মোঃ সোহাগ মোল্লা, চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
‘ তিনটি শিশু সন্তানসহ ফেলে চলে গিয়ে বছর পঁচিশ আগে স্বামী আরও একটি বিয়ে করে। সন্তানদের বাঁচাতে শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। নেমে পড়ি জমিতে কৃষিকাজসহ দিনমজুরের কাজে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সন্তাদের বড় করেছি। তাঁরা এখন বিয়ে করেছে। যে যার মত থাকে। তাই বাঁচতে হলে আমাকে আবারও যুদ্ধ করতে হবে। এখন আর আগের মত কষ্টের কাজ করতে পারি না। অনেক ভেবে-চিন্তে সাজ (চিতই) পিঠা বিক্রিতে নেমে পড়ি। এখন আমি স্বাবলম্বী। আর ছোট ভাইটিরও একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।’-সোমবার (৯ জানুয়ারী) বিকেলে এমনটাই জানালেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে পিঠা বিক্রি করতে আসা আলেয়া বেগম (৫৫)।
তিনি আরও জানান, ত্রিশ বছর আগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামের আব্দুলাহ শেখের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ২ ছেলে ও এক মেয়ে জম্ম নেয়। এর কিছুদিন পর স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। সংগ্রাম করে সন্তানদের বড় করেছেন। সবার আলাদা সংসার হয়েছে। বড় ছেলে চিংড়ি ঘেরে লোকসান হওয়ায় দেনার দায়ে ঢাকায় চলে গেছে। ছোট ছেলে দীন ইসলাম বিয়ে করে কাননচক শ্বশুর বাড়ি এলাকায় থাকে। মেয়ে রোজিনা স্বামীর বাড়িতে আছে। তাই তিনি রুজির ধান্দায় তাঁর ছোট ভাই আবুল শেখকে নিয়ে নেমে পড়েন সাজ (চিতই) পিঠার ব্যবসায়। ভ্যানে ঘুরে ঘুরে উপজেলা সদর বাজারের বিভিন্ন স্থানে পিঠা বিক্রি করেন। বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হয়। প্রতিকেজি আতপ চালের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। প্রতিকেজি মিলে গুড়ি করতে নেয় ৫ টাকা। পাঁচটি চুলায় এক সাথে বানানো হয় পিঠা। প্রতিটি পিঠার দাম ৫ টাকা। সাথে সরিষা, ধনেপাতা ও শুঁটকি বাটা (ভর্তা) ফ্রি। প্রতিদিন ভ্যানভাড়া ও কাঠের দামসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হয়। তাঁর পিঠা খাওয়ার জন্য সব সময় ভিড় লেগে থাকে। খরিদ্দাররাও তাঁর সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেন। এতে আলেয়া বেগম মহাখুশি।
বা/খ:জই