রাজশাহী সিটি মেয়র লিটনের দেড়শ কোটি টাকার আয়েশি দুই প্রকল্প বাতিল
- আপডেট সময় : ১১:৪৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
জনবান্ধব না হওয়ায় এগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে নিজের বাবার সমাধি কমপ্লেক্স ও আন্ডারপাস নির্মাণ এ দুটি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। প্রকল্প দুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ‘স্বপ্নের স্যাটেলাইট টাউন’ প্রকল্পও আর এগোচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পর্যালোচনা কমিটি এই তিন প্রকল্পকে জনগুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মত দিয়েছে। এরপর এগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। রাসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প’-এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছিল সিটি করপোরেশন। গত ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এটি অনুমোদন দেন। এরপর ১৬ মার্চ অনুমোদন সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিস্থানে প্রকল্পটি হওয়ার কথা ছিল। এর আওতায় সৌধ নির্মাণ, সমাধি কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ নর্দমা, আলোকায়ন, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, প্রবেশ গেট, ওয়াকওয়ে, জলাশয়ের প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর, ল্যান্ড স্কেপিং নির্মাণ এবং ভূমি ও কাঠামোর ক্ষতিপূরণ খরচ ধরা হয়েছিল। প্রকল্পে গ্রেটার রোড হতে কামারুজ্জামানেরম সমাধি পর্যন্ত ৩৫ মিটারের সড়ক নির্মাণেরও কথা ছিল। মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। তবে প্রকল্প পর্যালোচনায় ধরা পড়েছে এটি জনবান্ধব বা গুরুত্বপূর্ণ নয়। লিটনের আরেকটি আয়েশী প্রকল্প ছিল ভদ্রা রেলক্রসিং ফ্লাইওভার। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতি না পাওয়ায় রেললাইনের ওপর দিয়ে এ প্রকল্প থেকে সরে আসেন তিনি। পরে একই রুটে আন্ডারপাস প্রকল্প নেন তিনি। তার স্বপ্নের ৫২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্প পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই প্রকল্পের আপাতত প্রয়োজন নেই। তাই এটিও বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক প্লট বিক্রির ব্যবসাতেও সিটি করপোরেশনকে নামিয়েছিলেন সাবেক মেয়র লিটন। নগরীর চকপাড়া এলাকায় প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ওপর ‘স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ে। একই সঙ্গে দাগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়। যাতে অনুমতি ছাড়া কেউ প্রকল্প এলাকার জমি কেনাবেচা করতে না পারেন। একইভাবে ওই এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণে ছাড়পত্র না দিতে আরডিএকে চিঠি দেন। প্রকল্প পর্যালোচনায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটিও বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি সাধারণ সভা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। পরে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। যাতে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো সচল থাকে। সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যেসব প্রকল্প জনগুরুত্বপূর্ণ নয়, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই নাগরিকসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে।
এদিকে ২০০৯ সালে রাসিকের আওতায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে নগরীতে আট থেকে ১৬ তলা উচ্চতার চারটি বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এর মধ্যে একটি ভবন বাণিজ্যিক-কাম-আবাসিক। করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির কথা বলে বাণিজ্যিক ভবন ব্যবসায় সিটি করপোরেশকে নামান লিটন। কিন্তু গত ১৫ বছরে এগুলো চালু হয়নি। পাওনাদাররাও বুঝে পাননি দোকানের স্পেস বা ফ্ল্যাট। নির্মাণাধীন ভবনগুলো হলো নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’, নিউ মার্কেট এলাকায় ‘দারুচিনি প্লাজা’, সাহেববাজার মুড়িপট্টিতে ‘বৈশাখী প্লাজা’ ও সোনাদীঘির মোড়ে ‘সিটি সেন্টার’।
দারুচিনি প্লাজা নির্মাণ করছেন জহির এন্টারপ্রাইজের জহিরুল ইসলাম, স্বপ্নচূড়া প্লাজা করছেন ফরিদ প্রোপার্টিজের ফরিদ উদ্দিন, বৈশাখী প্লাজা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান আওয়াল এবং সিটি সেন্টার নির্মাণ করছেন বাগমারা আসনের তৎকালীন এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হকের এনা প্রপার্টিজ। দারুচিনি প্লাজায় ফ্ল্যাটের জন্য তখন অগ্রিম ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন শামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ। বহু দোকান ও ফ্ল্যাট প্রত্যাশীরা টাকা দিয়ে আর ফেরত পাননি। গত ১৫ বছরে এদের অনেকে মারাও গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাসিকের এক প্রকৌশলী জানান, নিয়মানুযায়ী ভবন নির্মাণকাজ শেষের পর দুপক্ষের মধ্যে (রাসিক ও ঠিকাদার) অংশ বণ্টনের কথা। কিন্তু ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগেভাগেই জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। যেহেতু সিটি করপোরেশনের এখানে কোনো অর্থায়ন নেই, তাই এ নিয়ে আপত্তি করা হয়নি। কাজ শেষের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা শেষ করতে পারছে না। অবশ্য ভবনগুলোতে কিছু কিছু দোকান চালু হয়েছে।
বাখ//পিব