দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত শিক্ষকবৃন্দের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
- আপডেট সময় : ০৪:৫১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত রাজস্বখাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকবৃন্দের আয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ বৈষম্যের স্বীকার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি ৪৯ টি পলিটেকনিক/ মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলোতে কর্মরত “স্কিলস এন্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (ঝঞঊচ)” শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকদের ৫০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রোববার দি.প.ই শহীদ মিনার চত্বরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এক ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী শেষে দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সোহাগ চন্দ্র সাহার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ মন্ডলের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
উক্ত মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী ও স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইন্সট্রাক্টর (নন টেক) মোঃ আবু সাঈদ, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (পাওয়ার) মোঃ সানিয়াত বোরহান, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (কম্পিউটার) মোঃ আশিদুল ইসলাম, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (মেকানিক্যাল) মোছাঃ জেসমিন আরা মিরা, ইন্সট্রাক্টর (নন টেক) মোঃ আনোয়ার হোসেন, ইন্সট্রাক্টর (নন টেক) মোঃ আকবর আলী, দি.প.ই শিক্ষার্থীবৃন্দের মধ্যে মোঃ আলমগীর ইসলাম (ইলেকট্রিক্যাল), সজিব রায় (সিভিল), মোঃ মেহেদী হাসান (সিভিল), মোঃ কাহিম আলম (কম্পিউটার), নওশিন আরা (সিভিল), খুশি (সিভিল), কৌশিক (এ.আই.ডি.টি), জামিরুল, সঞ্জু (ই.টি), হৃদয় (এ.আই.ডি.টি) প্রমুখ। দিপইর শিক্ষকদের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করেছে সাধারন শিক্ষার্থীবৃন্দ।
প্রধান উপদেষ্টা ও মহাপরিচালক বরাবর দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবী ও সমস্যাগুলি নিস্পত্তি দক্ষ জনশক্তি ব্যতিত কোন ভাবেই দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। দেশ বিদেশে শ্রম বাজারে বাস্তব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরী ও দেশের কারিগরি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট প্রকল্পটি ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে।
সফল এই প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব ব্যাংক (ডই), কানাডা (ঈওউঅ), আইডিএ (ওউঅ) এবং বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের গুনগত মান উন্নয়ন, সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে আর্থ সামাজিক ভাবে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের নিকট কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব দূর করা।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট গুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকটে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা যখন অচলবস্থা এমতাবস্থা, ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই ধাপে সরকারী ৪৯ টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট গুলোতে শূণ্য পদের বিপরীতে (প্রকল্প মেয়াদে) মোট ১০১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় যার মধ্যে বর্তমানে ৭৩৮ জন কমর্রত আছে। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট গুলোতে নুন্যতম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার আলোকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই যোগ্যতা এবং প্রযোজ্য সরকারি বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক উম্মূক্ত বিজ্ঞপ্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ, সিভিল সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়। দুই ধাপে প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩০ জুন ২০১৯ প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়।
এই প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১% যা বর্তমানে ২২% এ উন্নীত হয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছ। ঝঞঊচ প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমানে কর্মরত ৭৩৮ জন শিক্ষক দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করায় এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তীব্র শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে ২২/০৫/২০১৯ ইং তারিখ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সমাপ্ত স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষকদের চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তরে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশে উক্ত শিক্ষকগণ দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার সিন্ধান্ত গৃহীত হয়।
একই সাথে তাদেরকে রাজস্বখাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষক নামে অবহিত করা হয়। বর্নিত শিক্ষকগণকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১২ মাসের বেতন ভাতাদি তিন ধাপে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে একাধিকবার থোক বরাদ্দের আবেদন করা হলেও অর্থ বিভাগ হতে থোক বরাদ্দ না পাওয়ায় সুদীর্ঘ ৫০ মাস বেতন বিহীন অবস্থায় শিক্ষকগণ তাদের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক সু-চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। অপরদিকে প্রকল্প শেষ হওয়ার সুদীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজস্বখাতে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। এই প্রকল্পের জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সমাপ্ত এই প্রকল্পের শিক্ষকদের বর্তমানে গড় বয়স ৩৬ থেকে ৪০ বছর এবং কর্মকালীন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ১০ থেকে ১২ বছর সুদীর্ঘ ৫০ মাস বেতন বিহীন অবস্থায় এবং চাকুরী রাজস্ব করণে বিলম্ব হওয়ায় শিক্ষকগণ চরমভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন।
সরকারি ৪৯ টি পলিটেকনিক/মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলোতে কর্মরত “স্কিলস এন্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট” শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকদের ৫০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাখ//আর