ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শ্রীনগরে ইউপি সদস্যের ড্রেজার সিন্ডিকেটের ভরাট বাণিজ্য

মুনীরুল ইসলাম, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪১৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িখাল ইউনিয়নের কবুতরখােলায় রমরমা ড্রেজার বাণিজ্য ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য কৃষি জমি ও জলাশয়। অভিযােগ উঠেছে রাঢ়িখালের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু কালাম মেম্বারের সহায়তায় তার ছেলে মােঃ মাসুদ এবং নাতি যুবলীগ নেতা সৈকত খান গড়ে তুলেছেন ড্রেজারের বিশাল সামরাজ্যে।

এসব ড্রেজার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনে তাদের রেয়েছে অত্র এলাকা জুড়ে একাধিক ভরাট সিন্ডিকেটের দালাল চক্র। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাঢ়িখাল ও ভাগ্যকুল ইউনিয়নের সীমানাবর্তী এলাকার কবুতরখােলা কাজী বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাড়ে ড্রেজারের একাধিক সাব-স্টেশন। সারিবদ্ধভাবে ভাসমান এসব সাব-স্টেশন থেকে ১২ ইঞ্চির মাটা পাইপের সংযাগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের বসতবাড়ি, গােয়াল ঘর ও সরকারি বিভিন্ন সড়ক ছিদ্র কিংবা রাস্তার ওপর দিয়ে যত্রতত্রভাবে ড্রেজার পাইপ লাইন টানা হয়েছে।

বিশেষ করে মান্দ্রা-ভাগ্যকুল পদ্মা নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বাের্ডের বেরীবাঁধের কবুতরখােলা স্কুলের সামান্য পূর্বদিকে দােকানের সামনে সড়ক ছিদ্র করে একাধিক ড্রেজারের পাইপের সংযােগের চিত্র। এসব ড্রেজারের পাইপ সবুজ গ্রাম, হাতারপাড়া, রাঢ়িখাল, উত্তর কােলাপাড়াসহ বিভিন্ন বসতবাড়ি, কৃষি জমি, গ্রামীন রাস্তাঘাট ব্যবহার করে সংযােগ দেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ ভােগান্তির শিকার হচ্ছেন। ড্রেজার চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননা।

এলাকাবাসী জানায়, এর আগে কালাম মেম্বারের নেতৃত্বে কাজীবাড়ির সামনে ড্রেজার বসানাে হয়। তখন তিনি উপস্থিত থেকে বসতবাড়ির ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন টানেন। বাল্কহেড থেকে পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তােলন করা হয়। কাজের সময় কালাম মেম্বারের লােকজনকে এখানে আসতে দেখা যায়। ড্রেজার চালু করা হলে মেশিনের বিকট শব্দে আশপাশের বাড়ি ঘর থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া ও শিশুদের ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, দেশের প্রচলিত আইনে বলা আছে ১৮ ‘ক’ এর অনুচ্ছেদে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’র বিধান অনুযায়ী খাল-বিল, নদী-পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ড্রেজার ব্যবসায়ীদের ছত্র ছাঁয়ায় অসংখ্য ফসলী জমি ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ভূমি দপ্তরের অনুমতি ছাড়া মালিক তার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবেনা। অথচ নিয়মনীতির তায়াক্কা না করে প্রতিদিনই ভরাটের মধ্যে দিয়ে কৃষি জমি ও জলাশয়ের শ্রেণি পরিবর্তণ করা হচ্ছে। অপর একটি সূত্রে জানায়, শ্রীনগরে-আলমপুর খালের ষােলঘর গােয়ালবাড়ি সেতুর পাশে খালে গেলো সপ্তাহে প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ ও ড্রজার সংশ্লিষ্টদর আর্থিক জরিমানা করা হলেও সক্রিয় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা সুযােগ বুঝে ড্রেজার ফের চালুর পাঁয়তারা করছে।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবু কালামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত মিলেনি। রাঢ়িখাল ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা সৈকত খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন কােন ড্রেজারের সাথে সম্পৃক্ত নই।

এ বিষয়ে জানতে ড্রেজার ব্যবসায়ী মাে. মাসুদের সাথে যােগাযােগের চেষ্টা করা হলেও তার মােবাইল ফােন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাে. সাদ্দাম হােসেন নামে এক ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি মাসুদের ম্যানজার। ড্রজারের দেখভাল করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে ড্রেজারগুলা বন্ধ থাকার দাবী করেছেন তিনি। গত দুদিন আগেও রাতের আধারে কবুতরখােলা কাজীবাড়ির সামনে ড্রেজার চালু থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই সময় পাইপের জমাট বালু পরিস্কারের জন্য লাইনে পানি ছাড়া হয়েছিলো।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাে. মহিন উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে খােঁজ নিয়ে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

