ০৭:০৫:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০২৩
- / ৫৬৫ বার পড়া হয়েছে

“হে কবি নিরব !কেন-ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে নাকি তব বন্দনায়? কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-‘দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
এমনই প্রশ্ন রেখে গিয়েছিলেন যে নারী তিনি হচ্ছেন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তীব্র গর্জন। যে গর্জনে ভিত কেঁপে উঠেছিল মৌলবাদের। নারী অধিকারের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। সেই মহীয়সী নারীর নাম কবি বেগম সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন প্রগতিবাদী চিন্তার প্রতিক। সুষম সমাজ চিন্তা যার মস্তিষ্ক থেকে সমাজে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। শুধু সাহিত্য নয় রাজনীতিও তাকে নাড়া দিয়েছিল। গণতন্ত্রকে অলংকৃত করলে তিনি ছিলেন আলোকবর্তিকা। তখন কেউ কি ভেবেছিল ১৯১১ সালের ২০শে জুন বরিশাল জেলার শায়েস্তাগঞ্জে যে মেয়েটির জন্ম হয়েছিল সে একদিন রচিবে জীবনানন্দের বাংলায় অধিকারের স্বপ্ন ভান্ডার।
আজ ২০ ডিসেম্বর দিনাজপুর মহিলা পরিষদের উদ্যোগে পরিষদের হলরুমে সকালে কবি ও সাহিত্যিক প্রয়াত বেগম সুফিয়া কামালের ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিক উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমনই বক্তব্য বেরিয়ে আসে বক্তব্যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, বহুমাতৃক প্রতিভার ধারক ও বাহক ছিলেন তিনি। শৃঙ্খলিত নারীকে সুরভিত আলোয় আনতে তার অগ্রযাত্রা ছিল কন্ঠ কাকীর্ণ। হাজারো প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেই তিনি অনুকূলতাকে হাতে পেয়েছেন। কবিতা ও সাহিত্য এবং রাজনীতি এই তিনটি বিষয়কে তিনি একই সুতোয় গাথতে পেরেছিলেন। মানুষের ভালোবাসাই ছিল তার বাসনার কেন্দ্রস্থল।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার শুরুতেই তার প্রতিকৃতিতে প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে দিনাজপুর মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এসময় তার ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। মহীয়সী এই নারী ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি দীর্ঘ কর্মজীবনে সুফিয়া কামাল মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫৬ সালে ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে ছায়ানটের সভাপতি, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের সময় মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গঠন এবং ওই সময়ে অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন।
সুফিয়া কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জীবিতকালে কবি সুফিয়া কামাল প্রায় ৫০ টি পুরস্কার লাভ করেন। যার মধ্যে রয়েছে-বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), লেনিন পদক (১৯৭০, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫) ও স্বাধীনতা দিবস পদক। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তমসা-ই-ইমতিয়াজ’ পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিলে কবি সুফিয়া কামাল তা প্রত্যাখ্যান করেন।
কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা কার্যালয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জননী সাহসিকা কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাহাবুবা খাতুন-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মিনতি ঘোষ, সহ সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা সানু, অর্থ সম্পাদক রত্না মিত্র, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা পলি, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন, সদস্য শুকলা কুন্ডু, রেহেনা বেগম, সিবানী উড়াও কৃষ্ণা ঘোষ, প্রিয়তি, কলি প্রমুখ।
‘বাঙালি জাতির বিবেচিত বিবেক’ সুফিয়া কামাল এর আলোচনা সভায় লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য রুকসানা বিলকিস।
বাখ//আর