ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে নিহত শ্রমিক

জালালের স্ত্রী-সন্তানের দায়িত্ব নিলেন মাল্টিফ্যাবস কারখানা

কাজী মকবুল,গাজীপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৫০০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শ্রমিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রীর চাকরি ও সন্তানের ভরনপোষণ দায়িত্ব নিয়েছেন মাল্টিফ্যাবস্ লিমিটেড নামে একটি পোশাক তৈরি কারখানা।

মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর নয়াপাড়ায় ওই নিহত শ্রমিকের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও একমাত্র কন্যা সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম (৯) মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় যান। পরে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মেজবা ফারুকী তাদের হাতে চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এছাড়াও তিনি শিশু সন্তানের লেখাপড়া ও বিয়ে পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব নেন। ওই সময় নিহতের স্ত্রী কাজ করে খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে ওই কারখানায় চাকরির দেয়ারও অঙ্গীকার করেন।

নিহত জালালের সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম মহানগরীর জরুন এলাকার গাজীপুর সিটি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী। তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্না করে শুরু করে। সে বলে বাবা আই কাজে যাওয়ার সময় তাকে বলতো ‘বাবা তোমাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে।’ তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।

নিহতের স্ত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে, আমি এখন অসহায়। আমি বিএ পাশ করে গৃহিণী ছিলাম। এখন মাল্টিফ্যাবস্ কারখানা আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছে, এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারবো না। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন জীবন সংগ্রামে নেমেছি।

মাল্টিফ্যাবস্ লিমিটেড কারখানার এমডি ডা.মেজবা ফারুকী বলেন, ‘ শিশু জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়মের ছবিটা পত্রিকায় যেদিন ছাপা হয়েছিল সেদিনই আমার চোখে পড়ে খুব কষ্ট পাই। ছবিটা দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে খুবই কান্না পায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জান্নাতুল যতদিন লেখাপড়া করবে যতদূর করবে বিয়ে দেয়া পর্যন্ত সব খরচ আমরা বহন করব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ওই কারখানার এজিএম এইচআর এডমিন মোঃ আবু সেহাব, ম্যানেজার রিপুল মিয়া, সহকারী ব্যবস্থাপক খ. আহমাদুল কবির মান্না, এক্সিকিউটিভ মোঃ ওমর হামদু, শ্রমিক প্রতিনিধি সায়লা আক্তার ও আরিফা আক্তার, নাজমুল হুদা, মনির হোসেন, সোহাগ হোসেন প্রমুখ।

নিহত জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জালাল জরুন এলাকার ফজল মোল্লার ভাড়া বাসায় সপরিবার বসবাস করতেন। গত ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকালে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মারা যান।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে নিহত শ্রমিক

জালালের স্ত্রী-সন্তানের দায়িত্ব নিলেন মাল্টিফ্যাবস কারখানা

আপডেট সময় : ০৬:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শ্রমিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রীর চাকরি ও সন্তানের ভরনপোষণ দায়িত্ব নিয়েছেন মাল্টিফ্যাবস্ লিমিটেড নামে একটি পোশাক তৈরি কারখানা।

মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর নয়াপাড়ায় ওই নিহত শ্রমিকের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও একমাত্র কন্যা সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম (৯) মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় যান। পরে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মেজবা ফারুকী তাদের হাতে চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এছাড়াও তিনি শিশু সন্তানের লেখাপড়া ও বিয়ে পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব নেন। ওই সময় নিহতের স্ত্রী কাজ করে খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে ওই কারখানায় চাকরির দেয়ারও অঙ্গীকার করেন।

নিহত জালালের সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম মহানগরীর জরুন এলাকার গাজীপুর সিটি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী। তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্না করে শুরু করে। সে বলে বাবা আই কাজে যাওয়ার সময় তাকে বলতো ‘বাবা তোমাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে।’ তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।

নিহতের স্ত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে, আমি এখন অসহায়। আমি বিএ পাশ করে গৃহিণী ছিলাম। এখন মাল্টিফ্যাবস্ কারখানা আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছে, এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারবো না। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন জীবন সংগ্রামে নেমেছি।

মাল্টিফ্যাবস্ লিমিটেড কারখানার এমডি ডা.মেজবা ফারুকী বলেন, ‘ শিশু জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়মের ছবিটা পত্রিকায় যেদিন ছাপা হয়েছিল সেদিনই আমার চোখে পড়ে খুব কষ্ট পাই। ছবিটা দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে খুবই কান্না পায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জান্নাতুল যতদিন লেখাপড়া করবে যতদূর করবে বিয়ে দেয়া পর্যন্ত সব খরচ আমরা বহন করব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ওই কারখানার এজিএম এইচআর এডমিন মোঃ আবু সেহাব, ম্যানেজার রিপুল মিয়া, সহকারী ব্যবস্থাপক খ. আহমাদুল কবির মান্না, এক্সিকিউটিভ মোঃ ওমর হামদু, শ্রমিক প্রতিনিধি সায়লা আক্তার ও আরিফা আক্তার, নাজমুল হুদা, মনির হোসেন, সোহাগ হোসেন প্রমুখ।

নিহত জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জালাল জরুন এলাকার ফজল মোল্লার ভাড়া বাসায় সপরিবার বসবাস করতেন। গত ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকালে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মারা যান।

 

বাখ//আর