নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সব পাঠ্যবই পুন:বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে দুটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বইয়ে ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল ত্রুটি, গাফিলতি কোথাও পরিলক্ষিত হলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের ধর্মীয় ও লিঙ্গ বিদ্বেষ যাতে না থাকে আমরা সেই চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ ধর্মীবিরোধী কিছু করেনি। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ইচ্ছা আমাদের নেই।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দুটি কমিটি তৈরি করেছি। একটি কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। সেখানে স্বাস্থ্য, ধর্মীয়, পেশাগত বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। যে কেউ যেকোনও জায়গা থেকে যে কোনও মতামত দিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ কমিটি তা যাচাই বাছাই করে সংশোধন করবে। কোথাও ভুল থাকলে নিশ্চয়ই সংশোধন করা হবে। কারও কোনও অস্বস্তি থাকলে তা বিবেচনায় নেবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আরেকটি কমিটি শর্ষের মধ্য ভূত আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ে জন্য কমিটি। এনসিটিবিতে কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু করে থাকলে তা তদন্ত করে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেবো। আমরা যে ছবি বাদ দিতে বলেছি, সে ছবিও রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব ইচ্ছাকৃত, নাকি ভুলবশত হয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি (দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে)। এ কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে। তারা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে কারো বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ মিললে মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এক বছরে এ পাঠ্যবই একেবারে সঠিক করে ফেলা একটা দুরূহ কাজ। এ বছর আমরা বইগুলো পরীক্ষামূলক হিসেবে দিয়েছি। সারা বছর আমরা সবার কাছ থেকে মতামত নেব এবং সেখানে পরামর্শ অনুযায়ী পরিমার্জন পরিশীলনের সুযোগ থাকবে। বইগুলো প্রণয়নের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বইয়ের কোথাও যেন ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ বিদ্বেষ-বৈষম্য না থাকে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। ভুলটা হয়তো বড়, যা আরও আগে চিহ্নিত হওয়া দরকার ছিল, সংশোধন হওয়া দরকার ছিল। আগে না হলেও এটি নিয়ে এখন যে আলোচনা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সংশোধন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকাল সামাজিক মাধ্যম অনেক সরব, সেই মাধ্যম থেকে শুরু করে, গণমাধ্যম, রাজনীতির মাঠ সব জায়গা থেকেই আমরা বইয়ের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুনছি। আমরা আগেও বলেছি আমাদের এই বইগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রণয়ন করেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাচ্ছি, সব জায়গা থেকে পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার দায়িত্বে যারা আছি, এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা আছি, মানুষের মধ্যে বইগুলো নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে কাগজ ও বিদ্যুতের সংকট থাকার পরও আমরা ১ জানুয়ারি পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছি। পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্র করে যেন কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি প্রেস কনফারেন্সে পাঠ্যবই নিয়ে কোনো অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা না করারও আহ্বান জানান।
আগামী রোববারের মধ্যে কমিটি দুটির বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
২০২৩ সালের নতুন পাঠ্যবইয়ে নানান ভুল ও অসঙ্গতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।