ঢাকা ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চীনে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, বদলে যাচ্ছে পেশা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চীনে নতুন বিয়ের সংখ্যা কমার পাশাপাশি বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। ২০২২ সালে দেশটিতে বিয়ের সংখ্যা বিগত ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। গত বছর বিয়ের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও চলতি বছরে আবার কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফিসহ বিয়েসংশ্লিষ্ট নানা পেশায় দেখা দিয়েছে পরিবর্তন।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ২০১৩ সালে চীনে ১ কোটি ৩০ লাখ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৭০ লাখে। এটি ১৯৮৫ সালে বিয়ে নথিভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করার পর থেকে সর্বনিম্ন।

গবেষকেরা বলছেন, ২০২৩ সালে বিয়ের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ৮০ লাখে পৌঁছালেও এ বছর আবার কমতে শুরু করেছে। বছর শেষে জানা যাবে ঠিক কী পরিমাণ বিয়ের সংখ্যা কমেছে।

চীনের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যমতে, চীনে বিবাহবিচ্ছেদের হারও বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। ২০১৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ রেকর্ড ৪৭ লাখে পৌঁছেছিল, যা দুই দশক আগের তুলনায় চার গুণ বেশি।

চীনা সরকার বিবাহবিচ্ছেদ ঠেকাতে ২০২১ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের আগে দম্পতিদের ৩০ দিনের ‘পুনর্বিবেচনা’ পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আবারো ভেবে দেখতে পারেন। আইনটির কারণে সাময়িকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ কমলেও ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

এ দিকে বিয়ে সংক্রান্ত নানা পেশায়ও পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন তান মেংমেং। মধ্য হেনান প্রদেশে ২৮ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফারের স্টুডিও আছে। কিন্তু বিয়ে কমে যাওযায় তাঁর পেশা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখন তিনি যারা দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে চান এবং শেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে চান, তাদের ছবি তোলেন।

তান মেংমেং সিএনএনকে বলেন, ‘সরকারি অফিসে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দীর্ঘ সারি দেখে আমি আমার কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছি। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের আগের মুহূর্তের ছবি তুলেছি। এটিই এখন আমার আয়ের উৎস।’ সুখ-দুঃখ উভয় মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন তান মেংমেং।

বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সেবাও দিচ্ছে কিছু কোম্পানি। প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিচিহ্ন বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে অনেকেই মুছে ফেলতে চান। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিসর এতই বড় হয় যে তারা পেশাদার কোম্পানির শরণাপন্ন হন।

চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৬০ মাইল দূরে একটি কারখানায় লিউ ওয়েই ও তার দল এ সেবা দিয়ে থাকেন। লিউ ওয়েই বলেন, ‘স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করার আগে ছবির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আমরা স্প্রে দিয়ে ঢেকে দেই। আর কাজটি ঠিকঠাক সম্পন্ন হলো কিনা তার প্রমাণ হিসেবে পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওতে ধারণ করে গ্রাহককে দেখাই।’

লিউ ওয়েই জানান, ২০২১ সালে তাঁরা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ দম্পতির ছবি ধ্বংস করেছেন তাঁরা।

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো পেং জিউজিয়ান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম ব্যক্তি স্বাধীনতা ও পেশাগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এখন অনেকেই মনে করেন শুধু বাধ্যবাধকতার খাতিরে অসুখী দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদ ভালো।

নিউজটি শেয়ার করুন

চীনে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, বদলে যাচ্ছে পেশা

আপডেট সময় : ১২:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চীনে নতুন বিয়ের সংখ্যা কমার পাশাপাশি বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। ২০২২ সালে দেশটিতে বিয়ের সংখ্যা বিগত ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। গত বছর বিয়ের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও চলতি বছরে আবার কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফিসহ বিয়েসংশ্লিষ্ট নানা পেশায় দেখা দিয়েছে পরিবর্তন।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ২০১৩ সালে চীনে ১ কোটি ৩০ লাখ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৭০ লাখে। এটি ১৯৮৫ সালে বিয়ে নথিভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করার পর থেকে সর্বনিম্ন।

গবেষকেরা বলছেন, ২০২৩ সালে বিয়ের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ৮০ লাখে পৌঁছালেও এ বছর আবার কমতে শুরু করেছে। বছর শেষে জানা যাবে ঠিক কী পরিমাণ বিয়ের সংখ্যা কমেছে।

চীনের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যমতে, চীনে বিবাহবিচ্ছেদের হারও বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। ২০১৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ রেকর্ড ৪৭ লাখে পৌঁছেছিল, যা দুই দশক আগের তুলনায় চার গুণ বেশি।

চীনা সরকার বিবাহবিচ্ছেদ ঠেকাতে ২০২১ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের আগে দম্পতিদের ৩০ দিনের ‘পুনর্বিবেচনা’ পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আবারো ভেবে দেখতে পারেন। আইনটির কারণে সাময়িকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ কমলেও ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

এ দিকে বিয়ে সংক্রান্ত নানা পেশায়ও পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন তান মেংমেং। মধ্য হেনান প্রদেশে ২৮ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফারের স্টুডিও আছে। কিন্তু বিয়ে কমে যাওযায় তাঁর পেশা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখন তিনি যারা দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে চান এবং শেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে চান, তাদের ছবি তোলেন।

তান মেংমেং সিএনএনকে বলেন, ‘সরকারি অফিসে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দীর্ঘ সারি দেখে আমি আমার কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছি। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের আগের মুহূর্তের ছবি তুলেছি। এটিই এখন আমার আয়ের উৎস।’ সুখ-দুঃখ উভয় মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন তান মেংমেং।

বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সেবাও দিচ্ছে কিছু কোম্পানি। প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিচিহ্ন বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে অনেকেই মুছে ফেলতে চান। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিসর এতই বড় হয় যে তারা পেশাদার কোম্পানির শরণাপন্ন হন।

চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৬০ মাইল দূরে একটি কারখানায় লিউ ওয়েই ও তার দল এ সেবা দিয়ে থাকেন। লিউ ওয়েই বলেন, ‘স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করার আগে ছবির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আমরা স্প্রে দিয়ে ঢেকে দেই। আর কাজটি ঠিকঠাক সম্পন্ন হলো কিনা তার প্রমাণ হিসেবে পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওতে ধারণ করে গ্রাহককে দেখাই।’

লিউ ওয়েই জানান, ২০২১ সালে তাঁরা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ দম্পতির ছবি ধ্বংস করেছেন তাঁরা।

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো পেং জিউজিয়ান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম ব্যক্তি স্বাধীনতা ও পেশাগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এখন অনেকেই মনে করেন শুধু বাধ্যবাধকতার খাতিরে অসুখী দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদ ভালো।