ঢাকা ০৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সবুজ চাদরে ছেয়ে যাবে হোসনাবাদ গ্রাম

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৃক্ষ বা গাছ। শব্দটি দুটি বর্ণের হলেও এ পৃথিবীতে প্রাণীকুলের জীবন-জীবিকার নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো এটি। সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে অন্যতম এই বৃক্ষের ওপর মানবজাতী ও অন্যান্য প্রাণীকূল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। আর প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ অক্সিজেন উৎপন্ন ও নির্গত হয় এই বৃক্ষ থেকেই। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণীজগতের বর্জন করা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে বৃক্ষ। তাই বৃক্ষকে মানব জীবনের ছায়াস্বরূপ বলা হয় ।

তাছাড়া পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সঠিক রাখা, পরিষ্কার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বন্যা, জলোচ্ছাস, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধ ছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৃক্ষের অপরিসীম গুরুত্ব। তাছাড়া বৃক্ষ হতে আমরা জীবন রক্ষাকারী নানা রকমের ওষুধ পেয়ে থাকি। তাই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, জাতীয় অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

এরই জন্য বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যান্তঞ্চল শরিকর ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামকে ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলে সমৃদ্ধ একটি বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকারই সন্তান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল। তিনি পুরো গ্রামটিকে সবুজ চাদরে ঢেকে সবুজায়ন করতে এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন গার্ডেনিং হোসনাবাদ। বর্তমানে তিনি (পাভেল) দেশের সনামধন্য জাতীয় দৈনিক একটি পএিকার ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তার (পাভেল) এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন একই গ্রামের কয়েকজন তরুন সেচ্ছাসেবক।

তার এই বাগান তৈরি পরিকল্পনায় রয়েছে স্কুলভিত্তিক বাগান তৈরি যেখানে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০টি করে ফল গাছের মধ্যে থাকবে একটি ঔষধি, দুটি ফুল, পাঁচটি দেশী ফল, একটি বিদেশী ও একটি শোভাবর্ধনকারী গাছ থাকবে। তাছাড়া ফুলের বাগানে থাকবে মাল্টিকালার ফুলের বীজ, ৫০টি স্বল্পমেয়াদি ফুলের চারা ও পাঁচটি দীর্ঘ মেয়াদি ফুলের চারা।

হোসনাবাদ টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে উত্তর দিকে বাঁধ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি ফুল ও ঔষধি গাছের চারা লাগানো হবে। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাকবেন একদল সেচ্ছাসেবক। এই প্রকল্পে সফল হলে পর্যায়ক্রমে এলাকার ভাঙ্গা রাস্তাসহ হোসনাবাদের অন্যান্য রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ভলান্টিয়ার গার্ডেন যে সকল সেচ্ছাসেবী এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাগান তৈরি।

পুরস্কার হিসেবে গাছ উপহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মেধা পুরস্কার হিসেবে গাছ বিতরণ। মসজিদ ভিত্তিক ফুলের বাগান: প্রতিটি মসজিদের আঙ্গীনায় ৫টি করে দীর্ঘমেয়াদী ফুলের গাছ লাগানো। রাস্তাকে বাগান বানানো রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে রাস্তার দুই পাশে ফুল ও ঔষধি গাছ লাগানো। প্রতিটি বাড়ি একটি বাগান হোসনাবাদ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলের অর্থকরী গাছ লাগাতে সহায়তা করা। ছাদ বাগান প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে একটি করে বাগান তৈরির উদ্যোগ। এডভান্সড মাটিভেশন: গার্ডেনিংকে যারা পেশা হিসেবে নিতে চায় তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম, আগ্রহীদের দেশের বৃহৎ নার্সারি ও কৃষি প্রকল্প ভিজিট, তাদের সবজি কিনব না, বিক্রি করব এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি বাড়িতে মৌসুমী সবজি চাষে উৎসাহিত করা।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার হোসনাবাদ গ্রামকে সবুজ ভূবনে রুপান্তরের লক্ষ্যে নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন এই বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল। এসময় এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধশত ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলের অর্থকরী গাছের চারা রোপন করেন তিনি। বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন, হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নিয়াজুল ইসলাম (ফিরোজ খলিফা), বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের সেচ্ছাসেবক রাসেল শিকদার, মোঃ জসিম, জাহিদুল ইসলাম (উজ্জ্বল), মঈম রাঢ়ী, তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ তারেক রহমান, মোঃ শাফিন, মোঃ কায়েস, মোঃ সোহান, মোঃ রবিউল ইসলাম।

