সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নওগাঁয় উদ্যোক্তা মেলায় ১৬ লাখ টাকার বেচাকেনা : সময় বৃদ্ধির দাবী একডালা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফটিক সম্পাদক মজিদ কলাপাড়া আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাথুরাম : সম্পাদক আনোয়ার নির্বাচিত গলাচিপায় ইউএনও’র প্রেস ব্রিফিং কলাপাড়ায় কোরআনে হেফজ সবক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত সূর্যমুখী’র সাথে হাঁসছে কৃষক গাজীপুরে মেয়র প্রার্থীতা ঘোষণা মামুন মন্ডলের শালিখায় পানি সরবরাহের স্মল স্কিম বাস্তবায়ন বিষয়ক অবহিতকরন সভা  লালমনিরহাটে জমি ও গৃহ প্রদান বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং এ কেমন শত্রুতা পশ্চিম রেলওয়ের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উজিরপুরে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত মঠবাড়িয়ার কিশোর গ্যাংয়ের ধারালো অস্ত্রের কোপে যুবক জখম বাঙালহালিয়ায় ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট শাখার উদ্বোধন কলমাকান্দায় উপজেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিং

টিকটক সুমন এখন পশু হত্যা সিন্ডিকেটের হোতা

টিকটক সুমন এখন পশু হত্যা সিন্ডিকেটের হোতা

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : 

আগে নিজেকে ফেরিওয়ালা, কখনও জীনের বাদশা, আবার কখনও টিকটকে ভিডিও তারকা পরিচয় দিয়ে সহজসরল মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছিল। কিশোর অপরাধী থেকে বহুরূপী এই যুবক এখন হয়ে উঠেছে পশু হত্যা সিন্ডিকেটের অপ্রতিরোধ্য নেতা।
সেই যুবকের নাম সুমন তানভীর। তার বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার মহাকাল গ্রামে হলেও পিতা-মাতার সাথে এখন মণিরামপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। সে ট্রাক চালক আলাউদ্দিন গাজীর ছেলে। মা শিরিনা বেগম গৃহকর্মী। সুমন ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আদিবাড়ি তার বিরুদ্ধে রয়েছে শিশু ধর্ষনের অভিযোগ। থানায় মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গোপনে গো-খাদ্যের সাথে গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে দেয় সে ও তার দলবল। পরে ওই খাদ্য খেয়ে যখন গরু-ছাগল মারা যায়, তখন সুমন ও তার দলবল ফেলে দেওয়ার কথা বলে মরা গরু-ছাগল নিয়ে নাম কাওয়াস্তে জবাই দিয়ে মাংস বিক্রি করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে সুমন ও তার দলবলের বিষ মিশ্রিত খাদ্য খাইয়ে পৌরশহরের গাংড়া এলাকায় গত ১৫ দিনে অন্তত: সাতটি গরু পাঁচটি ছাগল মারা গেছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জনমনে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানাযায়, সুমন সাতবছর আগে খেলনা সামগ্রি ফেরি করে বিক্রি করতে গিয়ে মাছনা গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। বেশ কয়েকমাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। সে মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পৌর এলাকার গাংড়া মোল্যাপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে সুমনের পিতা-মাতা। অন্যদিকে সুমন অন্য এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে একা বসবাস করে। গতবছর উত্তরমাথা মাইক্রোষ্ট্যান্ডে মাকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় আস্তানা গড়ে তোলে সুমন। ওই বাসায় একটি সাপ নিয়ে সুমন নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে রিতিমত কবিরাজি শুরু করে। বিষয়টি প্রচার হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষের ভীড় জমে তার বাসায়। দুরদুরান্ত থেকে বিশেষ করে নারীরা নজরানা (টাকা) দিয়ে তেল ও পানি পড়া নিতে শুরু করে সুমনের কাছ থেকে। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ ওই সাপটি মেরে আস্তানা গুড়িয়ে দেয়।

