পাঁচবিবিতে অসময়ে মাচায় তরমুজ ফলিয়ে খুশি চাষীরা
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে অসময়ে মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলার ভূতগাড়ী সহ কয়েকটি এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং (মাচা) বাঁধিয়ে বারোমাসি তরমুজ চাষ। পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষ করে সাফল্যের মূখ দেখছেন কৃষকেরা। বিভিন্ন রং আর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বাজারে এ রসালো ফলের চাহিদাও রয়েছে বেশ। স্বাদেও বেশ মনকাড়া। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে মালচিং পদ্ধতিতে এই তরমুজ চাষ।
এসব তরমুজ বিক্রির জন্য কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। মাঠ থেকে তোলার পরই বিক্রি হয়ে যায় । প্রতিদিন তরমুজের হাট বসে এলাকার রাস্তায়। এসব রং-বেরংয়ের তরমুজে আকৃষ্ট হয়ে ক্রয় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ি ও পথচারীরা। এ তরমুজ চাষে যেমন বেকারত্ব ঘুচেছে, তেমন সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থানের ও। তুলনা মুলক ভাবে গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে এ তরমুজের চাষাবাদ। জানা গেছে, এপ্রিলের প্রথম থেকে তরমুজ আহরণ শুরু হলেও চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ভূতগাড়ি, ভারাহুত, শিরট্টি, গোড়না, জালালপুর ও নওটিকা, ভাসিলার মোড়সহ আশপাশে অনেক মাঠ থেকে নানা রংয়ের তরমুজ বেঁচাকেনা হচ্ছে। অন্য ফসলের তুলনায় তরমুজ বিক্রি করে তিনগুণ লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে মাচায় চাষ করা এ তরমুজের। পাইকারি বাজারে এসব তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। সেই তরমুজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
চাষিরা জানান, বছরের নয় মাস বাঁশের মাচায় তরমুজ চাষ করা যায়। চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যে ফলন আসে এবং পরিপক্ক ফল হয়। লাভজনক হওয়ায় বেড়েছে তাদের আগ্রহ। দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুশি। তরমুজ চাষকে কেন্দ্র করে ভূতগাড়ী ও নওটিকা এলাকায় গড়ে ওঠেছে অনেক দোকানপাটও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সদরে ৩ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ১৫ হেক্টর, আক্কেলপুরে ৭ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৮ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে বাঁশের মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে।
চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তরমুজ চাষের গল্প বেশি দিনের নয়। ২০১৮ সালে পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা তার তিনশতক জমিতে বাঁশের মাচায় তরমুজের চাষ শুরু করেন। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) করেন আর্থিক সহায়তা ও জয়পুরহাট রুরাল ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্ট (জেআরডিএম) করেন কারিগরী সহযোগিতা। বাঁশের মাচা বাবদ ওই জমিতে তাঁর খরচ পড়ে ৫ হাজার টাকা। ওই বছর তিনি উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করেছিলেন ২৪ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি অন্যরাও ঝুঁকে পড়েন তরমুজ চাষে। সেই থেকে কৃষকদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তরমুজ চাষে আর্থিক পরিবর্তন ঘটেছে চাষীদের। যাদের আগে কিছুই ছিল না, তরমুজ চাষ করে তারা এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।
তরমুজ চাষে সফল ভারাহুত গ্রামের আবু মুসা বলেন, এবার সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে বিঘায় ৮০ থেকে ১০০ মণের ওপর তরমুজ উৎপাদন হবে। দাম ভালো থাকলে বিক্রি হবে এক থেকে সোয়া লাখ টাকা। এবার ১২শ থেকে ১৪শ টাকা মণ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। তরমুজ চাষে চাষীরা দিনদিন স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন চাষী ফরিদুল ইসলাম। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, হলুদ ও সবুজ জাতের তরমুজ চাষ করেছি। বছরের ৯ মাস তরমুজের চাষ করা যায়। শীত মৌসুম আসলে এসব জমিতে আলু চাষ করা হয়। ধান-আলু এলাকার প্রধান ফসল হলে কি হবে? তরমুজ চাষেই অধিক লাভ হচ্ছে।তাই তরমুজ চাষ দিনদিন বেড়েই চলছে।
আরেক চাষী মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ধান-আলুর চাষ করলে বছরে তিনবার বিক্রি করা যায়। আর তরমুজ চাষ করলে বছরের নয় মাস বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়। তখন অভাব কি তা বোঝা যায় না। আগামীতে এর চাষ আরও বাড়বে। বগুড়ার মোকামতলা থেকে আসা পাইকার আব্দুল মান্নান বলেন, বাজারে এই এলাকার তরমুজের চাহিদা রয়েছে। এই সময় তরমুজের চাষ হয়, তা আমি আগে থেকেই জানি। গত আড়াই বছর ধরে এখানকার তরমুজ আমি নিয়ে যাই। গড়ে ১২শ থেকে ১৪শ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে তরমুজ কিনেছি। এলাকায় নিয়ে ১৮’শ থেকে ১৯’শ টাকা মণ দরে বিক্রি করি। তরমুজগুলো অনেক রসালো এবং মিষ্টি হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশী।
পাঁচবিবি বাজারে খুচরা তরমুজ বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন সকালে জমি থেকে তরমুজ নিয়ে এসে এই বাজারে খুচরা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। সারা দিনে লাভ ভালই টিকে। অন্য ফলের চেয়ে তরমুজ বিক্রি হয় বেশী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভিন বলেন, মাচা পদ্ধতিতে বর্ষাকালিন এই তরমুজ চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন রংয়ের ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ট্যাব ও জৈব বালাইনাশক। এতে করে একদিকে ফসল হচ্ছে নিরাপদ অন্যদিকে কমছে উৎপাদন খরচ আর কৃষক হচ্ছে আর্থিকভাবে লাভবান। কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবার ফলন ও দাম পাওয়ায় আগামীতে তরমুজের চাষ আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
বাখ//আর