আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য ৭শ’ মেট্রিকটন কাগজ সরবরাহ করার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনাস্থ কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড (কেপিএম) কর্তৃপক্ষকে চাহিদা পত্র দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করার জন্য কমিশন প্রায় সব কাগজই এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ কল কেপিএম থেকে নিচ্ছে। চাহিদাপত্র পাওয়ার পর মিল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাগজ সরবরাহ করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে কাগজের বেশি প্রয়োজন হয় ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য। ব্যালট পেপার ছাপানো হয় হলুদ, নীল ও গোলাপী রঙের কাগজ দিয়ে। তবে ইসি যে ধরনের কাগজের চাহিদা জানাবে মিল কর্তৃপক্ষ সে ধরনের কাগজ সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে একেএম আনিসুজ্জামান যোগদানের পর নির্বাচন কমিশনের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাগজ উৎপাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
মিলের অপর একটি সূত্র জানায়, সরকার প্রতিবছর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল পর্যায় কোটি কোটি বই বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে। সেসব বই তৈরির বেশির ভাগ কাগজ কেপিএম থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত মিলটিতে বর্তমানে নানা সঙ্কট চলছে। প্রায় সাত দশকের বেশি সময় ধরে চলা প্রতিষ্ঠানটির যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় সময় কারখানায় ক্রটি দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কেপিএম উন্নতমানের কাগজ উৎপাদন করে আসছে। ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে কেপিএমের উৎপাদিত কাগজের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা বলবৎ থাকায় মিলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
মিলের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এমডি একেএম আনিসুজ্জামান বলেন, ইসি প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে কেপিএম থেকে কাগজ সংগ্রহ করে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কাজে ব্যবহারের জন্য কেপিএম থেকে কাগজ সরবরাহের জন্য কমিশন চাহিদাপত্র দিয়েছে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজ যথা সময়ে সরবরাহ করার জন্য মিলের সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও কেপিএম থেকে কাগজ সংগ্রহ করে থাকে।
১৯৫৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা র্কতৃক রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় র্কণফুলী পেপার মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্ণফুলি পেপার মিলটি শিল্প আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রথম কাগজ শিল্প। সে সময় মোট ত্রিশ হাজার শ্রমিক নিয়ে এশিয়ার একমাত্র সর্ববৃহৎ কাগজ-কল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৫৩ সালের ১৬ অক্টোবর মিল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়। এছাড়া শুরুতে ব্যবস্থাপনা ক্রটি থাকায় ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দাউদ গ্রুপের কাছে মিলটি বিক্রি করে দেয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদশে শিল্প সংস্থা এটি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে র্কণফুলী পেপার মিলটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্টিস কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। মিলটি কাঁচা মালের জন্য সম্পূর্ণভাবে বাঁশের উপর নির্ভশীল। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঁশের সংকট দেখা দেওয়ায় মিলটি কাঁচা মাল সংকটে ভূগছে। পাশাপাশি জরাজীর্ণ ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় নানা সমস্যায়ও জর্জরিত রয়েছে। বর্তমানে মিলে প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন।