ঢাকা ১০:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

দখল আর দূষণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পাবনা ঐতিহ্যবাহী ইছামতির শাখা নদী আত্রাই। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে নদী সিকস্তি ও নদী পয়স্তি জমির মালিকানার জাল কাগজপত্র তৈরি করে দখলে নিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে, হয়েছে অসংখ্য বহুলভবন ও আধাপাঁকা দোকান ঘর। প্রশাসনের কোন রকম অনুমতি না নিয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কোথাও কোথাও ঐতিহ্যবাহী নদীটির চিহৃ পর্যন্ত মুছে গেছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতি নদীর স্রোত থেকে আত্রাই নদীর উৎপত্তি। এই নদী সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাসুমদিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদীর সাথে মিলিত হয়ে যমুনায় গিয়ে মিশেছে। কাশিনাথপুরের অবস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া, বোড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে। তবে নদী দখলের স্থানসহ বাজারের ব্যবসাকেন্দ্রের বেশির ভাগই পড়েছে সাঁথিয়া উপজেলার মধ্যে। পাবনা-ঢাকা, কাজিরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় কাশিনাথপুর জেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। ফলে হাট ও বাজার এলাকায় জায়গা-জমির দাম আকাশচুম্বি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর জায়গা ইচ্ছামতো দখল করে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে।

কাশিনাথপুর ট্রফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী দখল করে একের পর এক গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। তবে কাশিনাথপুর হাট সংলগ্ন অংশে নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। কাশিনাথপুর হাটের একাংশে নদীর মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট ব্রিজ। ব্রিজের দুই দিকে নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত পাকা সড়ক। সেই সড়কের দুই পাশ ভরাট করে ৩৫-৪০টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ওই স্থানে গিয়ে বোঝার উপায় নেই সেখানে একটি নদী আছে। এমনকি নদীর মধ্যে বহুতল ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট, আবাসিক ভবন নিমান করা হয়েছে হচ্ছে। আত্রাই নদী নামের বদ্ধ জলাশয়টি হাট-বাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দখলের শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জালালউদ্দি মিয়ার উদ্যোগে সরকারি অর্থে আত্রাই নদীর ওপর ব্রিজ ও সড়ক নির্মান করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই তিনি রাস্তার দু’পাশ দখল করে সাত-আটটি দোকান গড়ে তোলেন। তারই দেখাদেখি দখলের হিড়িক পড়ে যায়। কাশিনাথপুর মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত নধীর দুই পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক পাঁকা ও আধা পাঁকা স্থাপনা। বেশির ভাগ স্থাপনাতেই রয়েছে দোকান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শতাধিক স্থাপনা হলেও সেগুলোর দখলকারী ২৫ থেকে ৩০ জন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, এক সময় আত্রাই নদী ছিল প্রবাহমান। নদীর বুকে পাল তোলা অসংখ্য নৌকা পণ্যবোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতো। আমিনপুরসহ বিশাল অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল আত্রাই নদী। কিন্তু এখন সে সবই অতীত। প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আগ্রাসনে যৌবন হারিয়ে এ নদীটি এখন বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। এ বিষয়ে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসনের নেই বিশেষ কোনো নজরদারি। কাশিনাথপুরের রোস্তম আলী জানান, এক সময় নদীটি ছিল চওড়া ও খরস্রোতা এখন কোথাও কোথাও নদীর চিহৃ পর্যন্ত নেই। প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা নিয়ে একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে আত্রাই নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাশিনাথপুরের উজান থেকে নন্দনপুর পর্যন্ত আত্রাই নদীর বুকচিরে সেঁচ ক্যানেল নির্মাণ করেছে। এতে মরে গেছে নদী।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে নদী রক্ষায় অনেক জায়গায় ঘুরেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। বরং এখন দখলদারদের দৌরত্ম আরও বেড়েছে। কথা হয় জালাল, সুজা মিয়াসহ কয়েকজনের সাথে তারা বলেন দেড় শতাধিক বছরের পুরনো এ নদীতে ইলিশসহ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা যেত। সে সব এখন অতীত। তারা বলেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইনের প্রয়োগ না করায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে অসংখ্য বহুতল আবাসিক ও বানিজ্যিক ভবন। আবার কোথাও কোথাও ফসলের আবাদ করা হচ্ছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন আছে, কিন্তু তার প্রযোগ নেই।
নদী দখলের অভিযোগ রয়েছে ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে একজন মোহাব্বত আলীর সাথে ফোনে কথা হয়। তিনি দাবি করেন, যে জায়গায় বাড়ি ও দোকান করেছেন, সেটি ১৯৯০ সালে কেনা। জায়গাটি অনেক আগে হাটের জায়গা হিসেবে রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল। তবে আগের মালিক আদালতে মামলা করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হিসেবে রায় পান। আর নদী দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ নদী তার স্থাপনা থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে।

সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালালউদ্দি মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নদীর ওপর যে সড়ক ও ব্রিজের কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সরকারি। এসএ, ডিএসসহ সরকারি বিভিন্ন রেকর্ডে সড়ক হিসেবে এর উল্লেখ আছে। আর সেখানে আমি পৈত্রিক সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মাণ করেছি। নদীর এক ফুট জায়গাও দখল করিনি। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে একটি মহল নদী দখলের মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যা সঠিক নয় বলে তিনি জানান।

এদিকে নদীর ঠিক কি পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মোঃ আতাউর রহমান বলেন, স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদী ছোট হয়ে গেছে এ কথা ঠিক। তবে সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন অংশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। এদিকে কি পরিমান জায়গা দখল হয়েছে, সে তথ্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে (আমাদের) নেই বলে তিনি জানান।

সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যেভাবে নদীটি দখল করা হয়েছে, তা দেখে মর্মাহত হয়েয়েছি। নদীটি দখলমুক্ত করতে অতি দ্রুত প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে পাবনার ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদী

আপডেট সময় : ১১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

দখল আর দূষণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পাবনা ঐতিহ্যবাহী ইছামতির শাখা নদী আত্রাই। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে নদী সিকস্তি ও নদী পয়স্তি জমির মালিকানার জাল কাগজপত্র তৈরি করে দখলে নিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে, হয়েছে অসংখ্য বহুলভবন ও আধাপাঁকা দোকান ঘর। প্রশাসনের কোন রকম অনুমতি না নিয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কোথাও কোথাও ঐতিহ্যবাহী নদীটির চিহৃ পর্যন্ত মুছে গেছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতি নদীর স্রোত থেকে আত্রাই নদীর উৎপত্তি। এই নদী সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাসুমদিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদীর সাথে মিলিত হয়ে যমুনায় গিয়ে মিশেছে। কাশিনাথপুরের অবস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া, বোড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে। তবে নদী দখলের স্থানসহ বাজারের ব্যবসাকেন্দ্রের বেশির ভাগই পড়েছে সাঁথিয়া উপজেলার মধ্যে। পাবনা-ঢাকা, কাজিরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় কাশিনাথপুর জেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। ফলে হাট ও বাজার এলাকায় জায়গা-জমির দাম আকাশচুম্বি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর জায়গা ইচ্ছামতো দখল করে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে।

