রাউজানের মাওলানা হাজী ইউছুফ কওমির ইন্তেকাল
- আপডেট সময় : ০৪:৫০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
কওমি অঙ্গনের বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন রাউজান সদরস্ত জলিল নগর ছৈয়দুশ শোহাদা (রাঃ) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা রাউজান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা মুহাম্মদ ইউছুফ প্রকাশ হাজি সাহেব হুজুর ভারতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হে রাজিউন।
তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিনি হাজী মরহুম মফিজের ছেলে। স্ত্রী, ১ ছেলে, ৩ মেয়েসহ হাজার হাজার ছাত্র ভক্ত ও গুনগ্রাহী রেখে যান নিরবে দান কারী এ আলেমেদ্বীন। জানাযায় গত ৭ সেপ্টেম্বর বিমান যোগে তিনি ঢাকা থেকে ভারতের দিল্লীর ছাহারামপুর একটি কওমি মাদ্রাসার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যোগদান করতে বাংলাদেশ ছাড়েন। সেদিন মাদ্রাসার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
রাতে আজমির শরিফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিয়ে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর সকালে আজমির পৌঁছেন। সেখানে তিনি হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী হাছান চঞ্জরী আজমিরি (রঃ) রওজা শরিফ জিয়ারত করেন। তিনি জিয়ারত শেষ করে চিপা গলি দিয়ে বের হবার সময় হঠাৎ অসুস্থ বোধ করে মাটিতে বসে পড়েন এবং বড় বড় করে কালেমা পড়তে থাকেন। সেসময় তার সফর সঙ্গিরা দ্রুত পাশের একটি মেডিকেলে তাকে নিয়ে যান। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তখন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তখন আইন মোতাবেক ভারতের পুলিশ পোস্টমর্টেম করাসহ কিভাবে মারা গেছে তার কৈফিয়ত তলব করেন সঙ্গি সাথিদের। পরে কথাবার্তার মাধ্যমে এসব আইনি পক্রিয়া সুরাহ হয়। এদিকে জমিয়তুল উলামা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের মহাসচিব মাওলানা কে এম আলমঙ্গীর মাসউদ আরব নগরী মঙ্গলবার দুপুরে জানান আজ সন্ধ্যা কিংবা আগামীকাল বুধবার হুজুরের লাশ বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। ভারতের আইন অনুযায়ি সব প্রসেসিং শেষ হয়েছে।
তিনি জানান, জমিয়তুল উলামা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন, হাজী সাহেব হুজুর। এছাড়াও তিনি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রিয় কমিটির ১৫০নং সদস্য ছিলেন।
তিনি পটিয়া জিরি মাদ্রাসা, বাবুনগর মাদ্রাসা, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শুরাহ সদস্য ছিলেন। তিনি রাউজান এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফটিকছড়ি বাবু নগর মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অধ্যায়ন শেষ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় বাবু নগর মাদ্রাসায় তাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিনি একেধারে ২৫ বছর শিক্ষকতা তথা দ্বীনি খেদমত করেন সে মাদ্রাসায়। পরবর্তী নিজ গ্রামে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাউজান সদরস্ত জলিল নগর ছৈয়দুশ শোহাদা (রাঃ) মাদ্রাসা। সিরাজগঞ্জেও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন হাজী সাহেব হুজুর।
এছাড়া বহিঃবিশ্ব থেকে পটিয়ার হাজী ইউনুচ শাহর পরে যিনি কওমি অঙ্গনে বিভিন্ন মাদ্রাসা মসজিদ নির্মাণে সংগৃহিত ফান্ড দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তিনি একমাত্র ব্যক্তি মাওলানা মুহাম্মদ ইউছুফ প্রকাশ হাজি সাহেব হুজুর। যে সময় কোন ফাউন্ডেশন ছিলনা সেসময় হাজী সাহেব হুজুর কওমি অঙ্গনের মাদ্রাসা মসজিদের সহযোগিতায় নিরলশ ভুমিকা ও পরিশ্রম করেছেন। হাজী সাহেব হুজুরের ভাগিনা হযরত এয়াছিনশাহ পাবলিক কলেজের অধ্যাপক মোঃ ফারুক বলেন, মামার মৃত্যুর সংবাদ বাড়ীতে পৌঁছলে প্রথমে কেও বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।
সকলের মাঝে সংবাদটি যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়েছে এমনটি মনে হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী ও নিরবে দানকারী ব্যাক্তি।মানুষকে সহায়তা করতেন নিজের মত করে। গতবছর সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের নিজে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। তার ইন্তেকালে সমগ্র চট্টগ্রামের কওমি অঙ্গনে বিরাজ করছে শোকের চায়া।
রাউজান সরকারি কলেজ ময়দানে তার নামাজে জানাযার আয়োজনের কথা জানিয়েছেন তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন। তার লাশ দাফন তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার আঙ্গীনায় হবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাখ//আর