শ্রীনগরে ইউপি সদস্যের ড্রেজার সিন্ডিকেটের ভরাট বাণিজ্য

আপডেট সময় : ০৩:৪২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িখাল ইউনিয়নের কবুতরখােলায় রমরমা ড্রেজার বাণিজ্য ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য কৃষি জমি ও জলাশয়। অভিযােগ উঠেছে রাঢ়িখালের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু কালাম মেম্বারের সহায়তায় তার ছেলে মােঃ মাসুদ এবং নাতি যুবলীগ নেতা সৈকত খান গড়ে তুলেছেন ড্রেজারের বিশাল সামরাজ্যে।

এসব ড্রেজার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনে তাদের রেয়েছে অত্র এলাকা জুড়ে একাধিক ভরাট সিন্ডিকেটের দালাল চক্র। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাঢ়িখাল ও ভাগ্যকুল ইউনিয়নের সীমানাবর্তী এলাকার কবুতরখােলা কাজী বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাড়ে ড্রেজারের একাধিক সাব-স্টেশন। সারিবদ্ধভাবে ভাসমান এসব সাব-স্টেশন থেকে ১২ ইঞ্চির মাটা পাইপের সংযাগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের বসতবাড়ি, গােয়াল ঘর ও সরকারি বিভিন্ন সড়ক ছিদ্র কিংবা রাস্তার ওপর দিয়ে যত্রতত্রভাবে ড্রেজার পাইপ লাইন টানা হয়েছে।

বিশেষ করে মান্দ্রা-ভাগ্যকুল পদ্মা নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বাের্ডের বেরীবাঁধের কবুতরখােলা স্কুলের সামান্য পূর্বদিকে দােকানের সামনে সড়ক ছিদ্র করে একাধিক ড্রেজারের পাইপের সংযােগের চিত্র। এসব ড্রেজারের পাইপ সবুজ গ্রাম, হাতারপাড়া, রাঢ়িখাল, উত্তর কােলাপাড়াসহ বিভিন্ন বসতবাড়ি, কৃষি জমি, গ্রামীন রাস্তাঘাট ব্যবহার করে সংযােগ দেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ ভােগান্তির শিকার হচ্ছেন। ড্রেজার চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননা।

এলাকাবাসী জানায়, এর আগে কালাম মেম্বারের নেতৃত্বে কাজীবাড়ির সামনে ড্রেজার বসানাে হয়। তখন তিনি উপস্থিত থেকে বসতবাড়ির ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন টানেন। বাল্কহেড থেকে পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তােলন করা হয়। কাজের সময় কালাম মেম্বারের লােকজনকে এখানে আসতে দেখা যায়। ড্রেজার চালু করা হলে মেশিনের বিকট শব্দে আশপাশের বাড়ি ঘর থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া ও শিশুদের ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, দেশের প্রচলিত আইনে বলা আছে ১৮ ‘ক’ এর অনুচ্ছেদে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’র বিধান অনুযায়ী খাল-বিল, নদী-পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ড্রেজার ব্যবসায়ীদের ছত্র ছাঁয়ায় অসংখ্য ফসলী জমি ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ভূমি দপ্তরের অনুমতি ছাড়া মালিক তার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবেনা। অথচ নিয়মনীতির তায়াক্কা না করে প্রতিদিনই ভরাটের মধ্যে দিয়ে কৃষি জমি ও জলাশয়ের শ্রেণি পরিবর্তণ করা হচ্ছে। অপর একটি সূত্রে জানায়, শ্রীনগরে-আলমপুর খালের ষােলঘর গােয়ালবাড়ি সেতুর পাশে খালে গেলো সপ্তাহে প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ ও ড্রজার সংশ্লিষ্টদর আর্থিক জরিমানা করা হলেও সক্রিয় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা সুযােগ বুঝে ড্রেজার ফের চালুর পাঁয়তারা করছে।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবু কালামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত মিলেনি। রাঢ়িখাল ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা সৈকত খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন কােন ড্রেজারের সাথে সম্পৃক্ত নই।

এ বিষয়ে জানতে ড্রেজার ব্যবসায়ী মাে. মাসুদের সাথে যােগাযােগের চেষ্টা করা হলেও তার মােবাইল ফােন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাে. সাদ্দাম হােসেন নামে এক ব্যক্তি স্বীকার করেন তিনি মাসুদের ম্যানজার। ড্রজারের দেখভাল করেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে ড্রেজারগুলা বন্ধ থাকার দাবী করেছেন তিনি। গত দুদিন আগেও রাতের আধারে কবুতরখােলা কাজীবাড়ির সামনে ড্রেজার চালু থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই সময় পাইপের জমাট বালু পরিস্কারের জন্য লাইনে পানি ছাড়া হয়েছিলো।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাে. মহিন উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে খােঁজ নিয়ে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাখ//আর