ঢাকা ০৩:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
আজকের সেহরি ও ইফতার ::
ঢাকায় সেহেরি ৪:৩৩ মি. ইফতার ৬:১৭ মি.:: চট্টগ্রামে সেহেরি ৪:২৮ মি. ইফতার ৬:১১ মি. :: রাজশাহীতে সেহেরি ৪:৩৯ মি. ইফতার ৬:২৪ মি. :: খুলনায় সেহেরি ৪:৩৭ মি. ইফতার ৬:২০ মি. :: বরিশালে সেহেরি ৪:৩৪ মি. ইফতার ৬:১৭ মি. :: সিলেটে সেহেরি ৪:২৬ মি. ইফতার ৬:১১ মি. :: রংপুরে সেহেরি ৪:৩৭ মি. ইফতার ৬:২২ মি. :: ময়মনসিংহে সেহেরি ৪:৩২ মি. ইফতার ৬:১৭ মি. ::::

পাঁচবিবিতে সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে লকমা জমিদার বাড়ি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি :

প্রাচীন স্থাপত্যের সৌন্দর্য মন্ডিত জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত লকমা জমিদার বাড়িটি প্রায় ধ্বংস হওয়ার পথে। স্থানীয়রা বলেন, যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রাচীনকালের সৌন্দর্য মন্ডিত স্থাপত্য লকমা জমিদার বাড়িটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

লকমার জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার হতে মাত্র ৪-৫ গজ দূরে পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। চৌধুরী বাড়ির পূর্বপুরুষের আব্দুল হামিদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি পাঁচবিবিতে বসবাস করতেন বলে জানা যায়।

সীমান্তের পিলার ঘেঁষে ৩ একর জমির উপর পৃথক দুই ভাগে নির্মিত এ জমিদার বাড়ি। লোহার রড ছাড়াই শুধু ইট, চুন সুরকী দিয়ে নির্মিত ৩ তলা এ জমিদার বাড়ির এক তলা ইতিমধ্যেই দেবে গেছে মাটির নীচে। জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে ২৫/৩০টি কক্ষ। যার ভিতরে রয়েছে আরো ছোট ছোট কুঠরি বা কামরা। হাতিশালা, ঘোড়াশালা, কাচারিবাড়ি সবই ছিল এখানে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ শুধু কালের স্বাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি। কয়েক মাস আগেও এটি একটি জঙ্গলে পরিণত ছিল। তবে বর্তমানে এলাকার কিছু উদ্যোগী যুবক এটি পরিস্কার করে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন। পর্যটকদের জন্য সিমেন্ট এর বেঞ্চ ও বসার জায়গা করে দেন তারা। প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত সীমান্ত ঘেঁষা নয়নাভিরাম প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার মাধমে এটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

 

 

জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, তার পিতার কবর জিয়ারত করার সময় এই লকমা এলাকায় আসেন। একই সাথে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ীটিও পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন- “ এই পর্যটন কেন্দ্র লকমা রাজবাড়ীকে সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হবে এবং স্থানীয় আয়মা রসুলপুর চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিল্টনকে বলেন এর জন্য যা-যা করা দরকার তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। এবং প্রশাসনকেও তিনি এই বিষয়ে অবগত করেছেন। এতে অত্র এলাকার গন্যমান্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আনন্দ প্রকাশ করেন।

পাঁচবিবি শহর থেকে ৭ কিঃমিঃ দূরে এই জমিদার বাড়ির যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব ভাল না হলেও টেম্পু আর রিক্সা-ভ্যানে করে সহজেই আসা-যাওয়া করা যায়।

লকমার কিছু বেকার যুবক, এই জমিদার বাড়ীকে কেন্দ্র করে এক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে এবং বাড়িটির আশ পাশের জঙ্গল পরিষ্কার করে সিমেন্ট দিয়ে বসার জায়গা বেঞ্চ, টেবিল তৈরি করেন। প্রতি বৎসর ঈদে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন দেখার জন্য আসে।

কড়িয়া গ্রামের সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আলহাজ্ব নুরুল আমিন সরদার বলেন, চৌধুরী পরিবারের অনেক লোকজন ছিল এবং এর মাঝে কিছু অত্যাচারীও ছিলো, তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে ঐ চৌধুরী বাড়িতে আকস্মিক ভাবে লোকজনের মৃত্যু শুরু হলে তখন স্থানীয় ফকির বলেন “এ বাড়ির কোনো লোক বাঁচবেনা, এ বাড়িতে বসবাস করলে সবার বংশ নিপাত হয়ে যাবে।” তারপর থেকে সবাই বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করে ও নানা জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করে । তিনি আরও বলেন যে, ঐ বাড়িতে কোনো আত্মীয় স্বজন ভয়ে আসতো না। রাতের বেলা তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারত না বলে জানায়। রাতে পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে দেখতেন পূর্ব দিকে মাথা হয়ে আছে। এমন সব ঘটনার পর থেকেই এই বাড়ি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। এখন এই বাড়ি চৌধুরী পরিবারের শুধুই স্মৃতি বহন করে চলছে।

