সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
গাজীপুরে মেয়র প্রার্থীতা ঘোষণা মামুন মন্ডলের শালিখায় পানি সরবরাহের স্মল স্কিম বাস্তবায়ন বিষয়ক অবহিতকরন সভা  লালমনিরহাটে জমি ও গৃহ প্রদান বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং এ কেমন শত্রুতা পশ্চিম রেলওয়ের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উজিরপুরে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ার কিশোর গ্যাংয়ের ধারালো অস্ত্রের কোপে যুবক জখম বাঙালহালিয়ায় ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট শাখার উদ্বোধন কলমাকান্দায় উপজেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিং  ভাঙ্গায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসন ও গৃহ হস্তান্তর বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন পাইকগাছায় মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত ফরিদপুরে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং পুত্রের সমাবর্তন থেকে বাড়ি ফেরা হলনা না মুক্তিযোদ্ধা পিতার বদলগাছীতে উপজেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিং  কটিয়াদী শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক উৎসব

ফরিদপুরে পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত ৬ : স্বজনদের দাবি দায় কার ?? 

বিশেষ প্রতিনিধি, ফরিদপুর :
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন পদ্মা নদীতে দুই স্পিডবোট সংঘর্ষে ৬ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় দায় কার ? কে নেবে এতগুলো জীবনের মুত্যুর দায়ভার। এনিয়ে প্রশ্ন চলছে নিহতদের স্বজনসহ নানা মহলে।
প্রসঙ্গত: গত (৫ ফেব্রুয়ারি ) রবিবার সকালে পদ্মায় কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে ঢাকা জেলার দোহারের মৈনটঘাট ও ফরিদপুর চরভদ্রাসনের গোপালপুর ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে দুইটি স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ফরিদপুর সদরের সুকুমার হালদার নামে একজনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে, এ ঘটনায় আরো ৫ জন  নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনরা প্রশাসনকে জানান।
নিখোঁজদের তথ্য পেয়ে প্রশাসনের নির্দেশে দুর্ঘটনার পরের দিন সোমবার বিকাল থেকে ঢাকা, ফরিদপুর, চরভদ্রাসন ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশের ডুবুরি দল পদ্মায় দুর্ঘটনার স্থানসহ সম্ভাব্য আশপাশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন।
গত কয়েকদিনের উদ্ধার অভিযানে নিহত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা। ফলে এঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাড়াঁয় মোট ৬ জন।
পরে, পরিচয় সনাক্ত করে তাদের নিজনিজ স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দুর্ঘটনায় কেউ সন্তান, কেউ বাবা, কেউ বা আবার ভাই রক্তের বন্ধন হারিয়ে হতভম্ব ও নির্বিকার হয়ে পড়েছেন। স্বজনদের বাড়িতে চলছে কান্নার মাতুম। তাদের কান্নায় আকাশ,বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। স্বজন হারানোর বেদনা কিছুতেই যেন ভুলতে পারছেনা তারা। এটি এখন সর্বমহলে আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে দাড়িঁয়েছে।
পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত চরভদ্রাসন সদরের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের মৃত- সহিদুল ইসলামের বড় ভাই শেখ  শাজাহান ও সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণপুরের শমসের মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের মৃত- খোকন শেখের বাবা ছুরমান শেখ বলেন, দুই পাড়ের ঘাটকর্তৃপক্ষ, স্পিডবোটের মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারনেই আজ আমরা আমাদের কারো ছেলে, কারো ভাই ও বাবা হারালাম।
তারা কেন ওই দিন কুয়াশার মধ্যে স্পিডবোট চালালো। তারা যদি ওই দিন কুয়াশার মধ্যে স্পিডবোট না চালাইতো, তাহলে আমরা আমাদের আদরের ছেলে ও ভাইকে হারাতাম না।
তারা কি! আমাদের এ অপূরনীয় ক্ষতি আর কোনদিন পূরণ করে দিতে পারবে বলে তারা এসময় আক্ষেপ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দুর্ঘটনার পর আমাদের ছেলে ও ভাইকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে অনেক খোজাঁখুজিঁ করি।
তারা যদি দুর্ঘটনার সঙে,সঙে নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চালাতো। তাহলে হয়তো আমরা আমাদের ছেলে ও ভাইকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতাম।
উদ্ধারকারীরা আমাদেরকে বলেছে যারা পদ্মায় পড়েছে তাদের সবাইকেই উঠানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের স্বজনরা তখন পর্যন্তও নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই উক্ত দুর্ঘটনাটিকে দুই পাড়ের ঘাটকর্তৃপক্ষ, স্পিডবোটের মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, অবহেলা ও  দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করেছেন।
কেউ বলেছেন, ঘাটমালিকেরা স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট দেয়না। কেউ বলেছেন, বোটে নির্ধারিত আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে।
আবার কেউ বলেছেন, কুয়াশাচ্ছনা পরিবেশে পদ্মা পারাপার করার কারনেই দুর্ঘটনায় ওই ৬ জন মানুষ মারা গেল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার ওই দুই স্পিডবোটের মালিক ঢাকার দোহার উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন। এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান, আমরা যখন জানতে পারি পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন আমরা সরজমিনে গিয়ে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করি। সাথে সাথে তো আর কোন ঘটনার তথ্য পাওয়া সম্ভব না। আমরা প্রথমে দুই জন নিখোঁজের তথ্য পেয়ে চরভদ্রাসন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দিয়ে নিখোঁজদের খোজেঁ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করি।
পরবর্তীতে আমরা মোট ৫ জন নিখোঁজদের তথ্য পেয়ে ঢাকা, ফরিদপুর ও চরভদ্রাসনের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দিয়ে নিখোঁজদের খোজেঁ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করি। উদ্ধার অভিযানে প্রথম দিন ২ জন, দ্বিতীয় দিন ২ জন ও শেষের দিন ১ জনের লাশ উদ্ধার করে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করি।
কুয়াশার মধ্যে স্পিডবোট চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন স্পিডবোট দুইটি  দোহারের। অনেক সময় যাত্রীদের চাপাচাপি করার কারনে বাধ্য হয়েই চালকদের স্পিডবোট ছাড়তে হয়।
লিগ্যাল নোটিশে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন আমি এ বিষয়টি ফেসবুকসহ অন্যান্যভাবে শুনেছি। তবে আমি এখনও এ ধরনের কোন নোটিশ পাইনি।
এ ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থা ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব জানান, মৈনট ও গোপালপুর ঘাট দুইটি ঢাকা ও  ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন। ঘাটে যাত্রীদের বীমা সুবিধা ও নিরাপত্তা তদারকির দায়দায়িত্ব তাদের উপড়েই ছিল। তারা এ দায় কোনভাবেই এড়াঁতে পারেনা। তাদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্বের অবহেলা ও ব্যার্থতার দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এর আগে আমরা পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। যদি উক্ত সময়ের ভেতরে নিহতদের পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা নিহত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করবো।
বা/খ: এসআর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *