বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বিচ্ছিন্ন বরিশাল, দুর্ভোগে মানুষ
- আপডেট সময় : ০১:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২
- / ৪১৭ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনার পর শনিবার (৫ নভেম্বর) বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের একদিন আগে জেলায় লঞ্চ, স্পিডবোট, বাস, মাইক্রোবাস, থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌ ও সড়কপথে গণপরিবহনে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় কার্যত সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশাল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) ভোর থেকে কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লাসহ ১৪টি অভ্যন্তরীণ রুটে এবং রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ২১টি অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে বরিশাল নদীবন্দর থেকে ১২টি নোরুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। চলছে না স্পিডবোট, মাইক্রোবাস ও থ্রি হুইলারও।
আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শনিবার (৫ নভেম্বর) সমাবেশ হলেও সেজন্য আগেই বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন বহু নেতাকর্মী। মাটিতে ত্রিপল আর বস্তা বিছিয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা।
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা যায়, বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হওয়া যাত্রীরা বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও বাস না পেয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ছাড়াই বাস বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুভোর্গের শিকার। এভাবে গণপরিবহন একযোগে বন্ধ রাখায় সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। যাত্রীরা জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে অবিলম্বে বাস-লঞ্চ চালুর দাবি জানান।
তবে বাস মালিক ও থ্রি হুইলার যান সমিতির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, নায্যদাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবির বিষয়ে কিছু বলেননি তারা।
ভোলার বিএনপি কর্মী মোস্তফা বলেন, ভোলা থেকেই কয়েকশ মানুষ এখানে আছি। আমাদের উপজেলার নেতারা আমাদের খাওয়াচ্ছেন। ট্রলার ভাড়া দিয়েছেন। কাউখালীর আরেক যুবদল কর্মী রাসেল আকন বলেন, আমাদের জন্য নেতারা পর্যাপ্ত কম্বলের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যত মানুষ সবাইকে কম্বল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে অনেকেই কষ্ট করছেন।
বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদনহীন নসিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবহন চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়য়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে লিখিতভাবে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্ত প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিভাগের ছয় জেলার বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বেশ কয়েক দফা আলোচনা করে শুক্র ও শনিবার কর্মবিরতি পালন করছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, টেক্সিকার ও সিএনজি অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর তিন চাকার যানের ভাড়ার চার্ট প্রদান, সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, সড়কে বাস মালিক-শ্রমিকদের দ্বারা তিন চাকার যান চালকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার বন্ধের দাবিতে আজ থেকে দুদিন সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। অনেক আগে থেকেই এসব দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করে আসছি।
বিআইডবিব্লউটিএ বরিশাল কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণসহ ১২টি রুটে সকাল থেকে ছোট লঞ্চ চালাচল করছে না। তবে গতকাল রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দুটি লঞ্চ ভোরে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছেছে। তবে আজ রাতে বড় লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে কি না, সে বিষয়ে জানা যায়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না। তবে বরিশালের লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ বন্ধের কারণ জানাতে পারেনি।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করার বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, শনিবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সমাবেশ কেন্দ্র করে লঞ্চসহ গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। তবে এমনটি আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। এরপর তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা করছি খেয়াঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক বরিশালে এসে পৌঁছেছেন। তবে নেতাকর্মীদের অনেকে পথে বাধা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শনিবার বরিশালের গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
বরিশাল থেকে অভ্যান্তরীণ ও দূর পাল্লার বাস, ইজিবাইক চলাচল আগেই বন্ধ ঘোষণা করেন মালিক-শ্রমিকরা। এরপর বুধবার (২ নভেম্বর) রাতে বন্ধ করা হয় স্পিডবোট সার্ভিস। আর বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হয়। আর বিকেলে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচলও দু’দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুজ্জামান জলিল বলেন, শহরে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় মাইক্রো চালকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে, যদি হামলা হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতির মুখে যেন না পড়তে হয় এজন্যই আপাতত না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।