এ জমিদার বাড়িকে ঘিরে অনেক কিংবদন্তির কথা শোনা যায়। কথিত আছে চৌধুরী বাড়ির যখন রমরমা অবস্থা, তখন হঠাৎ দেখা দেয় জ্বিন ও সাপের অত্যাচার। ভয়ে শরিকেরা আশেপাশের গ্রামে বসবাস শুরু করে।
লকমার জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী ছিলেন হাদী মামুন চৌধুরী। দুই-আড়াইশ’ বছর আগে তার সময়ে নির্মিত হয় এই দালান কোঠা। তিনি নওগাঁ জেলার পোরশার বিখ্যাত জমিদার বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেন। লকমার জমিদারভুক্ত ছিল বর্তমানে ভারতীয় এলাকা জামালপুর, মথুরাপুর, গয়েশপুর, চিঙ্গিশপুর, সতনূল, সানাপাড়া, মজাতপুর, ছাড়াও পাঁচবিবি উপজেলার বিরাট এলাকা। লকমার দুর্দশা শুরু হয় জমিদারি প্রথা প্রলোপের আগেই। বাধ্য হয়ে বংশধরদের বাস্তুভিটা ত্যাগ করতে হয়।

লকমার জমিদার বাড়ির অনেকের ছিল তুলা রাশির ধন্বন্তরী পাতা হাত। এ রাশির লোকের হাতে উঠতো ‘ভর’। হাত কাঁপতে কাঁপতে মাটির নিচে অন্যান্য লোকের গচ্ছিত গুপ্তধনের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হাত থামতো। গভীর রাতে গোপনে এই পন্থায় গুপ্তধন এনে পুঁতে রাখা হতো। এভাবে প্রচুর ধন রত্নের মালিক হয় লকমারা। সেই সঙ্গে অজান্তেই বিপদও ডেকে আনা হয়। অপরের গুপ্তধন লকমায় নিয়ে আসার পর সর্পরূপী যক্ষও পিছু পিছু চলে আসে। এর পর পরেই শুরু হয় সাপের অত্যাচার। প্রথমে বাড়ির মহিলা মহলে সর্পাতংক ও পরে বংশের কয়েকজন পাগল হলে তারা মূল ভবন ছেড়ে মসজিদের পাশে নতুন বাড়িঘর করে বসবাসের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও সাপের উপদ্রব শুরু হয়। যদিও সাপগুলো কাউকে কামড়াতো না, কিন্তু ঘুরে বেড়াতো অহরহ। অবশেষে চৌধুরী পরিবার বাস্তুভিটা ত্যাগ করে বহুদূরের গ্রামে বসবাস শুরু করে এই কিংবদন্তি শোনা যায়।

পাঁচবিবি লকমা জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীন একটি স্থাপত্য শৈলী ও দর্শনীয় স্থান। কালের গর্ভে প্রতিটি স্থাপত্য শিল্প বিলীন হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এগুলো ধরে রাখতে হলে যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। স্থানটি যেহেতু দর্শনীয় সেহেতু এটিরও সময়পযোগী সংরক্ষণ প্রয়োজন। পূর্বে নওগা জেলা ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুর প্রত্নতত্ব বিভাগ এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা পরিদর্শনে করে গেছে।

জমিদার বংশের শুধু নাতি-পুতিরাই বেঁচে আছেন। তারই মধ্যে ওসমান চৌধুরী পিতা: বতুল চৌধুরী, ভাগ্যের পরিহাসে পাঁচবিবি রেললাইনের পার্শ্বে একটি জায়গায় বসবাস করেন এবং পাঁচবিবি রাখী মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করেন। মরহুম আব্দুল হামিদ চৌধুরীর নাতি ওসমান চৌধুরী।

এলাকাবাসি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই কিছু সংখ্যক দর্শনার্থীরা আসেন প্রাচীন এই নিদর্শনটি দেখার জন্য। পাঁচবিবি পাঁচমাথা থেকে কড়িয়া দরগারঘাট পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে। দর্গারঘাট থেকে মাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলে যাতায়াত অনেক সুবিধা হবে। তাই রাস্তাটি পাকাকরনের দাবি এলাকাবাসীর।
সেই সাথে পর্যটনে সম্ভবনাময় প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এই লকমার জমিদার বাড়িটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব। আশেপাশে কোন পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে অনেক দূরে যেতে হয়। কিন্তু লকমা রাজবাড়িকে সংস্কার করে ভাল একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করলে অত্র এলকার অনেক স্কুল কলেজ থেকে ছাত্র ছাত্রী এটিকে শিক্ষাসফরের জন্য পিকনিক স্পট হিসেবে বেছে নিতে পারবে। যা একদিকে প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে অন্যদিকে বাড়িয়ে তুলবে সরকারের রাজস্ব আয়। আর এ প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