গৃহবধু সৌদি প্রবাসী জাহানারা বেগম অভিযোগ করেন, জীনের তদবিরের কথা বলে সুমন তাকে চেতনা নাশক খাবার খাইয়ে তার গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়ার সময় পরিবারের লোকজন টের পেলে সে পালিয়ে যায়। তার প্রতারণা এখানেই শেষ নয়, আস্তানা ভেঙ্গে যাবার পর সুমন এলাকায় কিছুদিন ফেরি করে মুরগি বিক্রি করে। পরে সে টিকটকে ভিডিও করে বেড়ায়। সে নিজেকে টিকটকের তারকা পরিচয় দিয়ে আবার প্রতারনা শুরু করে। তবে টিকটকের প্রতারনা ফাঁস হলে সুমন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। এলাকার বয়স্কদের অতিমাত্রাই সম্মান এবং বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মন জয় করে। সুযোগ বুঝে তাদের গো-খাদ্যের সাথে গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে দেয় সে ও তার দলবল। পরে ওই খাদ্য খেয়ে যখন গরু-ছাগল মারা যায়, তখন সুমন ও তার লোকজন ফেলে দেওয়ার কথা বলে মরা গরু-ছাগল নিয়ে গিয়ে নাম কাওয়াস্তে জবাই দিয়ে মাংস বিক্রি করে আসছে। তার এ সিন্ডকেটে রয়েছে স্বরুপদাহ এলাকার ঘরজামাই কসাই আলমগীর, মহাদেবপুরের হাসান, আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন ।

অভিযোগ রয়েছে, সুমনের দেয়া গ্যাস ট্যাবলেটের বিষক্রিয়ায় গত ১৫ দিনে মারা যায় সন্তোষ দেব নাথের দুইটি গরু, বিকাশ বিশ্বাসের একটি, আব্দুল আজিজের একটি, সমির মোল্যার একটি, মোস্তাফিজুর রহমানের একটি গরু। অসুস্থ হয়ে পড়ে মিজানুর রহমানের একটি গরু, একটি ছাগল, সমির মোল্যার একটি ছাগল ও একটি গরু, জাহাঙ্গীর হোসেনের একটিসহ অন্তত: ২০ টি।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সন্ধ্যার পর তার গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে সুমন ও তার লোকজন এসে জানায় গরুটি এখনই জবাই না করলে মারা যাবে। তখন তারা থেকেই জাবাই করে। একলাখ টাকার মূল্যের গরুটি ওই রাতে মাত্র ৪৩ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যায়। তিনি জানান, ৩ মার্চ রাতে সুমন তার দুইটি ছাগল চুরি করে নিয়ে যায়।

গৃহবধু আমেনা খাতুন জানান, সুমন গরু কিনে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। ভূক্তোভোগী আব্দুল আজিজ ও বিকাশ বিশ্বাস জানান, তাদের গরু দুইটি বিষক্রীয়ার ৩ মার্চ সন্ধ্যার দিকে মারা গেলে সুমন ও তার লোকজন এসে ফেলে দেওয়ার কথা বলে গর দুইটি নিয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, রাত ১২ টার দিকে দিকে পৌর এলাকার কসাইখানার পাশে ওই মরা গরু নাম কাওয়াস্তে জবাই করার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে সুমনের সহযোগী আব্দুল্লাহ। এ সময় সেখান থেকে পালিয়ে যায় সুমন, হাসান ও কসাই আলমগীর। পরে পুলিশ এসে আব্দুল্লাহকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এসআই এমরান তাকে ছেড়ে দেয়। এসআই এমরান জানান, আটক আব্দুল্লাহ একজন নিরীহ ভ্যান চালক হওয়ায় তাকে স্থানীয় একজনের জিম্মায় দেয়া হয়। এ দিকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে সুমন ও তার মা শিরিনা বেগম এখন এলাকা ছাড়া।

তবে অনেকেই জানিয়েছেন সন্ধ্যার পর সুমন নারীর বেশ ধরে ঢাকুরিয়া, মহাদেবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সুমন দাস সাংবাদিকদের জানান, সুমন সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ঠেকাতে এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এ দিকে অভিযোগ রয়েছে সুমন ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কার্যত কোন ভূমিকা রাখেনি।

তবে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, সুমন ও তার দলবলকে আটকের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

বা/খ: এসআর।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *