ঢাকা ০৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাঁচবিবিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করে স্বাবলম্বী দুই নারী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৯৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি :

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নাজমা বেগম ও পারুল বেগম নামের দুই গৃহিণী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের বাড়ীতে সার তৈরীর কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে নিজের ফসলি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে এখন প্রতিমাসে আয় করছেন প্রায় ৫/৬ হাজার টাকা। উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদা গ্রামের গৃহিনী নাজমা বেগম ও পারুল আক্তারের কেঁচো কম্পোস্ট তৈরীর সাফল্যে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছে কেঁচো স্যার তৈরীতে।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২১ সালে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল প্রোগ্রাম ফেজ প্রজেক্ট এ (এনেটিপি-২) নাজমা বেগম এবং অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে পারুল বেগম প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরীতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।

পরে কৃষি অফিসের তৈরীকৃত হাউজিং পদ্ধতিতে ৫টি হাউজে নিজের গৃহ পালিত গরুর গোবর হাউজে সংরক্ষণ করে সেখানে ১ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেন। এর ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি হাউজ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কেজি কেঁচো (ভার্মি কম্পোস্ট) পান এবং ৫টি হাউজ থেকে ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি সার পাওয়া যায়। সেই সার থেকে প্রতিমাসে আয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় হাউজে ছেড়ে দেওয়া কেঁচোও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেখান থেকে কেঁচোও বিক্রি করে আয় করছেন তারা।

এ বিষয়ে নাজমা বেগম বলেন, এ সার তৈরিতে আমার খুব বেশি সময় দিতে হয় না। পারিবারিক কাজের পাশাপাশি এ সার তৈরি করে আসছি। কোন সমস্যা হলে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, কেঁচো সার তৈরী করে নিজের ফসলের ক্ষেতে দেই। পাশাপাশি কেঁচো সার বিক্রি করে নিজের সংসার ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগান দিচ্ছি।

একই গ্রামের পারুল বেগম বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে নিজের ফসলের জমিতে দেওয়ার জন্য কেঁচো সার তৈরী করি। সবজির ক্ষেতে কেঁচো সার দেওয়ায় সবজির ফলন খুব ভাল হয়। পরে আরো হাউজ বৃদ্ধি করে কেঁচো সার তৈরী করি। এখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছি।

স্থানীয় সার ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামের দুই মহিলার থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার পাইকারী ১০ টাকা দরে কিনে খুচরা হিসাবে কৃষকের নিকট ১২ টাকায় বিক্রি করি। স্থানীয় কৃষকদের নিকট এই কেঁচো সারের চাহিদা খুব বেশি।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলায় জৈব পদ্ধতিতে তৈরী সার ফসলে প্রয়োগের ফলে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভার্মি কম্পোষ্ট উদ্যোক্তা তৈরী করেছি, যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তারা রাসায়ানিক সারের পাশাপাশি জৈব সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক ভাবে জৈব সারের চেয়ে ভার্মি কম্পোষ্ট সারে ৫গুন পুষ্টি থাকে। এতে ফসফরাস ও অন্যান্য উপাদান বেশি থাকায় শাক সবজির ক্ষেতে এটি ব্যাপক ভাবে কাজ করে। কৃষকেরা ভার্মি কম্পোষ্ট সারের তথ্য ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এর উপকারতিা পাওয়ায় কেঁচো কম্পোষ্ট সার তৈরীতে আগ্রহী হচ্ছে এবং এর চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাঁচবিবিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করে স্বাবলম্বী দুই নারী

আপডেট সময় : ১১:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি :

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নাজমা বেগম ও পারুল বেগম নামের দুই গৃহিণী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের বাড়ীতে সার তৈরীর কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে নিজের ফসলি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে এখন প্রতিমাসে আয় করছেন প্রায় ৫/৬ হাজার টাকা। উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদা গ্রামের গৃহিনী নাজমা বেগম ও পারুল আক্তারের কেঁচো কম্পোস্ট তৈরীর সাফল্যে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছে কেঁচো স্যার তৈরীতে।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২১ সালে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল প্রোগ্রাম ফেজ প্রজেক্ট এ (এনেটিপি-২) নাজমা বেগম এবং অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে পারুল বেগম প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরীতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।

পরে কৃষি অফিসের তৈরীকৃত হাউজিং পদ্ধতিতে ৫টি হাউজে নিজের গৃহ পালিত গরুর গোবর হাউজে সংরক্ষণ করে সেখানে ১ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেন। এর ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি হাউজ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কেজি কেঁচো (ভার্মি কম্পোস্ট) পান এবং ৫টি হাউজ থেকে ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি সার পাওয়া যায়। সেই সার থেকে প্রতিমাসে আয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় হাউজে ছেড়ে দেওয়া কেঁচোও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেখান থেকে কেঁচোও বিক্রি করে আয় করছেন তারা।

এ বিষয়ে নাজমা বেগম বলেন, এ সার তৈরিতে আমার খুব বেশি সময় দিতে হয় না। পারিবারিক কাজের পাশাপাশি এ সার তৈরি করে আসছি। কোন সমস্যা হলে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, কেঁচো সার তৈরী করে নিজের ফসলের ক্ষেতে দেই। পাশাপাশি কেঁচো সার বিক্রি করে নিজের সংসার ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগান দিচ্ছি।

একই গ্রামের পারুল বেগম বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে নিজের ফসলের জমিতে দেওয়ার জন্য কেঁচো সার তৈরী করি। সবজির ক্ষেতে কেঁচো সার দেওয়ায় সবজির ফলন খুব ভাল হয়। পরে আরো হাউজ বৃদ্ধি করে কেঁচো সার তৈরী করি। এখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছি।

স্থানীয় সার ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামের দুই মহিলার থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার পাইকারী ১০ টাকা দরে কিনে খুচরা হিসাবে কৃষকের নিকট ১২ টাকায় বিক্রি করি। স্থানীয় কৃষকদের নিকট এই কেঁচো সারের চাহিদা খুব বেশি।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলায় জৈব পদ্ধতিতে তৈরী সার ফসলে প্রয়োগের ফলে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভার্মি কম্পোষ্ট উদ্যোক্তা তৈরী করেছি, যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তারা রাসায়ানিক সারের পাশাপাশি জৈব সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক ভাবে জৈব সারের চেয়ে ভার্মি কম্পোষ্ট সারে ৫গুন পুষ্টি থাকে। এতে ফসফরাস ও অন্যান্য উপাদান বেশি থাকায় শাক সবজির ক্ষেতে এটি ব্যাপক ভাবে কাজ করে। কৃষকেরা ভার্মি কম্পোষ্ট সারের তথ্য ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এর উপকারতিা পাওয়ায় কেঁচো কম্পোষ্ট সার তৈরীতে আগ্রহী হচ্ছে এবং এর চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।