বাংলাদেশের মাতারবাড়ী ভারতকে যে সুবিধা দেবে
- আপডেট সময় : ১২:০০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৪৯৬ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ধলঘাট এলাকায় নির্মীয়মাণ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ত্রিপুরা। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, জাপানও মাতারবাড়ীর সুফল পাবে। এমনটিই বলা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অনুন্নত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছে জাপান। এসব অঞ্চল ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত। সেভেন সিস্টার্স মূলত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডকে সংক্ষেপে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ৩৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের খাত যেমন বাড়বে, সেভেন সিস্টার্সেও বাড়ানো যাবে ব্যবসায়িক পরিধি। বলে রাখা ভালো, কক্সবাজারে অবস্থিত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এ ব্যাপারে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেত্রো) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক তাকাসি সুজুকি বলেন, ‘বাংলাদেশে এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করতে চায় জাপান। দেশটির সরকার চাইছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে ব্যবসায়িক গতি বাড়াতে।’
ভারত সফরে আসার পর এ নিয়ে কথা বলেছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিসিদা। তিনি বলেন, প্রচুর সম্পদ থাকলেও ভারতের এসব অঞ্চল অসাড় হয়ে পড়ে আছে। অর্থনীতিতে আরও গতি আসা দরকার।
ভারতের ন্যাশনাল ম্যারিটাইম ফাউন্ডেশনের (এনএমএফ) এক গবেষণার বরাতে ভারতীয় সাংবাদিক মহুয়া ভেঙ্কটেশ বলেন, মাতারবাড়ীর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আরও জোরদার হবে। এ ছাড়া অবকাঠামো, পর্যটন, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি।
যে সুফল পাবে ভারত
ভারতের সুবিধার কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক মহুয়া ভেঙ্কটেশ জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিভিন্ন পণ্য বর্তমানে হলদিয়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা হয়। এমনকি আমদানিও হয় এই পথেই। মাতারবাড়ী চালু হলে এই পথটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। ভারতের এসব বাণিজ্যিক কার্যক্রম মাতারবাড়ী দিয়েই করা হতে পারে। অনেক কার্গো জমা রাখা যাবে এ মাতারবাড়ীতে। এতে সংকটে পড়তে হবে না।
মাতারবাড়ী আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি সুবিধা দেবে ভারতকে। আর তা হলো, বাংলাদেশে চীনা প্রভাব কমানো। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় চীন এ অঞ্চলে ব্যাপক বাণিজ্যিক প্রভাব ফেলছে। একজন বিশ্লেষক বলছেন, মাতারবাড়ী চালু হলে বাংলাদেশে ভারত ছাড়াও জাপান এগিয়ে যাবে।
সামুদ্রিক গেটওয়ের তথ্যমতে, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নের সঙ্গে যুক্ত আছে ভারত। গত বছর এই বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। আর তাতে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়।
নেপাল ও ভুটান যা পাচ্ছে
সমুদ্রে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয় নেপাল ও ভুটানকে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে এই দুই দেশও সুবিধা পাবে। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খরচ আগের চেয়ে কম হবে।
সমুদ্রে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম তেমন নেই। এবার বাণিজ্য বাড়বে বলেই আশা করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের বহুপক্ষীয় বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনাইদ আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে চলেছে পূর্ব উপ-অঞ্চল (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া)। এই উন্নয়ন সম্ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দেশগুলোর রেল, অভ্যন্তরীণ জলপথ এবং রাস্তায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
২০২০ সালের মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের অনুমোদন দেয়। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প পরিদর্শন করে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।