কাশিনাথপুর ট্রফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী দখল করে একের পর এক গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। তবে কাশিনাথপুর হাট সংলগ্ন অংশে নদীর কোন অস্তিত্ব নেই। কাশিনাথপুর হাটের একাংশে নদীর মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট ব্রিজ। ব্রিজের দুই দিকে নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত পাকা সড়ক। সেই সড়কের দুই পাশ ভরাট করে ৩৫-৪০টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ওই স্থানে গিয়ে বোঝার উপায় নেই সেখানে একটি নদী আছে। এমনকি নদীর মধ্যে বহুতল ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট, আবাসিক ভবন নিমান করা হয়েছে হচ্ছে। আত্রাই নদী নামের বদ্ধ জলাশয়টি হাট-বাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দখলের শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জালালউদ্দি মিয়ার উদ্যোগে সরকারি অর্থে আত্রাই নদীর ওপর ব্রিজ ও সড়ক নির্মান করা হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই তিনি রাস্তার দু’পাশ দখল করে সাত-আটটি দোকান গড়ে তোলেন। তারই দেখাদেখি দখলের হিড়িক পড়ে যায়। কাশিনাথপুর মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত নধীর দুই পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক পাঁকা ও আধা পাঁকা স্থাপনা। বেশির ভাগ স্থাপনাতেই রয়েছে দোকান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শতাধিক স্থাপনা হলেও সেগুলোর দখলকারী ২৫ থেকে ৩০ জন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, এক সময় আত্রাই নদী ছিল প্রবাহমান। নদীর বুকে পাল তোলা অসংখ্য নৌকা পণ্যবোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতো। আমিনপুরসহ বিশাল অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল আত্রাই নদী। কিন্তু এখন সে সবই অতীত। প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আগ্রাসনে যৌবন হারিয়ে এ নদীটি এখন বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। এ বিষয়ে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসনের নেই বিশেষ কোনো নজরদারি। কাশিনাথপুরের রোস্তম আলী জানান, এক সময় নদীটি ছিল চওড়া ও খরস্রোতা এখন কোথাও কোথাও নদীর চিহৃ পর্যন্ত নেই। প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা নিয়ে একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়েছে আত্রাই নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাশিনাথপুরের উজান থেকে নন্দনপুর পর্যন্ত আত্রাই নদীর বুকচিরে সেঁচ ক্যানেল নির্মাণ করেছে। এতে মরে গেছে নদী।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে নদী রক্ষায় অনেক জায়গায় ঘুরেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। বরং এখন দখলদারদের দৌরত্ম আরও বেড়েছে। কথা হয় জালাল, সুজা মিয়াসহ কয়েকজনের সাথে তারা বলেন দেড় শতাধিক বছরের পুরনো এ নদীতে ইলিশসহ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা যেত। সে সব এখন অতীত। তারা বলেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইনের প্রয়োগ না করায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর বুকে নির্মাণ করেছে অসংখ্য বহুতল আবাসিক ও বানিজ্যিক ভবন। আবার কোথাও কোথাও ফসলের আবাদ করা হচ্ছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন আছে, কিন্তু তার প্রযোগ নেই।
নদী দখলের অভিযোগ রয়েছে ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে একজন মোহাব্বত আলীর সাথে ফোনে কথা হয়। তিনি দাবি করেন, যে জায়গায় বাড়ি ও দোকান করেছেন, সেটি ১৯৯০ সালে কেনা। জায়গাটি অনেক আগে হাটের জায়গা হিসেবে রেকর্ড হয়ে গিয়েছিল। তবে আগের মালিক আদালতে মামলা করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হিসেবে রায় পান। আর নদী দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ নদী তার স্থাপনা থেকে অন্তত ৩০ ফুট দূরে।

সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালালউদ্দি মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নদীর ওপর যে সড়ক ও ব্রিজের কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সরকারি। এসএ, ডিএসসহ সরকারি বিভিন্ন রেকর্ডে সড়ক হিসেবে এর উল্লেখ আছে। আর সেখানে আমি পৈত্রিক সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মাণ করেছি। নদীর এক ফুট জায়গাও দখল করিনি। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে একটি মহল নদী দখলের মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যা সঠিক নয় বলে তিনি জানান।

এদিকে নদীর ঠিক কি পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কাশিনাথপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মোঃ আতাউর রহমান বলেন, স্থাপনা নির্মাণের কারণে নদী ছোট হয়ে গেছে এ কথা ঠিক। তবে সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন অংশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। এদিকে কি পরিমান জায়গা দখল হয়েছে, সে তথ্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে (আমাদের) নেই বলে তিনি জানান।

সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যেভাবে নদীটি দখল করা হয়েছে, তা দেখে মর্মাহত হয়েয়েছি। নদীটি দখলমুক্ত করতে অতি দ্রুত প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বা/খ: এসআর।