এ সময় এ মহৎ কাজে সাথে থাকতে পেরে উদ্যোগক্তা ও বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেচ্ছাসেবীরা বলেন, আমাদের এই বৃহত্তর হোসনাবাদ গ্রাম তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আমরা মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল ভাইয়ের উদ্যোগে এই গ্রামটিকে সবুজায়ন করতে চাচ্ছি। এর জন্য আমাদের এ কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে গার্ডেনিং হোসনাবাদ। আমরা তার এই কার্যক্রমকে সফল করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নিয়াজুল ইসলাম (ফিরোজ খলিফা) বলেন, আমাদের এলাকার সন্তান পাভেল শহরের যান্ত্রিক শহরে থেকেও তার মধ্যে এই বৃক্ষ প্রেম ও গ্রামকে সবুজায়নের মনোভাব সত্যিই প্রসংশনীয় তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকেই বৃক্ষরোপণ করেন কিন্তু এতে পরিবেশের উপকার হলেও আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন কাজে আসেনা। তবে গার্ডেনিং হোসনাবাদের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে যে গাছগুলো লাগানো হচ্ছে সেগুলো অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ফুল এবং ঔষধি ফল গাছ যা ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে। আর তাদের এই কার্যক্রম যদি চলমান থাকে তাহলে এলাকাবাসী সচেতন হবে এবং বৃক্ষরোপণে উৎসাহী হবে।

নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গাছ আমাদের জীবনের ও পরিবেশের অন্যতম একটি অংশ। পুরো গ্রামকে গার্ডেনিং হোসনাবাদ করার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই। যারা এই সবুজায়নের মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

উদ্যোগক্তা ও বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জগতের সকল সৃষ্টিই কোন না কোন উদ্দেশ্য সাধনে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গাছ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বৈষয়িক প্রয়োজনে তাই বৃক্ষরোপণ করা একান্ত দরকার। যে কোনো ফল ও ফসল উৎপন্ন হলে তা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এমনকি ওই ফল বা ফসল যদি উৎপাদনকারী বা প্রকৃত মালিক নাও পায়, কেউ যদি চুরি করে নিয়ে যায়, তাতেও সমাজের কারও না কারও প্রয়োজন পূর্ণ হয়। অর্থাৎ ওই ফল বা ফসল সর্বাবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন- যদি জানো আগামীকাল কেয়ামত, তথাপিও আজ যদি হাতে কোনো বীজ বা চারাগাছ থাকে, তা বপন কর। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন- ‘প্রতিটি বৃক্ষ এবং তার অসংখ্য পাতা প্রতিনিয়ত আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে। অতএব, বেশি নেকি হাসিল করার জন্য বেশি করে বৃক্ষরোপণ কর। পরিবেশের স্বাভাবিক প্রয়োজন এবং সভ্যতা বিকাশের জন্য বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। রাসুল (সা.) নিজে বৃক্ষরোপণ করে মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহী করে তুলেছেন। বৃক্ষরোপণকে তিনি ইবাদতের সঙ্গে একাত্ম করে দেখেছেন। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যেমে আমার নিজ গ্রাম হোসনাবাদকে সবুজায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আর আমার এদ্যাগকে সফল করার লক্ষ্যে একঝাঁক তরুন সেচ্ছাসেবী রয়েছেন। যারা বিনাস্বার্থে আমার এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলস সহায়তা করে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

বাখ//এস

নিউজটি শেয়ার করুন

সবুজ চাদরে ছেয়ে যাবে হোসনাবাদ গ্রাম

আপডেট সময় : ০২:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৃক্ষ বা গাছ। শব্দটি দুটি বর্ণের হলেও এ পৃথিবীতে প্রাণীকুলের জীবন-জীবিকার নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো এটি। সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে অন্যতম এই বৃক্ষের ওপর মানবজাতী ও অন্যান্য প্রাণীকূল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। আর প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ অক্সিজেন উৎপন্ন ও নির্গত হয় এই বৃক্ষ থেকেই। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণীজগতের বর্জন করা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নিঃসরণ করে বৃক্ষ। তাই বৃক্ষকে মানব জীবনের ছায়াস্বরূপ বলা হয় ।

তাছাড়া পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সঠিক রাখা, পরিষ্কার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বন্যা, জলোচ্ছাস, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধ ছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৃক্ষের অপরিসীম গুরুত্ব। তাছাড়া বৃক্ষ হতে আমরা জীবন রক্ষাকারী নানা রকমের ওষুধ পেয়ে থাকি। তাই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, জাতীয় অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

এরই জন্য বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যান্তঞ্চল শরিকর ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামকে ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলে সমৃদ্ধ একটি বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকারই সন্তান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল। তিনি পুরো গ্রামটিকে সবুজ চাদরে ঢেকে সবুজায়ন করতে এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন গার্ডেনিং হোসনাবাদ। বর্তমানে তিনি (পাভেল) দেশের সনামধন্য জাতীয় দৈনিক একটি পএিকার ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তার (পাভেল) এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন একই গ্রামের কয়েকজন তরুন সেচ্ছাসেবক।

তার এই বাগান তৈরি পরিকল্পনায় রয়েছে স্কুলভিত্তিক বাগান তৈরি যেখানে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০টি করে ফল গাছের মধ্যে থাকবে একটি ঔষধি, দুটি ফুল, পাঁচটি দেশী ফল, একটি বিদেশী ও একটি শোভাবর্ধনকারী গাছ থাকবে। তাছাড়া ফুলের বাগানে থাকবে মাল্টিকালার ফুলের বীজ, ৫০টি স্বল্পমেয়াদি ফুলের চারা ও পাঁচটি দীর্ঘ মেয়াদি ফুলের চারা।

হোসনাবাদ টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে উত্তর দিকে বাঁধ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি ফুল ও ঔষধি গাছের চারা লাগানো হবে। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাকবেন একদল সেচ্ছাসেবক। এই প্রকল্পে সফল হলে পর্যায়ক্রমে এলাকার ভাঙ্গা রাস্তাসহ হোসনাবাদের অন্যান্য রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ভলান্টিয়ার গার্ডেন যে সকল সেচ্ছাসেবী এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাগান তৈরি।

পুরস্কার হিসেবে গাছ উপহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মেধা পুরস্কার হিসেবে গাছ বিতরণ। মসজিদ ভিত্তিক ফুলের বাগান: প্রতিটি মসজিদের আঙ্গীনায় ৫টি করে দীর্ঘমেয়াদী ফুলের গাছ লাগানো। রাস্তাকে বাগান বানানো রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে রাস্তার দুই পাশে ফুল ও ঔষধি গাছ লাগানো। প্রতিটি বাড়ি একটি বাগান হোসনাবাদ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলের অর্থকরী গাছ লাগাতে সহায়তা করা। ছাদ বাগান প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে একটি করে বাগান তৈরির উদ্যোগ। এডভান্সড মাটিভেশন: গার্ডেনিংকে যারা পেশা হিসেবে নিতে চায় তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম, আগ্রহীদের দেশের বৃহৎ নার্সারি ও কৃষি প্রকল্প ভিজিট, তাদের সবজি কিনব না, বিক্রি করব এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি বাড়িতে মৌসুমী সবজি চাষে উৎসাহিত করা।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার হোসনাবাদ গ্রামকে সবুজ ভূবনে রুপান্তরের লক্ষ্যে নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন এই বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল। এসময় এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধশত ঔষধি গাছ, ফুল ও ফলের অর্থকরী গাছের চারা রোপন করেন তিনি। বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন, হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নিয়াজুল ইসলাম (ফিরোজ খলিফা), বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের সেচ্ছাসেবক রাসেল শিকদার, মোঃ জসিম, জাহিদুল ইসলাম (উজ্জ্বল), মঈম রাঢ়ী, তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ তারেক রহমান, মোঃ শাফিন, মোঃ কায়েস, মোঃ সোহান, মোঃ রবিউল ইসলাম।

