ঢাকা ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চৌহালীর চাঁদপুরে স্থানীয় ঠিকাদারের উদাসীনতায় নদীগর্ভে স্কুল ভবন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৯:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৫৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনের তাণ্ডব চলছে, মঙ্গলবার সকালে তীব্র স্রোতের কারনে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনায় বিলীন হয়েছে, আরও একটি বিলীন হওয়ার পথে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চম দফায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে মঙ্গলবার সকালে তীব্র স্রোতের কারণে ৮০নং চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরেকটি নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যে কোন সময় নদীগর্ভে চলে যাবে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত। এছাড়া ৪টি গ্রামে ভাঙন চলছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন জানা যায়, চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে চলছে ভাঙন। এছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় তীব্র স্রোতের কারনে দেওয়ানতলা, শংকরহাটি, গাবেরপাড়া, মাঝগ্রাম, সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। বিশেষ করে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আলহাজ আবুল কাশেম মেম্বর সহ স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন মঙ্গলবার ভোরের দিকে সকলের চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যায়। আরেকটি ভবনে ঝুলে আছে যেকোনো সময় সেটিও নদী গিলে খাবে। একাডেমিক ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। একারনে বিদ্যালয়টির প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় ভবন আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু নেই। পাউবো সহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও স্কুলটি রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ করে দিত তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন জানান, স্কুল ঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা পড়াশোনা করবো কোথায়। আমরা একটা ঘর চাই। আবার স্কুলে যেতে চাই।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে সাবেক সদস্য রমজান আলী শেখ জানান, চাঁদপুর সহ প্রায় ৪টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। আজ স্কুল বিলীন হলো। হুমকিতে স্থানীয় মসজিদ, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, আরেকটি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়,।

এতো কিছুর পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্বায়সারা বক্তব্য। তাদের পরিদর্শন ও আশ্বাসে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর কত বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর পেটে গেলে স্থায়ী বাঁধের কাজ হবে। যদিও এর আগে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তবে সেখানে স্থানীয় ঠিকাদারের দুর্নীতি ও যথাযথ কাজ না হওয়ায় ভাঙন চলমান রয়েছে। এজন্য পাউবো কর্মকর্তা ও স্থানীয় ঠিকাদার দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ জানান, ভাঙন রোধে শুনেছি একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৪টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এজন্য পাউবো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে। দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানান তিনি।

ভাঙন তদারকির দায়িত্বে থাকা সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করতে পারবো না। এজন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে কল দিলেও পাওয়া যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার বেড়া কৈতলা নির্মান বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা জানান, বন্যা এবং নদী তীর ক্ষয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ কর্মসূটি (এফ.আর.ই.আর.এম.আই.পি) প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩১ কোটি টাকা ব্যায়ে চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মেহের নগর থেকে এনায়েতপুর বাঁধ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় আন্ডার ওয়াটার ওয়েব প্রটেকশন কাজ করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করা হবে। তবে বর্তমানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তের কার্যক্রম চলছে। ভাঙনের এ বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

চৌহালীর চাঁদপুরে স্থানীয় ঠিকাদারের উদাসীনতায় নদীগর্ভে স্কুল ভবন

আপডেট সময় : ০৩:৫৯:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনের তাণ্ডব চলছে, মঙ্গলবার সকালে তীব্র স্রোতের কারনে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনায় বিলীন হয়েছে, আরও একটি বিলীন হওয়ার পথে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চম দফায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে মঙ্গলবার সকালে তীব্র স্রোতের কারণে ৮০নং চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরেকটি নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যে কোন সময় নদীগর্ভে চলে যাবে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত। এছাড়া ৪টি গ্রামে ভাঙন চলছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন জানা যায়, চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে চলছে ভাঙন। এছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় তীব্র স্রোতের কারনে দেওয়ানতলা, শংকরহাটি, গাবেরপাড়া, মাঝগ্রাম, সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। বিশেষ করে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আলহাজ আবুল কাশেম মেম্বর সহ স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন মঙ্গলবার ভোরের দিকে সকলের চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যায়। আরেকটি ভবনে ঝুলে আছে যেকোনো সময় সেটিও নদী গিলে খাবে। একাডেমিক ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। একারনে বিদ্যালয়টির প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় ভবন আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু নেই। পাউবো সহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও স্কুলটি রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ করে দিত তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন জানান, স্কুল ঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা পড়াশোনা করবো কোথায়। আমরা একটা ঘর চাই। আবার স্কুলে যেতে চাই।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে সাবেক সদস্য রমজান আলী শেখ জানান, চাঁদপুর সহ প্রায় ৪টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। আজ স্কুল বিলীন হলো। হুমকিতে স্থানীয় মসজিদ, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, আরেকটি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়,।

এতো কিছুর পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্বায়সারা বক্তব্য। তাদের পরিদর্শন ও আশ্বাসে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর কত বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর পেটে গেলে স্থায়ী বাঁধের কাজ হবে। যদিও এর আগে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তবে সেখানে স্থানীয় ঠিকাদারের দুর্নীতি ও যথাযথ কাজ না হওয়ায় ভাঙন চলমান রয়েছে। এজন্য পাউবো কর্মকর্তা ও স্থানীয় ঠিকাদার দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ জানান, ভাঙন রোধে শুনেছি একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৪টি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এজন্য পাউবো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে। দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানান তিনি।

ভাঙন তদারকির দায়িত্বে থাকা সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করতে পারবো না। এজন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে কল দিলেও পাওয়া যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার বেড়া কৈতলা নির্মান বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা জানান, বন্যা এবং নদী তীর ক্ষয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ কর্মসূটি (এফ.আর.ই.আর.এম.আই.পি) প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩১ কোটি টাকা ব্যায়ে চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মেহের নগর থেকে এনায়েতপুর বাঁধ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় আন্ডার ওয়াটার ওয়েব প্রটেকশন কাজ করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করা হবে। তবে বর্তমানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তের কার্যক্রম চলছে। ভাঙনের এ বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।