 

বা/খ: জই

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/omnm

নিউজটি শেয়ার করুন

পাঁচবিবিতে সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে লকমা জমিদার বাড়ি

আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি :

প্রাচীন স্থাপত্যের সৌন্দর্য মন্ডিত জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত লকমা জমিদার বাড়িটি প্রায় ধ্বংস হওয়ার পথে। স্থানীয়রা বলেন, যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রাচীনকালের সৌন্দর্য মন্ডিত স্থাপত্য লকমা জমিদার বাড়িটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

লকমার জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার হতে মাত্র ৪-৫ গজ দূরে পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। চৌধুরী বাড়ির পূর্বপুরুষের আব্দুল হামিদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি পাঁচবিবিতে বসবাস করতেন বলে জানা যায়।

সীমান্তের পিলার ঘেঁষে ৩ একর জমির উপর পৃথক দুই ভাগে নির্মিত এ জমিদার বাড়ি। লোহার রড ছাড়াই শুধু ইট, চুন সুরকী দিয়ে নির্মিত ৩ তলা এ জমিদার বাড়ির এক তলা ইতিমধ্যেই দেবে গেছে মাটির নীচে। জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে ২৫/৩০টি কক্ষ। যার ভিতরে রয়েছে আরো ছোট ছোট কুঠরি বা কামরা। হাতিশালা, ঘোড়াশালা, কাচারিবাড়ি সবই ছিল এখানে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ শুধু কালের স্বাক্ষী হয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি। কয়েক মাস আগেও এটি একটি জঙ্গলে পরিণত ছিল। তবে বর্তমানে এলাকার কিছু উদ্যোগী যুবক এটি পরিস্কার করে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন। পর্যটকদের জন্য সিমেন্ট এর বেঞ্চ ও বসার জায়গা করে দেন তারা। প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত সীমান্ত ঘেঁষা নয়নাভিরাম প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার মাধমে এটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

 

 

জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, তার পিতার কবর জিয়ারত করার সময় এই লকমা এলাকায় আসেন। একই সাথে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ীটিও পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন- “ এই পর্যটন কেন্দ্র লকমা রাজবাড়ীকে সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হবে এবং স্থানীয় আয়মা রসুলপুর চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিল্টনকে বলেন এর জন্য যা-যা করা দরকার তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। এবং প্রশাসনকেও তিনি এই বিষয়ে অবগত করেছেন। এতে অত্র এলাকার গন্যমান্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আনন্দ প্রকাশ করেন।

পাঁচবিবি শহর থেকে ৭ কিঃমিঃ দূরে এই জমিদার বাড়ির যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব ভাল না হলেও টেম্পু আর রিক্সা-ভ্যানে করে সহজেই আসা-যাওয়া করা যায়।

লকমার কিছু বেকার যুবক, এই জমিদার বাড়ীকে কেন্দ্র করে এক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে এবং বাড়িটির আশ পাশের জঙ্গল পরিষ্কার করে সিমেন্ট দিয়ে বসার জায়গা বেঞ্চ, টেবিল তৈরি করেন। প্রতি বৎসর ঈদে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন দেখার জন্য আসে।

কড়িয়া গ্রামের সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আলহাজ্ব নুরুল আমিন সরদার বলেন, চৌধুরী পরিবারের অনেক লোকজন ছিল এবং এর মাঝে কিছু অত্যাচারীও ছিলো, তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে ঐ চৌধুরী বাড়িতে আকস্মিক ভাবে লোকজনের মৃত্যু শুরু হলে তখন স্থানীয় ফকির বলেন “এ বাড়ির কোনো লোক বাঁচবেনা, এ বাড়িতে বসবাস করলে সবার বংশ নিপাত হয়ে যাবে।” তারপর থেকে সবাই বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করে ও নানা জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করে । তিনি আরও বলেন যে, ঐ বাড়িতে কোনো আত্মীয় স্বজন ভয়ে আসতো না। রাতের বেলা তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারত না বলে জানায়। রাতে পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে দেখতেন পূর্ব দিকে মাথা হয়ে আছে। এমন সব ঘটনার পর থেকেই এই বাড়ি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। এখন এই বাড়ি চৌধুরী পরিবারের শুধুই স্মৃতি বহন করে চলছে।

এ জমিদার বাড়িকে ঘিরে অনেক কিংবদন্তির কথা শোনা যায়। কথিত আছে চৌধুরী বাড়ির যখন রমরমা অবস্থা, তখন হঠাৎ দেখা দেয় জ্বিন ও সাপের অত্যাচার। ভয়ে শরিকেরা আশেপাশের গ্রামে বসবাস শুরু করে।
লকমার জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী ছিলেন হাদী মামুন চৌধুরী। দুই-আড়াইশ’ বছর আগে তার সময়ে নির্মিত হয় এই দালান কোঠা। তিনি নওগাঁ জেলার পোরশার বিখ্যাত জমিদার বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেন। লকমার জমিদারভুক্ত ছিল বর্তমানে ভারতীয় এলাকা জামালপুর, মথুরাপুর, গয়েশপুর, চিঙ্গিশপুর, সতনূল, সানাপাড়া, মজাতপুর, ছাড়াও পাঁচবিবি উপজেলার বিরাট এলাকা। লকমার দুর্দশা শুরু হয় জমিদারি প্রথা প্রলোপের আগেই। বাধ্য হয়ে বংশধরদের বাস্তুভিটা ত্যাগ করতে হয়।

লকমার জমিদার বাড়ির অনেকের ছিল তুলা রাশির ধন্বন্তরী পাতা হাত। এ রাশির লোকের হাতে উঠতো ‘ভর’। হাত কাঁপতে কাঁপতে মাটির নিচে অন্যান্য লোকের গচ্ছিত গুপ্তধনের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে হাত থামতো। গভীর রাতে গোপনে এই পন্থায় গুপ্তধন এনে পুঁতে রাখা হতো। এভাবে প্রচুর ধন রত্নের মালিক হয় লকমারা। সেই সঙ্গে অজান্তেই বিপদও ডেকে আনা হয়। অপরের গুপ্তধন লকমায় নিয়ে আসার পর সর্পরূপী যক্ষও পিছু পিছু চলে আসে। এর পর পরেই শুরু হয় সাপের অত্যাচার। প্রথমে বাড়ির মহিলা মহলে সর্পাতংক ও পরে বংশের কয়েকজন পাগল হলে তারা মূল ভবন ছেড়ে মসজিদের পাশে নতুন বাড়িঘর করে বসবাসের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও সাপের উপদ্রব শুরু হয়। যদিও সাপগুলো কাউকে কামড়াতো না, কিন্তু ঘুরে বেড়াতো অহরহ। অবশেষে চৌধুরী পরিবার বাস্তুভিটা ত্যাগ করে বহুদূরের গ্রামে বসবাস শুরু করে এই কিংবদন্তি শোনা যায়।

পাঁচবিবি লকমা জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীন একটি স্থাপত্য শৈলী ও দর্শনীয় স্থান। কালের গর্ভে প্রতিটি স্থাপত্য শিল্প বিলীন হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এগুলো ধরে রাখতে হলে যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। স্থানটি যেহেতু দর্শনীয় সেহেতু এটিরও সময়পযোগী সংরক্ষণ প্রয়োজন। পূর্বে নওগা জেলা ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুর প্রত্নতত্ব বিভাগ এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা পরিদর্শনে করে গেছে।

জমিদার বংশের শুধু নাতি-পুতিরাই বেঁচে আছেন। তারই মধ্যে ওসমান চৌধুরী পিতা: বতুল চৌধুরী, ভাগ্যের পরিহাসে পাঁচবিবি রেললাইনের পার্শ্বে একটি জায়গায় বসবাস করেন এবং পাঁচবিবি রাখী মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করেন। মরহুম আব্দুল হামিদ চৌধুরীর নাতি ওসমান চৌধুরী।

এলাকাবাসি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই কিছু সংখ্যক দর্শনার্থীরা আসেন প্রাচীন এই নিদর্শনটি দেখার জন্য। পাঁচবিবি পাঁচমাথা থেকে কড়িয়া দরগারঘাট পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে। দর্গারঘাট থেকে মাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলে যাতায়াত অনেক সুবিধা হবে। তাই রাস্তাটি পাকাকরনের দাবি এলাকাবাসীর।
সেই সাথে পর্যটনে সম্ভবনাময় প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এই লকমার জমিদার বাড়িটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব। আশেপাশে কোন পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে অনেক দূরে যেতে হয়। কিন্তু লকমা রাজবাড়িকে সংস্কার করে ভাল একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করলে অত্র এলকার অনেক স্কুল কলেজ থেকে ছাত্র ছাত্রী এটিকে শিক্ষাসফরের জন্য পিকনিক স্পট হিসেবে বেছে নিতে পারবে। যা একদিকে প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে অন্যদিকে বাড়িয়ে তুলবে সরকারের রাজস্ব আয়। আর এ প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

 

বা/খ: জই

The short URL of the present article is: https://banglakhaborbd.com/omnm