এ সময় এ মহৎ কাজে সাথে থাকতে পেরে উদ্যোগক্তা ও বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেচ্ছাসেবীরা বলেন, আমাদের এই বৃহত্তর হোসনাবাদ গ্রাম তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আমরা মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল ভাইয়ের উদ্যোগে এই গ্রামটিকে সবুজায়ন করতে চাচ্ছি। এর জন্য আমাদের এ কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে গার্ডেনিং হোসনাবাদ। আমরা তার এই কার্যক্রমকে সফল করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নিয়াজুল ইসলাম (ফিরোজ খলিফা) বলেন, আমাদের এলাকার সন্তান পাভেল শহরের যান্ত্রিক শহরে থেকেও তার মধ্যে এই বৃক্ষ প্রেম ও গ্রামকে সবুজায়নের মনোভাব সত্যিই প্রসংশনীয় তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকেই বৃক্ষরোপণ করেন কিন্তু এতে পরিবেশের উপকার হলেও আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন কাজে আসেনা। তবে গার্ডেনিং হোসনাবাদের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে যে গাছগুলো লাগানো হচ্ছে সেগুলো অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ফুল এবং ঔষধি ফল গাছ যা ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে। আর তাদের এই কার্যক্রম যদি চলমান থাকে তাহলে এলাকাবাসী সচেতন হবে এবং বৃক্ষরোপণে উৎসাহী হবে।

নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গাছ আমাদের জীবনের ও পরিবেশের অন্যতম একটি অংশ। পুরো গ্রামকে গার্ডেনিং হোসনাবাদ করার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই। যারা এই সবুজায়নের মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

উদ্যোগক্তা ও বৃক্ষ প্রেমী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জগতের সকল সৃষ্টিই কোন না কোন উদ্দেশ্য সাধনে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গাছ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বৈষয়িক প্রয়োজনে তাই বৃক্ষরোপণ করা একান্ত দরকার। যে কোনো ফল ও ফসল উৎপন্ন হলে তা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এমনকি ওই ফল বা ফসল যদি উৎপাদনকারী বা প্রকৃত মালিক নাও পায়, কেউ যদি চুরি করে নিয়ে যায়, তাতেও সমাজের কারও না কারও প্রয়োজন পূর্ণ হয়। অর্থাৎ ওই ফল বা ফসল সর্বাবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন- যদি জানো আগামীকাল কেয়ামত, তথাপিও আজ যদি হাতে কোনো বীজ বা চারাগাছ থাকে, তা বপন কর। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন- ‘প্রতিটি বৃক্ষ এবং তার অসংখ্য পাতা প্রতিনিয়ত আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে। অতএব, বেশি নেকি হাসিল করার জন্য বেশি করে বৃক্ষরোপণ কর। পরিবেশের স্বাভাবিক প্রয়োজন এবং সভ্যতা বিকাশের জন্য বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। রাসুল (সা.) নিজে বৃক্ষরোপণ করে মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহী করে তুলেছেন। বৃক্ষরোপণকে তিনি ইবাদতের সঙ্গে একাত্ম করে দেখেছেন। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যেমে আমার নিজ গ্রাম হোসনাবাদকে সবুজায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আর আমার এদ্যাগকে সফল করার লক্ষ্যে একঝাঁক তরুন সেচ্ছাসেবী রয়েছেন। যারা বিনাস্বার্থে আমার এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলস সহায়তা করে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

বাখ//এস